ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্মার্ট টিভি দিয়ে গুপ্তচরবৃত্তি

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ৪ মার্চ ২০১৭

স্মার্ট টিভি দিয়ে গুপ্তচরবৃত্তি

যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল ট্রেড কমিশন সম্প্রতি অভিযোগ করেছে যে ‘ভিজিও’ নামক একটি টেলিভিশন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের ওপর গুপ্তচরবৃত্তির জন্য ১ কোটি ১০ লাখ টেলিভিশন কাজে লাগিয়েছে। ‘ভিজিও’কে এই বলে অভিযুক্ত করা হয়েছে যে তারা গ্রাহকদের অবস্থান, ডেমোগ্রাফি ও দর্শনগত অভ্যাস ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য উপাত্ত গোপনে সংগ্রহ ও বিক্রি করেছে। এখন ‘ভিজিও’ এফটিসির সঙ্গে এবং নিউ জার্সি এ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের সঙ্গে এই সংক্রান্ত একটি মামলা নিষ্পত্তির জন্য ২২ লাখ ডলার দিতে রাজি হয়েছে। স্মার্ট এ্যাপসের আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহক ও ভোক্তাদের স্বার্থের প্রবক্তারা এসব ডিভাইসের দ্বারা স্পর্শকাতর তথ্য এগুলোর প্রস্তুতকারকদের কাছে পাঠানো যেতে পারে কিনা তা নিয়ে উদ্বেগজনক প্রশ্ন তুলে এসেছে। এর জবাবে এফটিসির এবার থেকে বলা হয় ভিজিওর ক্ষেত্রে দেখা গেছে কিভাবে একটা টেলিভিশন বা অন্যান্য এ্যাপ তাদের কোম্পানিগুলোকে মালিক গ্রাহক যা বলতে চায় তার বেশি কিছু জানিয়ে দিতে পারে। এফটিসির প্রাইভেসি ও আইডেনটিটি প্রটেকশন ডিভিশনের এ্যাটর্নি কেভিন মরিয়ার্ত্তি একটা ব্লগ পোস্টে লিখেছেন, ‘কোন কোম্পানির প্রতিনিধি চেয়ার টেনে নিয়ে আপনার পাশে বসে আপনি কি দেখছেন না দেখছেন সে সংক্রান্ত সবকিছুর ওপর সতকর্তার সঙ্গে যাবতীয় বিষয় লিখে নেয়ার এবং সেগুলো অংশীদারদের জানিয়ে দেয়ার আগে সেই প্রতিনিধির আপনার কাছে জেনে নেয়া উচিত ব্যাপারটা ঠিক আছে কিনা, অর্থাৎ আপনার সম্মতি আছে কিনা।’ ভিজিও এই কাজটা করছিল না। তাই এফটিসি তার ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসে। বিষয়টির নিষ্পত্তির অংশ হিসেবে ভিজিও তার কৃৎ অন্যায়ের কথা স্বীকারও করেনি অস্বীকারও করেনি। মামলার ফয়সালা সম্পর্কে বলতে গিয়ে ভিজিওর কৌঁসুলি জেরি হুয়াং বলেন, ‘এফটিসি আজ পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে যে টেলিভিশন দেখা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ ও শেয়ার করার আগে সকল স্মার্ট-টিভি প্রস্তুতকারকদের গ্রাহকদের সম্মতি নিতে হবে এবং ভিজিও এদিক দিয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।’ কিছু কিছু গ্রাহক ভিজিও নামটি না চিনতে পারলেও অধিকাংশ গ্রাহক ভিজিও টেলিভিশনে কিছু না কিছু সম্ভবত দেখেছেন। ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক ‘ইরভিন’ নামক প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় টিভি প্রস্তুতকারক। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের ২০ শতাংশ এদের দখলে। ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যত টিভি বিক্রি হয়েছিল তার মধ্যে প্রতি ৫টি টিভির ১টিই এদের। সম্প্রতি চীনা কোম্পানি লীইকো ‘ইরভিন’ কিনে নেবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। লীইকো নেটসিøক্স স্টাইলের মিডিয়া সার্ভিস, স্মার্টফোন এবং গাড়িও বানিয়ে থাকে। সুতরাং ভবিষ্যতে এদের দিক থেকেও গুপ্তচরবৃত্তির আশঙ্কা আছে। মামলার বিবরণে জানা যায় যে ভিজিও আক্ষরিক অর্থেই টিভি দর্শকদের ওপর নজরদারি করত। তাদের স্মার্ট টিভিতে দর্শক কি দেখছে সে সম্পর্কে প্রতি মুহূর্তের তথ্য ধারণ করে রাখত। সেগুলোর মধ্যে থাকত কেবল, ব্রডব্যান্ড, সেটটপ বক্স, ওভার দ্য-এয়ার ব্রডকাস্ট; ডিভিডি ও স্ট্রিমিং ডিভাইসের তথ্য। ভিজিওর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ আছে যে তারা ডেমোগ্রাফিক তথ্যাবলী ড্যাটার সঙ্গে যুক্ত করত এবং ব্যবহারকারীর লিঙ্গ, বয়স ও আয়ের তথ্যসহ ওই সব ড্যাটা বিশেষ ধরনের বিজ্ঞাপন তৈরির কাজে নিয়োজিত কোম্পানিগুলোর কাছে বিক্রি করত। ভিজিও কোম্পানি অবশ্য তাদের এক বিবৃতিতে বলেছে যে তারা কখনই দর্শনগত তথ্য এমন ড্যাটার সঙ্গে যুক্ত করেনি সেখানে ব্যক্তিগত ব্যবহারকারীকে শনাক্ত করা যায়। নিউ জার্সির জেলা আদালত এফটিসিকে ১৫ লাখ ডলার এবং নিউজার্সির এ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসকে ১০ লাখ ডলার দেয়ার জন্য ভিজিওকে নির্দেশ দেয়। অনুবাদ : এনামুল হক সূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট
×