বৃহস্পতিবার ‘বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট’ ২০১৬-এর ট্রফি ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রতিটি উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্তের কথা পুনর্ব্যক্ত করলেন। শরীর-মনের প্রফুল্লতার জন্য খেলাধুলার চেয়ে ভাল কিছু আর নেইÑ প্রতিষ্ঠিত এ সত্যটি আজ আর কেউ মনেই রাখেন না। সবাই ছুটছে সোনার হরিণের পেছনে। নতুন প্রজন্ম কী শিখছে কীভাবে জীবন যাপন করছেÑ এসব নিয়ে অভিভাবকদের তেমন গভীর কথা শুনতে পাওয়া যায় না। টিভি টকশোগুলো রাজা-উজির মারায় ব্যস্ত। সত্যিকারের সামাজিক সঙ্কট-সমস্যা সব নিচে চাপা দিয়ে উপরে উপরে আমরা আধুনিক হওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছি। তরুণ প্রজন্মের সামনে আদর্শ স্থাপনে ব্যর্থ হলে, তাদেরকে সাংস্কৃতিক কর্মকা- আর খেলাধুলায় যুক্ত না করা গেলে শেষ পর্যন্ত তা সমাজের জন্যই বিপদ ডেকে আনবে; সে কথা আমরা দিব্যি ভুলে বসে আছি। হতাশার মাঝে হঠাৎ হঠাৎ আশার আলো কাউকে না কাউকে জ্বালাতেই হয়। সাম্প্রতিককালে দেশের খেলাধুলার জন্য আমরা সুসংবাদ পাচ্ছি। তৃণমূল পর্যায়ে খেলাধুলার সুবিধা নিশ্চিত করতে সরকার বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে দু’বছর হলো। দেশের ৪৮৭ উপজেলার প্রত্যেকটিতেই কমপক্ষে একটি করে খেলার মাঠে স্টেডিয়াম তৈরি হচ্ছে। স্টেডিয়াম মানেই হলো ক্রীড়াকে উৎসবে পরিণত করার জমজমাট আনুষ্ঠানিকতা। বহু ক্রীড়ামোদি মানুষের একসঙ্গে খেলা উপভোগের অতীব সুন্দর ব্যবস্থা। এর ফলে খেলাধুলার চর্চা ও অনুশীলন সাধারণভাবে বৃদ্ধি পাবে। আমরা আশা করতে পারি, উপেক্ষিত ফুটবলও পুনরায় ফিরে পাবে তার যথাযথ আসন।
ক্রীড়াক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছেÑ এমন একটা আশাবাদী বাক্য উচ্চারণ করতে আমাদের ভাল লাগে। এর ভেতর অবশ্যই কিছু সত্যতা রয়েছে। বিশেষ করে ক্রিকেটে আমাদের উন্নতি হয়েছে অনেক। বাইরের দুনিয়া বাংলাদেশকে যে কয়টি ইতিবাচক অর্জনের জন্য চিনছে তার ভেতর প্রথম সারিতে রয়েছে ক্রিকেট। প্রধানমন্ত্রী মেয়েদের খেলাধুলার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে বলেছেন, আমাদের মেয়েরাও ভাল খেলছে। তারা এএফসি অনুর্ধ-১৪ ফুটবলে আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। ভারতে অনুষ্ঠিত নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতায় আমাদের মেয়েরা রানার-আপ হয়েছে। এ সবই দেশের ক্রীড়াক্ষেত্রের জন্য সুসংবাদ।
স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭৪ সালে ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিআইএস (বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব স্পোর্টস) প্রতিষ্ঠিত হয়। এর লক্ষ্যই ছিল সারাদেশ থেকে প্রতিশ্রুতিশীল ক্রীড়া প্রতিভা খুঁজে বের করা এবং তাদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক উপায়ে ক্রীড়া বিষয়ক শিক্ষাদান ও ডিগ্রী পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষা প্রদানের সুব্যবস্থা করা। পঁচাত্তরের পর প্রতিষ্ঠানটি ‘বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা বিকেএসপি’ নাম ধারণ করে। যদিও তা দেশবাসীর প্রত্যাশা অনেকাংশেই পূরণ করতে পারেনি। লাখো নবীন খেলোয়াড়ের জন্য একটিমাত্র প্রতিষ্ঠান কাক্সিক্ষত সুফল অর্জনে কখনই সম্ভব হতে পারে না। প্রয়োজন তৃণমূল পর্যায়ে খেলাধুলার জন্য অবকাঠামো নির্মাণ করে তরুণদের উৎসাহিত ও সংযুক্ত করা। দেরিতে হলেও সে লক্ষ্যেই বর্তমান সরকার ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আমরা আশা করতে পারি এর মাধ্যমে আগামীতে সেই আগের মতোই গোটা দেশ থেকে নবীন-তরুণ কৃতী খেলোয়াড়দের জাতীয় পর্যায়ে তুলে আনা সম্ভব হবে। সাফল্যের ধারাবাহিক পরিচয় রাখার মাধ্যমে তারা একদিন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুনাম অর্জন করবে।
শীর্ষ সংবাদ: