ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

গণহত্যা ১৯৭১ ॥ চট্টগ্রাম শহর

প্রকাশিত: ০৩:৩৯, ৫ মার্চ ২০১৭

গণহত্যা ১৯৭১ ॥ চট্টগ্রাম শহর

একাত্তরে সারা বাংলাদেশের মতো চট্টগ্রামেও শুরু হয় পরিকল্পিত গণহত্যা। গণহত্যার এই নারকীয়তা চলে দেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। একাত্তরে চট্টগ্রাম জেলায় কি পরিমাণ লোককে হত্যা করা হয়েছিল তার কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। ১৯৭১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি দৈনিক আজাদ চট্টগ্রামে শহীদের সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ বলে উল্লেখ করে। স্থানীয় প্রভাবশালী দৈনিক আজাদীতে ১৯৭২-এর এপ্রিলে চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা পাঁচ লাখ বলে উল্লেখ করেছিল। ভারতের অমৃতবাজার পত্রিকা ১৮ জুলাই ১৯৭১ চট্টগ্রামে পাকিস্তানী বাহিনীর ভয়াবহ গণহত্যার সংবাদ ছাপায়। চট্টগ্রামে গণহত্যায় এক লাখ লোক মারা যায় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল। একই পত্রিকা ১৮ ডিসেম্বর ১৯৭১ আরেকটি প্রতিবেদনে গণহত্যায় চট্টগ্রামে চার লাখ লোককে হত্যা করার সংবাদ প্রচার করে। চট্টগ্রাম থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের ওপর অনেকগুলো গ্রন্থ বের হয়েছে, কোনটাতেই একাত্তরে পাকিস্তান বাহিনীর বর্বরতার বিবরণ পরিপূর্ণভাবে উঠে আসেনি। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, চট্টগ্রাম জেলা ইউনিট কমান্ড মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম শীর্ষক প্রায় ১৫০০ পৃষ্ঠার একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেছে। যেখানে জেলা-উপজেলার কমান্ডারদের ছবি, তাদের জীবন কীর্তি, ছেলেমেয়েরা কে কোথায় পড়ে, রঙিন ছবি সব আছে। যেটা নেই সেটা হল একাত্তরের গণহত্যায় চট্টগ্রামে পাকিস্তানী বাহিনীর বর্বরতার বর্ণনা। তথ্যের যথেষ্ট অপ্রতুলতার পরও একাত্তরের সমসাময়িক সময়ের পত্র-পত্রিকা, রণাঙ্গনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সাক্ষাতকার, প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যে চট্টগ্রাম জেলায় গণহত্যায় সর্বনিম্ন তিন লাখ লোক শহীদ হয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়। যার মধ্যে শুধু শহরে প্রায় দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার। যা অন্যান্য জেলার তুলনায় অনেক বেশি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আমাদের বীরত্বের গল্পের ভিড়ে বিস্মৃত হয়েছি আত্মত্যাগের এই অধ্যায়। চট্টগ্রাম সেনানিবাস একাত্তরের বর্বরতার প্রথম সাক্ষী। এখানে প্রায় ২৫০০ নিরস্ত্র বাঙালী সৈনিককে হত্যা করা হয় একাত্তরের প্রথম প্রহরে। পাশাপাশি আশপাশের এলাকাগুলো থেকে বিপুলসংখ্যক সাধারণ লোকজনকে এখানে এনে হত্যা করা হয়। সেনানিবাসের বাইরে প্রথম গণহত্যা ঘটে চট্টগ্রাম বন্দরে। বন্দরের ১৭ নম্বর জেটিতে ২৭ মার্চে প্রায় ১১২ জন নিরস্ত্র বাঙালী সৈনিক পাকিস্তান বাহিনীর হাতে প্রাণ হারান বলে উল্লেখ করেন মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূঁইয়া। পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে যাদের সোয়াত জাহাজে নিয়ে আসা হয়েছিল এবং নিরস্ত্র করা হয়েছিল। ৩১ মার্চ হালিশহরের নাথপাড়ায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী স্থানীয় অবাঙালীদের সহায়তায় ৩৯ জন নিরীহ লোকজনকে হত্যা করে। একই সময় নির্মমভাবে হত্যা করা হয় নাথপাড়ায় আশ্রয় নেয়া প্রায় ৪০ জন ইপিআর সদস্যকে। এই গণহত্যায় বুলেট ব্যবহার করা হয়নি, ব্যবহার করা হয়েছে তলোয়ার। কাউকে হত্যা করা হয়েছে জবাই করে, কাউকে পেট চিরে, কাউকে মাথা থেকে দেহ বিছিন্ন করে কিংবা বস্তায় পুরে, বর্শায় বিদ্ধ করে। চট্টগ্রাম কমার্স কলেজের বিকম শ্রেণীর ছাত্র দুলাল ও তার সহোদর চট্টগ্রাম কলেজের অনার্সের ছাত্র বাদল- দুই ভাইকে হত্যা করা হয়েছে কুপিয়ে। চোখের সামনে এই দৃশ্য দেখে মা নিরুবালা অজ্ঞান হয়ে যান। ছেলের রক্ত দিয়ে গোসল করানো হয় তাকে। একইসঙ্গে হত্যা করা হয় দুলাল ও বাদলের বাবা হরিপদ নাথ ও ঠাকুরদা ক্ষিরোদ বাঁশি নাথকে। হত্যার পর তাদের ঘরে লাগিয়ে দেয়া হয় আগুন। রাজনৈতিক কর্মী দীনেশ কান্তি নাথ ছিলেন ছয় দফার সমর্থক। দীনেশকে হত্যা করে ছয় টুকরো করা হয়। ব্যাঙ্গ করে গণহত্যার নেতৃত্ব দেয়া বিহারি শওকত বলছিল, ‘এবার বুঝে নে তোর ছয় দফা’। সমীরণ চন্দ্র নাথকে হত্যা করা হয়েছে বর্শা দিয়ে। স্থানীয় কিশোর মনুর গায়ের চামড়া তুলে নেয়া হয়েছে। নরহরি বৈষ্ণবকে হত্যা করা হয়েছে টেঁটা দিয়ে বিদ্ধ করে। নারায়ণ চন্দ্র নাথকে তেলের ড্রামের ভেতরে ঢুকিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। কাউকে বা হত্যা করা হয়েছে লাটি দিয়ে পিটিয়ে। আমরা জীবনে বর্বরতার নৃশংসতার অনেক বিবরণ শুনেছি, ৩১ মার্চ, হালিশহরের নাথপাড়া হার মানিয়েছে সেসব বর্বরতা। বনমালী নাথের ৮ বছরের কন্যাশিশু মিনু, মার কোল থেকে নিয়ে আছাড় মেরে হত্যা করেছে বিহারি জল্লাদরা। হালিশহর সিভিল সাপ্লাই গোডাউনের অভ্যন্তরে পাকিস্তান বাহিনী চালু করেছিল নির্যাতন কেন্দ্র। ঠিক কতসংখ্যক লোককে এখানে হত্যা করা হয়েছে তা জানা যায়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এখানে সাতজন তরুণীর লাশসহ ৩৮টি লাশ পাওয়া যায়। প্রবর্তক সংঘের পাহাড় ছিল একাত্তরে পাকিস্তান বাহিনীর বর্বরতার আরেকটি বড় কেন্দ্র। সংঘের অন্যতম প্রাণপুরুষ বীরেন্দ্র লাল চৌধুরীসহ বিপুলসংখ্যক হিন্দু ধর্মাবলম্বী লোকজন ও সাধারণ মানুষকে এখানে এনে বর্বর নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে। গরিবউল্লাহ শাহ মাজারের পাশে সম্ভবত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি। সম্ভবত শব্দটি ব্যবহার করলাম এই কারণে যে, এর পেছনে যথেষ্ট প্রমাণ এখনও সংগ্রহ করা যায়নি। তবে একাত্তরে পাকিস্তান বাহিনী এই বধ্যভূমিতে হাজার হাজার লাশ এনে গর্ত করে গণকবর দেয়ার বর্ণনা পরবর্তীতে অনেক প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীদের ভাষ্যে উঠে এসেছে। চট্টগ্রাম পুলিশ লাইনে কর্মরত এক সুইপার ১৮ জানুয়ারি দৈনিক বাংলায় দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলছিলেন, প্রতিদিন রাতে বিভিন্ন জায়গা থেকে ৫-৬টি ট্রাক এসে লাশ ফেলে যেত এখানে। ১৯৭২ এ দৈনিক বাংলা এখানে প্রায় ৫ হাজার নাম না জানা শহীদের লাশ দেখতে পাওয়ার কথা উল্লেখ করেন। চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস ছিল পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর সেনা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র। এখানে একদিকে ছিল উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তাদের নারী নির্যাতনের, ধর্ষণের নিরাপদ কেন্দ্র। অন্যদিকে ছিল শত শত নিরপরাধ লোককে হত্যার সাক্ষী। এটি চট্টগ্রামের অন্যতম নির্যাতন কেন্দ্রও বটে। ছিল নির্যাতনের জন্য ইলেকট্রিক চেয়ার। এখানে হত্যা করা হয়েছে কয়েক হাজার লোককে। লাশগুলো নিয়ে ফেলা হয়েছে পাহাড়তলী ও গরিবউল্লাহ শাহ মাজার বধ্যভূমিতে। ১৯৭১ সালের ২০ জুন সানডে টাইমস এর রিপোর্টে উঠে এসেছে চট্টগ্রামে পাকিস্তানী বাহিনীর ভয়াবহ গণহত্যার বিবরণ। তারা লিখেছে, এই শহর এখন শকুন, অবাঙালী আর পাকিস্তানী সেনাদের দখলে। এত বেশি লাশ এখানে সেখানে পড়ে আছে, শকুনদের অরুচি ধরে গেছে।... কর্ণফুলীর মোহনায় নাম না জানা শত শত মানুষের লাশ। মুক্তিযুদ্ধের অসংখ্য নৃশংসতার বর্বরতার সাক্ষী পাহাড়তলী। প্রায় দশ হাজার লোককে মুক্তিযুদ্ধের সময় এখানে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার প্রক্রিয়াও ছিল অত্যন্ত পৈশাচিক। একদিনে বধ্যভূমিতে সবচেয়ে বেশি লোক হত্যা করা হয়েছে ১০ নবেম্বর ১৯৭১। এই দিন প্রায় ৪০০ লোককে হত্যা করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক গাজী সালেহ উদ্দিন তাঁর ‘প্রামাণ্য দলিল : মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম’ বইয়ে বলেছেন, ‘দোহাজারী ট্রেন যাত্রীসহ ১০ হাজার (দশ হাজার) এরও অধিক বাঙালীদের হত্যা করে এ বধ্যভূমিতে লাশ সমাধিস্থ করা হয়।’ এখানে যাদের হত্যা করা হয়েছে তাদের অধিকাংশই ছিল স্থানীয় মাস্টার লেন, পাঞ্জাবি লেন (বর্তমানে শহীদ লেন), গোয়ানিজ কোয়ার্টার, ঝাউতলা, সরাইপাড়া এলাকার লোকজন। শহীদ এসব লোকজনের একটি বড় অংশই চাকরি করতেন পূর্ব পাকিস্তান রেলওয়েতে। মূলত চাকরির কারণে এই পরিবারগুলো পাহাড়তলীতে থাকত। এছাড়াও দোহাজারী নাজিরহাট রুটের ট্রেনগুলো যেত পাহাড়তলীর ওপর দিয়ে। এসব ট্রেন থেকে নামিয়ে প্রচুর লোককে হত্যা করা হয়েছে এই বধ্যভূমিতে। স্থানীয়ভাবে এই বধ্যভূমিটি জল্লাদখানা নামে পরিচিত। এই বধ্যভূমিতে পাহাড়ের ওপরে ছিল সুরম্য একটি দোতলা ভবন। বর্তমানে বাংলাদেশ টেলিভিশন, চট্টগ্রাম কেন্দ্রের বিপরীতে অবস্থিত এই বাড়িটি পরিচিত ছিল বাগানবাড়ি নামে। এই নির্যাতন কেন্দ্রে অনেক যুবতী নারীকে আটকে রেখে নিয়মিত ধর্ষণ করা হতো। এখানে দুটি পাথর ছিল যেগুলো ছুরি ও রামদা শাণ দেয়ার কাজে ব্যবহৃত হতো এবং একটি বড় পাথরের ওপরে শুইয়ে দিয়ে বাঙালীদের পশুর মতো জবাই করা হতো। এসব হত্যাকা-ের অন্যতম হোতা ছিল স্থানীয় অবাঙালীরা। মূলত পূর্ব পাকিস্তানে অবাঙালীদের একটি বড় অংশ চাকরি করত রেলওয়েতে। তাই পাহাড়তলী পূর্ব থেকে অবাঙালী অধ্যুষিত ছিল। গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া আবদুল গোফরান এই লোমহর্ষক, মধ্যযুগীয় গণহত্যার বিবরণ দেন। ওয়ারলেস কলোনির রাস্তায় বিহারিরা জড়ো হয়ে উল্লাস করছিল; বিভিন্ন স্থান থেকে যেসব বাঙালীকে ধরে আনা হচ্ছিল তারা তাদের হাত বেঁধে জল্লাদের সামনে ঠেলে দিচ্ছে। এই জল্লাদরা ঝিলের পাশে সমতল নিচু জমিতে বড় বড় তলোয়ার, ছোরা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একেক ভাগে ৮-১০ জনকে হাত-পা বেঁধে প্রথমে কিল-ঘুষি তারপর জল্লাদের সামনে ঠেলে দিচ্ছে। জল্লাদের তলোয়ার তৎক্ষণাৎ মাথা আলাদা করে ফেলে এবং পেট ফেড়ে দিচ্ছে। গোফরানের গায়ের জামা সোয়েটার খুলতে গেলে সে সুযোগ বুঝে ঝিলের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে অপর পাশে কাঁটাবন ও ঝোপঝাঁড়ের মধ্যে লুকিয়ে থেকে এই হত্যাকা- প্রত্যক্ষ করে। এই গণহত্যার আরেকটি বৈশিষ্ট্য নির্যাতনের ধরন ছিল ভিন্ন। অধিকাংশ লোককেই জবাই করে হত্যা করা হতো, যেমন মুসলমানরা পশু কোরবানি দেয়, জবাই করার আগে কণ্ঠনালী কেটে দিত, ছুরি দিয়ে পেট ছিদ্র করে দিত। নারীদের পাহাড়ের ওপর পেতে করা হতো নির্যাতন। এই গণহত্যায় বেশ কয়েকজন পাকসামরিক কর্মকর্তা জড়িত থাকলেও মূল দায়ভার বিহারীদের। মূলত স্থানীয় বিহারীরাই এই গণহত্যা ঘটিয়েছে। ট্রেনের যাত্রীদের নামিয়ে হত্যা করেছে, নারী নির্যাতন করেছে, সহকর্মীর স্ত্রী, কন্যাকে তুলে এনে নির্যাতন করেছে। দেখলাম ঝিলের আশপাশে উঁচু ভিটার ওপরে এবং নিচে অসংখ্য দ্বিখ-িত লাশ বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এক জায়গায় অনেকগুলো লাশের মাথা জড়ো করে রাখা হয়েছে। আরেক জায়গায় গর্তের মধ্যে লাশগুলোর মাথা ভেতরের দিকে এবং পাগুলো বাইরের দিকে রাখা। এই বিভৎস দৃশ্য দেখে আমি এবং আমার সঙ্গীদের জ্ঞানহারা হবার উপক্রম হলো। কোন রকমে আত্মসংবরণ করে সেই জল্লাদখানা ত্যাগ করে পশ্চিম দিকের জঙ্গলের ভেতর দিয়ে পথ ধরে চলে এলাম। কি দেখলাম? দেখলাম অগণিত মৃতদেহ। চক্ষু স্থির হয়ে গেল। সংযত হলাম। ভাল করে দেখলাম। এবার দেখলাম সব লাশ স্ত্রীলোকের। উলঙ্গ অবস্থায়। অধিকাংশই যুবতীর এবং দুই তিন দিন আগের মৃতদেহ বলে মনে হলো। ভাল করে নজর দিয়ে দেখলাম অধিকাংশ মৃত নারীর পেটে সন্তান। মৃত দেহগুলো এক এক স্তূপে ১০ জন ১৫ জন করে রাখা হয়েছে। এভাবে পাহাড়ের ওপর বিভিন্ন স্থানে অনেক স্তূপ করে রাখা হয়েছে। আমার সঙ্গী একজন অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল। আমি কোন রকমে সংজ্ঞা রেখে একে একে সব মৃতদেহ গুনে দেখলাম এক হাজার বিরাশিটি হতভাগ্য যুবতীর মৃতদেহ। এই অর্ধগলিত লাশগুলো দেখে মনে হলো অধিকাংশের পেটে ছুরি দ্বারা আড়া-আড়িভাবে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। পাহাড়ের পথ ধরে চুপি চুপি চলে এলাম। একাত্তরে চট্টগ্রাম শহরে ১১৫টি বধ্যভূমিতে হত্যাযজ্ঞ চালায়। যার মধ্যে প্রায় ৭০টি বধ্যভূমি শনাক্ত করা গেছে। বাকিগুলো এখনও অন্ধকারে। ১৯৭১ গণহত্যা জাদুঘরের মাধ্যমে আমরা সেগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। চেষ্টা করছি শহীদদের পরিচয় শনাক্তকরণের। বিনম্র শ্রদ্ধা প্রায় অজ্ঞাত বন্দর শহর চট্টগ্রামের সেই সব শহীদদের। লেখক : বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও ট্রাস্টি, ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর, খুলনা
×