ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গ্যাস মিললেও ক্ষীণ বাণিজ্যিক উত্তোলনের আশা

মোবারকপুর গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত, রিগ সরিয়ে নিচ্ছে বাপেক্স

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৪ মার্চ ২০১৭

মোবারকপুর গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত, রিগ সরিয়ে নিচ্ছে বাপেক্স

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আশা জাগানোর পরও পরিত্যক্ত হলো পাবনার মোবারকপুর। গ্যাসের দেখা মিললেও বাণিজ্যিক উত্তোলনের আশা না থাকায় কূপটি প্লাগ ইন এ্যাবানডন (পিএনএ) করা হয়েছে। মোবারকপুর থেকে রিগ সরিয়ে নিচ্ছে বাপেক্স। তৃতীয়মাত্রার ভূকম্পন জরিপ (থ্রি ডি সাইসমিক সার্ভে) করার পর আবারও কোন আশা দেখা গেলে মোবারকপুরে কূপ খনন হতে পারে। বাপেক্সের মোবারকপুর ক্ষেত্রে কাজ করা এক কর্মকর্তা এসব কথা জানান। গত এক দশকে দেশের স্থলভাগে বড় কোন গ্যাসক্ষেত্র পাওয়া যায়নি। কয়েকটি স্থানে গ্যাস পাওয়ার ঘোষণা দেয়া হলেও গ্যাস মিলেছে সামান্য পরিমাণ। মোবারকপুর দিয়ে স্থলভাগে সেই আশা জাগলেও প্রদীপটি নিভে গেল। গত ১৭ জানুয়ারি গ্যাসক্ষেত্রটি থেকে গ্যাস উদ্গিরণ শুরু হয়। তখন বাপেক্স ওই গ্যাসে আগুন জ্বালিয়ে ঘোষণা দেয় এখানে গ্যাস রয়েছে। কিন্তু সমস্যা ছিল গ্যাসের চাপ নিয়ে। বাণিজ্যিকভাবে সফল বলা যায় এমন চাপ কোন সময়ই ক্ষেত্রটির ছিল না। বাপেক্স এর আগে বলেছিল মাটির ৪ হাজার ২০০ মিটার গভীরে দুটি স্তরে মোবারকপুরে গ্যাস থাকতে পারে। ভূতাত্ত্বিক তত্ত্ব মতে, মোবারকপুরের কাঠামোটি স্টেটিগ্রাফিক স্ট্রাকচার-সাধারণত এ ধরনের ভূগঠন জটিল প্রকৃতির। এখানে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে প্রকৃতি উদার হলে সেই শঙ্কাও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। ভোলার শাহবাজপুর ক্ষেত্রটি একই ধরনের ভূগঠনের হলেও সেখানে গ্যাস পাওয়া গেছে। আকারে ছোট হলেও ক্ষেত্রটি বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য। আবার মোবারকপুর থেকে ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে একই ধরনের ভূ-কাঠামোয় তেলের সন্ধান পেয়েছে ভারতীয় কোম্পানি ওএনজিসি। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে মোবারকপুরেও আশা দেখেছিল বাপেক্স। তবে শেষ পর্যন্ত আর সফলতা মিলল না। জানতে চাইলে বাপেক্সের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বণিজ্যিক উত্তোলনের নানা পরীক্ষার ধাপ পেরোতে পারেনি মোবারকপুর ক্ষেত্রটি। কূপটি প্লাগ ইন এ্যাবানডন করা হয়েছে। পরবর্তী পরিকল্পনা জানতে চাইলে বলেন, এখান থেকে রিগ সরিয়ে নেয়া হবে। এর পর থ্রি ডি সাইসমিক সার্ভের পর দেখা হবে আর কোন সম্ভাবনা রয়েছে কিনা। যদি উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকে সে ক্ষেত্রে পরবর্তীতে কূপ খনন করা হবে। তবে বাপেক্স সব ক্ষেত্রেই এমন ঘোষণা দিয়েই গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। এর আগে সুনেত্র নিয়ে বলে যাওয়া গল্পেরও ইতি টানা হয় তৃতীয় মাত্রার ভূকম্পন জরিপের কথা বলেই। এর পর আর তেমন কিছু দেখা যায়নি। এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। এখন পর্যন্ত উত্তরবঙ্গে মোট তিনটি তেল-গ্যাস অনুসন্ধানকূপ খনন করা হয়েছে। কিন্তু কোন সময়ই বাণিজ্যিক উত্তোলন সম্ভব হয়নি। সবক্ষেত্রেই বলা হয়েছে যে, গ্যাস রয়েছে তা বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য নয়। তবে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে কয়েক দফা দ্বিতীয়মাত্রার ভূকম্পন জরিপ চালানো হয়। এসব জরিপের ফল বিশ্লষণ করে সম্ভাবনার কথাও বলা হয়। সূত্র জানায়, ১৯৮০-৮১ সালে মোবারকপুর অঞ্চলে প্রথম দ্বিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ চালায় পেট্রোবাংলা। এর পর জার্মান একটি প্রতিষ্ঠানও ১৯৮৩-৮৪ সালে সেখানে জরিপ করে। ওই দুটি জরিপেই মোবারকপুরে তেল-গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করা হয়। এর পর ২০০৬-০৭ ও ২০০৭-০৮ সালে বাপেক্স আবার সেখানে দ্বিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ করে। বাপেক্স সূত্র জানায়, ২০০৬ সালে মোবারকপুরে অনুসন্ধান কূপ খননের পরিকল্পনা হাতে নিলেও কাজ শুরু করা যায়নি। এর পর আবার ২০১০ সালে নতুন করে কূপ খননের উদ্যোগ নেয় বাপেক্স। এ সময় কারিগরি কারণ দেখিয়ে মোবারকপুর থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার উত্তরে পাগলাদহ মৌজায় নতুন করে কূপ খননের স্থান নির্ধারণ করা হয়। আর খনন শুরু হয় ২০১৪ সালের আগস্টে। খননকাজ চলাকালে একই বছরের ডিসেম্বরে ৪ হাজার ১৭৫ মিটার গভীরতায় খনন পাইপ আটকে গেলে খনন কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে দ্বিতীয়বারের মতো একই কূপে খনন কাজ শুরু হয়। সে সময় ৪ হাজার ৫৯৬ থেকে ৪ হাজার ৬০৪ মিটার গভীরতায় ৮ মিটার পুরুত্বের একটি স্তরে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা যায়। ভূগর্ভস্থ উর্ধমুখী উদ্বেগজনক অতিরিক্ত চাপের কারণে দ্বিতীয়বারের মতো খনন কাজ বন্ধ রাখা হয়। গত নবেম্বরে বাপেক্স নিজ খরচে আবার খনন শুরু করে। গত ১৭ জানুয়ারি যা শেষ হয়।
×