ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি, ২৩ মার্চ আধাঘণ্টা কর্মবিরতির ডাক

সংরক্ষিত ছুটি কমানোয় প্রাইমারী শিক্ষকদের অসন্তোষ বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৪ মার্চ ২০১৭

সংরক্ষিত ছুটি কমানোয় প্রাইমারী শিক্ষকদের অসন্তোষ বাড়ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হঠাৎ করে সংরক্ষিত ছুটি তিন দিন থেকে কমিয়ে একদিন করে ছুটির বর্ষপঞ্জি ঘোষণায় অসন্তোষ বাড়ছে সরকারী-বেসরকারী প্রাথমিক শিক্ষকদের মাঝে। আপত্তি উঠেছে বর্ষপঞ্জির বেশ কয়েকটি নির্দেশনা নিয়ে। বর্ষপঞ্জি সংশোধনের দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরাম। একই সঙ্গে আগামী ২৩ মার্চ বিদ্যালয়ে আধঘণ্টা কর্মবিরতির ডাক দেয়া হয়েছে। এদিকে কর্মসূচীর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি। বর্ষপঞ্জি নিয়ে আপত্তি তুলেছে প্রধান শিক্ষকদের সংগঠন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতি। বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরামের আহ্বায়ক মোঃ সিদ্দিকুর রহমান ও যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ গোলাম মোস্তফা অবিলম্বে বিষয়টিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী এবং প্রাথমিকের শিক্ষা সচিবের কাছেরও স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিগত কয়েক বছর ধরে ছুটি নিয়ে শিক্ষকদের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করে আসছে। ছুটির তালিকা প্রণয়নের মাধ্যমে শিক্ষকদের অধিকার হরণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা যথাযথভাবে জাতীয় দিবসগুলো পালন করতে পারছে না। এ অবস্থার মধ্যেই এবার আরও সংকটে ফেলা হয়েছে শিক্ষক সমাজকে। ফোরামের পক্ষ থেকে সারাদেশের প্রাথমিক শিক্ষকদের শ্রান্তি বিনোদন ভাতা ৩ বছর পরপর প্রাপ্তি, জাতীয় দিবসের ছুটিগুলো গ্রীষ্মের ছুটির সঙ্গে সমন্বয় করে ১৫দিন নির্ধারণ এবং জাতীয় দিবসগুলো কর্মদিবস ঘোষণা করে ছুটির তালিকা সংশোধন করার দাবি জানানো হয়। প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরামের আহ্বায়ক মোঃ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বর্তমান ছুটির তালিকার মাধ্যমে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়েরই অধিকার হরণ করা হয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা স্মারকলিপির মাধ্যমে প্রাথমিকের সকল শিক্ষকের এ ন্যায্য দাবিসমূহ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছি। প্রাথমিক শিক্ষা ও শিক্ষকদের অধিকার নিয়ে কাজ করে প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরাম। সংগঠনের পক্ষ থেকেই এ বর্ষপঞ্জি সংশোধনের দাবিতে আগামী ২৩ মার্চ কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সকল শিক্ষক সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে পরস্পরের প্রতি ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে ছুটির তালিকা সংশোধনের দাবিতে কর্মসূচী পালনের অনুরোধ জানিয়েছেন ফোরামের আহ্বায়ক সিদ্দিকুর রহমান। জানা গেছে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চলতি বছরেরর জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছুটির যে বর্ষপঞ্জি ঘোষণা করা হয়েছে তাতে হঠাৎই শিক্ষকদের সংরক্ষিত ছুটিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এছাড়া এ ছুটি নেয়ার জন্য প্রধান শিক্ষকদের বাদ দিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের অনুমতির কথা বলা হয়েছে। ছুটির এ বর্ষপঞ্জি ঘোষণার পর থেকেই শিক্ষক সংগঠনের পক্ষ হতে বিভিন্নভাবে আপত্তি তোলা হয়। এরপর শিক্ষক সংগঠনগুলো বৈঠক করে প্রতিবাদ কর্মসূচীর সিদ্ধান্ত নেয়। এদিকে ফোরামের ২৩ মার্চের কর্মবিরতির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে সরকারী প্রাথমিক শিক্ষদের সংগঠন বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি। সমিতির নেতারা সংরক্ষিত ছুটি তিন দিন থেকে কমিয়ে একদিন করার সিদ্ধান্ত বাতিলেরও দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি তারা সংরক্ষিত ছুটির সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রধান শিক্ষকদের ক্ষমতা খর্ব করে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে দেয়ায়ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম তোতা ও সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ গাজীউল হক চৌধুরী বিবৃতিতে জানান, বিগত বছরগুলোতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের হাতে তিন দিন সংরক্ষিত ছুটি ছিল। কিন্ত এ বছর ছুটির তালিকায় সংরক্ষিত ছুটি রাখা হয়েছে মাত্র একদিন। তাও প্রধান শিক্ষকদের ছুটির তালিকা হাতে রেখে আবার পায়ে শিকল দিয়ে বেড়ি লাগিয়ে থানা/উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। এটার মাধ্যমে মূলত প্রধান শিক্ষকদের মর্যাদাহানি করা হয়েছে। বিবৃতিতে তারা আরও বলেন, সংরক্ষিত ছুটি সাধারণত আকস্মিক কারণে ঘোষণা করতে হয়। সে ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে অনুমতি নেয়ার সুযোগ থাকে না। কেবলমাত্র টেলিফোনের মাধ্যমে অবহিত করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে শিক্ষক নেতারা মনে করেন আগের মতো প্রধান শিক্ষকদের হাতে সংরক্ষিত ছুটি রাখা বাঞ্ছনীয়। এদিকে ঘোষিত ছুটির বর্ষপঞ্জি শিক্ষকদের ক্ষতির কারণ অভিহিত করে অবিলম্বে আগের মতো বিধান রাখার দাবি জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষকরা। বাংলাদেশ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. আবু হেনা মোস্তফা কামালসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে লিখিত আপত্তি জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সমিতির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র এস এম ছায়িদ উল্লা জনকণ্ঠকে বলেন, ছুটির যে বর্ষপঞ্জি ঘোষণা করা হয়েছে তাতে আমাদের ক্ষতি করা হয়েছে। এতদিন যেখানে তিনদিন সংরক্ষিত ছুটি ছিল সেখানে হঠাৎই তা একদিন করা হয়েছে। আবার সে ছুটি নিতে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের অনুমোদন লাগবে। এতদিন এটা প্রধান শিক্ষকরই দিতে পারতেন। এ ছুটিটা নিতে হয় হঠাৎ কোন বিপদ আপদ হলে। তৎক্ষণাৎ এ ছুটি নিতে হয়। এটা নিতে যদি উপজেলার অনুমোদন লাগে তাহলে প্রধান শিক্ষকদের অস্তিত্ব থাকল কোথায়? আর হঠাৎ সমস্যা হলে একজন শিক্ষক উপজেলার অনুমোদন কিভাবে নেবেন। এটা পরিবর্তন করতে হবে।
×