ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের বিরল দৃশ্য দেখতে পর্যটকের ভিড় কুয়াকাটায়

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৪ মার্চ ২০১৭

সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের বিরল দৃশ্য দেখতে পর্যটকের ভিড় কুয়াকাটায়

ফিরোজ মান্না/মেজবাহউদ্দিন মাননু, কুয়াকাটা থেকে ফিরে ॥ প্রকৃতির অপরূপ রূপে সেজে রয়েছে সাগরকন্যা কুয়াকাটা। এখানে সাগরের ঢেউ যেন আনন্দ তরঙ্গ ছড়িয়ে যাচ্ছে প্রাণে প্রাণে। তারই পরশ মাধুরী গায়ে মেখে নিচ্ছে দেশ-বিদেশের পর্যটক। অপরূপ রূপের লীলায় মুগ্ধ নয়ন জুড়িয়ে দিচ্ছে দক্ষিণের সমীরণ। আহা! কি মনরোম দৃশ্য। মন-প্রাণ ভরে নির্মল আনন্দে ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য। এখানে অপরূপ বীণার সুর যেন মনের আড়াল দিয়ে বেজেই চলেছে। সাগরকন্যা কুয়াকাটায় পর্যটক পদচারণায় মুখরিত। একই জায়গায় দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের বিরল দৃশ্য পৃথিবীর আর কোন জায়গায় দেখা যায় না। বুধবার কুয়াকাটায় সাগরসৈকত ঘুরে এমন দৃশ্যের পরশখানি নিলাম। রাখাইন সম্প্রদায়ের প্রায় দু’শ’ বছরের পুরনো ঐতিহ্য শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধবিহার। গৌতম বুদ্ধের বিশাল আকৃতির মূর্তিসহ শ্বেতপাথরের নির্মিত ছোট-বড় অসংখ্য মূর্তি রয়েছে। আরাকানরাজ্য থেকে বিতারিত হয়ে আসা রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকেরা তাদের রাজা মংয়ের নেতৃত্বে সাগর পাড়ি দিয়ে প্রথমে চট্টগ্রাম। পরে পটুয়াখালীর জঙ্গলাকীর্ণ এলাকায় তাদের বসতি স্থাপন করে। নিজস্ব ঐতিহ্য ও কৃষ্টি-কালচারে নিজেদের আবাসস্থল। সেই কুয়াকাটায় এখন দেশ-বিদেশের মানুষের পায়ের চিহ্ন পড়ছে প্রতিদিন। গড়ে উঠেছে হোটেল-মোটেলসহ পর্যটকদের জন্য নানা অবকাঠামো। তবে এটা সত্য, এখনও খুব বেশি সুযোগ-সুবিধা গড়ে ওঠেনি। কুয়াকাটাকে ঘিরে সৌন্দর্যের শেষ নেই। সোনারচর-রূপারচর ,ফাতরারচর,রাখাইন পল্লী, ইকোপার্ক ও জাতীয় উদ্যান। সোনারচর-রূপারচর নামই বলে দেয়, প্রকৃতি কতটা সৌন্দর্য ছড়িয়ে রেখেছে এখানে। সাগরসৈকতের কোলঘেঁষে প্রায় ২শ’ একর জায়গায় ষাটের দশকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয় নারকেল কুঞ্জ, ঝাউবন, গঙ্গামতি সংরক্ষিত বন। আর ফাতরার বন ও মহিপুর রেঞ্জের বনাঞ্চল নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে ইকোপার্ক ও জাতীয় উদ্যান । ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য এই সৈকতে আছে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল ও ঘোড়া। ভাড়া সাধারণত দূরত্ব ও সময় অনুযায়ী হয়। কুয়াকাটার আশপাশে কয়েকটি চর আছে। স্পীডবোট ও ট্রলারে নানা জায়গায় বিহারও করা যায়। কুয়াকাটায় সাগরসৈকতের আশপাশে কয়েকটি পিকনিক স্পট গড়ে উঠেছে। প্রকৃতি প্রেমিক মানুষকে এখন কুয়াকাটা নামটি সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করছে। দেশজুড়েই মানুষ জানে কুয়াকাটার নাম। ছড়িযে পড়েছে বিদেশেও। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কুয়াকাটা নামটির সঙ্গে যোগ হয়েছে সাগরকন্যা শব্দটি। কুয়াকাটা এখন দর্শনীয় স্থান। নয়ন ভোলানো এ সৈকতের বেলাভূমিতে দাঁড়িয়ে সাগর¯œাত সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের দৃশ্য প্রাণ জুড়িয়ে দেয়। এ মনোলোভা দৃশ্য অবলোকন করতে এখন কুয়াকাটায় ভিড় করছে হাজার হাজার পর্যটক-দর্শনার্থী। এ দৃশ্য বিমোহিত করে আগত পর্যটক ও দর্শনার্থীকে। একটু নির্মল আনন্দঘন সময় কাটাতে শিক্ষার্থী, নব দম্পতিযুগলসহ পারিবারিক-ভাবে সব শ্রেণীপেশার প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ এখানে ঘুরতে আসেন। পটুয়াখালীর সাগরতীরবর্তী কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নের শেষপ্রান্তে সাগরঘেঁষা কুয়াকাটা নামের গ্রামটি এখন সর্বত্র-সমধিক পরিচিত। সর্বশেষ ২০১০ সালে কুয়াকাটাকে পৌরসভায় উন্নীত করা হয়েছে। প্রায় ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং দুই কিলোমিটার প্রস্থ কুয়াকাটা সৈকতটি পরিচ্ছন্নতার কারণে আগতদের কাছে খুবই সমাদৃত। সৈকতের বেলাভূমির চিক চিক বালুতে খালি পায়ে হাঁটায় এক শিহরণ জাগে আগতদের শরীরে। ছুঁয়ে যায় মনপ্রাণে এক আবেগঘন স্পর্শ। একাকীত্বে সৈকতের ওয়াটার লেভেলে হাঁটলে স্মরণ করিয়ে দেয় ফেলে আসা পেছনের স্মৃতিময় জীবনের গল্প। এখানে নিরাপত্তাহীনতার কোন কারণ নেই। ফলে দিন-রাত সমানভাবে, সমানতালে, নির্বিঘেœ আমুদে সময় কাটায় এখানে আসা প্রকৃতিপ্রেমিরা। বিনোদনে মত্ত হয়ে যান। দারুণ এক প্রাণভরা স্বস্তিতে প্রকৃতির অপার এই দৃশ্য উপভোগ করেন আগতরা। প্রত্যূষে সাগর¯œাত সূর্যের উদয় দেখতে পুবের আকাশপানে চেয়ে থাকার অপেক্ষা। দুপুর গড়াতেই সাগরের নীলজলে উপভোগ্য স্নান। আর শেষ বিকেলে খালি পায়ে সৈকতের বেলাভূমে দাঁড়ানোর অনুভূতি শরীরের মধ্যে কী যে শিহরণ জাগায় তা বোঝানো যাবে না। মনের মধ্যে ভেসে ওঠে হারানো সব স্মৃতি, যদি থাকেন একাকী। সীমাহীন সাগরের দিকে তাকিয়ে হারিয়ে যেতে কোন মানা নেই। সবশেষ, পশ্চিমের আকাশে সূর্য সাগর অতলে হারিয়ে যাওয়ার দৃশ্য মন ভোলানো। চোখে না দেখলে এসব বোঝানো যাবে না। কুয়াকাটার দীর্ঘ সৈকতের কোলঘেঁষে রয়েছে নারকেল, ঝাউ ও কড়ই বাগান। পুবের শেষদিকে গঙ্গামতির বিরাট সংরক্ষিত বনাঞ্চল। যার মাঝখানের লেকটি বনাঞ্চলকে করেছে বিভক্ত। পশ্চিমের শেষ মোহনায় রয়েছে আরেক সৌন্দর্যম-িত স্পট লেম্বুরচর বনাঞ্চল। এখানে দাঁড়িয়ে আন্ধারমানিক নদী মোহনার উল্টোদিকে দেখা যায় দশ সহস্রাধিক একরজুড়ে মনোরম বিস্তৃত ফাতরার বনাঞ্চল। সৈকতের কিনারে রয়েছে ছোট্ট একটি শালবাগান। এখন আর নেই বললেই চলে, দু’একটি মরা গাছ দাঁড়িয়ে সাক্ষ্য বহন করছে মাত্র। কুয়াকাটাকে পর্যটন কেন্দ্রে উন্নীতের গোড়াপত্তন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭২ সালে আড়াই একর জমি অধিগ্রহণ করেছিলেন। আনুষ্ঠানিকভাবে ’৯৮ সালে পর্যটন কর্পোরেশনের হোটেল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখনই কুয়াকাটাকে আধুনিক পর্যটনে উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়। এখন পর্যটন কর্পোরেশনের হোটেল-মোটেল তৈরি হয়েছে। বহুগুণে কেটে গেছে আবাসন সঙ্কট। কুয়াকাটায় অবকাশ যাপনের জন্য আগতদের এখন আর ভাবতে হয় না। পর্যটন কর্পোরেশনের একাধিক মোটেল রয়েছে। বেসরকারীভাবে নির্মিত হয়েছে অর্ধশতাধিক উন্নত আবাসিক হোটেল। অসংখ্য হোটেলের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে রেস্তরাঁ। কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ জানান, এখন কুয়াকাটায় আধুনিকমানের অন্তত আটটিসহ অর্ধশত ভাল-মাঝারি মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। যেখানে অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ অবস্থান করতে পারছে। তিনি আরও জানান, পারিবারিকভাবে কোন পার্টি কিংবা বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান করার সুবিধা রয়েছে। এছাড়া অফিসিয়াল সভা- সেমিনার কিংবা সমাবেশ করার মতো হলরুম সংবলিত হোটেল স্পেসও রয়েছে। ইতোমধ্যে এসব স্থানে নববর্ষ, বর্ষবিদায়-বরণসহ বিভিন্ন ধরনের জমকালো অনুষ্ঠান হচ্ছে। হচ্ছে বিশেষ কনসার্ট। কুয়াকাটায় ইতোমধ্যে গড়ে উঠেছে বিনোদনকেন্দ্রিক একাধিক রিসোর্ট কেন্দ্র। এর মধ্যে হোটেল গ্রান্ড মাস্টারের নিজস্ব ক্যাম্পাসে হ্যালিপ্যাড, সুইমিং এরিয়া, বনসাইয়ের আস্তরণঘেরা সুবজ অরণ্য, শিশুপার্ক, কৃত্রিম লেক। সিকদার রিসোর্ট সেন্টারে রয়েছে অসংখ্য কটেজ, সুইমিং এরিয়া, শিশুপার্ক, সুইমিং জোন, হ্যালিপ্যাড। রয়েছে ইলিশপার্ক। যেখানে ছোট্ট লেক, বসে আড্ডা দেয়ার গোলঘর। সেখানে আপনি ভারি এবং হাল্কা খাওয়ার সুযোগ পাবেন। বিভিন্ন বন্যপ্রাণির প্রতিকৃতিসহ জীবিত পশুপাখি। ইলিশের আদলে করা একটি রেস্তরাঁ। যেখানে ১২ মাস ইলিশের বিভিন্ন ধরনের খাবারের সুযোগ রয়েছে। তবে এখনও ফাইভ স্টার মানের কোন হোটেল এখানে গড়ে ওঠেনি। কিন্তু ভাড়া নেয়া হচ্ছে যাচ্ছেতাই। কুয়াকাটায় রয়েছে প্রায় আড়াইশ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী কুয়া। যার নামানুসারে কুয়াকাটার নামকরণ হয়েছে। প্রবীণ রাখাইন প্রয়াত বাচিং তালুকদার জানালেন, ১৭৮৪ সালের দিকে আরাকান থেকে বিতাড়িত হয়ে বনজঙ্গল ঘেরা শ^াপদ-শঙ্কুলের এ জনপদকে বাসযোগ্য করে তোলেন। থাকতেন বনজঙ্গলের জীবজন্তুদের সঙ্গে যুদ্ধ করে টংঘর তুলে। তখন খাবার পানির সঙ্কট মেটাতে এ কুয়াটি তারা কেটেছিলেন। যার নামে আজকের বিশ^খ্যাত কুয়াকাটা নামটি। কুয়াটি এখন দর্শন করেন এখানে আগতরা। কুয়ার পথ ধরেই রয়েছে ঐতিহ্যবাহী আরেক নিদর্শন। শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধবিহার। ইন্দোচীনের সৌকর্যে নির্মিত একটি টিনশেডে স্থাপিত ছিল বিহারটি। যার মধ্যে ছিল গৌতমবুদ্ধের ধ্যানমগ্ন বিশালাকায় বৌদ্ধমূর্তি। কয়েক বছর আগে বর্তমান সরকার পুরনো টিনশেড মন্দিরের পাশে পুরনো আদল ঠিক রেখে পাকা একটি অত্যাধুনিক মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছে। যেখানে পুরনো বৌদ্ধমূর্তিটি স্থানান্তর করা হয়েছে। বিহারাধ্যক্ষ এ্যানোতরা ভিক্ষু জানান, মন্দিরটি আরও দর্শনীয় করতে গেটসহ বিভিন্ন স্পটে ছোট-বড় অসংখ্য মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। মন্দিরে সকাল-সন্ধ্যা ধর্মীয় আচার পালিত হয়। এখানে রয়েছে দর্শনী ফি, জনপ্রতি ১০ টাকা। আবার এ টাকা দিয়ে পিতৃ-মাতৃহীন ১২ রাখাইন শিক্ষার্থীর লেখাপড়াসহ খাওয়ার যোগান দেয়া হয়। দর্শনীয় এ মন্দিরটি ছাড়াও কুয়াকাটার অদূরেই (ছয় কিলোমিটার) রয়েছে মিশ্রিপাড়া রাখাইন পল্লীতে আরও একটি বিশাল সীমা বৌদ্ধবিহার। বিহারটির মূল বেদির ওপর রয়েছে গৌতম বুদ্ধের ধ্যানমগ্ন একটি বিরাট মূর্তি। রাখাইনদের দাবি, এটি দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় বৌদ্ধমূর্তি। বিহারাধ্যক্ষ উত্তম বান্তে এমন দাবি করেছেন। কুয়াকাটায় শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধবিহারের পূর্ব পাশেই বেড়িবাঁধের স্লোপে সংরক্ষণ করা রয়েছে ঐতিহ্যবাহী আরেক পুরাকীর্তি দু’শ’ বছরের আগের প্রাচীন একটি নৌকা। কুয়াকাটা সৈকতের বেলাভূমির নিচ থেকে এটি উদ্ধার করা হয়। যেটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পর্যটক-দর্শনার্থীর জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। কুয়াকাটায় বিনোদনের বাড়তি উপভোগ্য আরেক স্পট জাতীয় উদ্যানের অধীন কুয়াকাটা ইকোপার্ক ও ফাতরার বনাঞ্চল। যেখানে বেড়াতে গেলে প্রকৃতির আরেক নিদর্শন সুন্দরবনের পরে আরেক বৃহৎ ম্যানগ্রোভ দেখার সুযোগ মেলে। বনাঞ্চলটিতে হরিণসহ বানর এবং বন মোরগের দেখা মেলে। বনের মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে অসংখ্য লেক। লেকের দুইপারের গাছগুলো যেন একে অপরের সঙ্গে মিতালি করতে ডালপালা বিস্তৃত করছে অপর পারের দিকে। পাখির কলকাকলিতে মুখর থাকে বনটি। তবে বনটি রক্ষায় আরও উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন বলে পর্যটকদের আকুতি। কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট বোট ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জনি আলমগীর জানান, কুয়াকাটা সৈকত থেকে প্রতিদিন ফাইবার বোটে কিংবা স্পীডবোটে এসব ঘুরে দেখার সহজতর সুযোগ রয়েছে। কুয়াকাটায় পর্যটক ও বিনোদন প্রেমীদের নিরাপত্তার জন্য নৌ পুলিশের কার্যক্রম ছাড়াও ট্যুরিস্ট পুলিশের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কুয়াকাটার অদূরে (পাঁচ কিমি) মহিপুরে পুলিশী থানা করা হয়েছে। করা হয়েছে পুলিশী নিরাপত্তা বলয়। মোটকথা, কুয়াকাটা এখন বিনোদন প্রেমীদের কাছে দেশসেরা নামের একটি স্পট। ঢাকা থেকে বাসযোগে কুয়াকাটায় আসার সহজ সুযোগ রয়েছে। কুয়াকাটায় যোগাযোগের জন্য জেলা সদর পটুয়াখালী থেকে উন্নতমানের সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। কলাপাড়া থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার সড়কের তিনটি নদীতে ইতোমধ্যে শিববাড়িয়া নদীর ওপর শেখ রাসেল সেতু। সোনাতলা নদীতে শেখ জামাল এবং আন্ধারমানিক নদীতে নির্মিত হয়েছে শেখ কামাল সেতু। সেতু তিনটিও এখন বিনোদন প্রেমী মানুষের কাছে দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১০টা অবধি ভিড় থাকে পর্যটকসহ স্থানীয়দের। কুয়াকাটায় যাওয়া-আসার ফাঁকে যান থামিয়ে সেতুতে নেমে চটজলদি সেলফি তুলতে ভুলেন না। সৈকতঘেঁষা বেড়িবাঁধের উন্নয়নে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে সেøাপ সংরক্ষণ প্রকল্পের মাধ্যমে খাজুরা থেকে ধোলাইর মার্কেট পর্যন্ত বাঁধের কাজ শুরু করা হয়েছে। নির্মিত সেøাপেও আড্ডা বসে আগত দর্শনার্থীর। শুধু এ তিন নদীতেই নয়, কুয়াকাটাগামী বিকল্প সড়কের বালিয়াতলীতে নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতু। মাত্র একটি সেতু পেরিয়ে কুয়াকাটায় যাওয়ার সুযোগ পাবেন পর্যটকরা। কুয়াকাটায় যাওয়ার প্রাক্কালে পর্যটনপল্লী গঙ্গামতির বীচ ঘুরে দেখে যেতে পারবেন। সেই সঙ্গে একই পথে মিশ্রিপাড়ার বৌদ্ধবিহার অবলোকনের সুযোগও থাকছে। থাকছে তৃতীয় সমুদ্রবন্দর পায়রা দর্শনের। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থান থেকে কুয়াকাটায় আসতে এখন আর ঝক্কিঝামেলা নেই। গাবতলী কিংবা সায়েদাবাদ থেকে সকাল-সন্ধ্যায় ছাড়ছে বিভিন্ন রুটের এসি-ননএসি একাধিক বাস। রয়েছে লঞ্চে বরিশাল কিংবা পটুয়াখালী এসে বাসযোগে সরাসরি কুয়াকাটায় আসার। তবে বরিশাল-পটুয়াখালী রুটের চলাচলকারী বাসচালকসহ শ্রমিকদের হয়রানি রোধে একটু সতর্ক থাকুন। কুয়াকাটায় আসার কথা বলে মাঝপথেও নামিয়ে দেয়। এজন্য পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসন কিংবা পুলিশ সুপারের সহায়তা নিতে পারেন। কুয়াকাটার টেকসই উন্নয়নে এবং আধুনিক পর্যটনে রূপান্তরে ইতোমধ্যে সরকারের উদ্যোগে মাস্টার প্ল্যান করা হয়েছে। সৌন্দর্যময় সমুদ্রসৈকত আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় এখন চলছে একচিলতে জমি কেনার প্রতিযোগিতা। ইতোমধ্যে অন্তত অর্ধশত আবাসন কোম্পানি ঘাঁটি গেড়েছে। কিনছে হাজার হাজার একর জমি। তবে প্রতারকের হাত থেকে রক্ষার জন্য জমি কেনাবেচায় জেলা প্রশাসকের অনুমতি নেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তার পরও কিন্তু এই এলাকার ভূমি চলে যাচ্ছে টাকাওয়ালা মানুষের হাতে।
×