ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাঁশিতেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আকবরের জীবিকা

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ৪ মার্চ ২০১৭

বাঁশিতেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী  আকবরের জীবিকা

নিজস্ব সংবাদদাতা, রূপগঞ্জ, ৩ মার্চ ॥ ভিক্ষাবৃত্তি পেশা হিসেবে না নিয়ে, বাঁশি বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আলী আকবর। নরসিংদী জেলার গ্রাম চুলা এলাকার আলী আকবর জন্ম থেকেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। আলী আকবরের বাবা কৃষক হওয়ার কারণে তাকে ছোটবেলা থেকেই অনেক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। প্রতিবন্ধী স্কুলে পড়ানোর মতো সামর্থ্য আলী আকবরের বাবার ছিল না। তাই আলী আকবরের স্কুলে যাওয়া হয়নি। সে তার দুচোখে কিছইু দেখতে পারে না। কথায় আছে, যার পঞ্চম ইন্দ্রীয় কাজ না করে উপরওয়ালা তাকে ষষ্ঠ ইন্দ্রীয় প্রদান করে। দারিদ্র্যের সংসারে বড় হওয়া আলী আকবর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে পড়ালেখা করতে পারেনি। ছোটবেলা থেকেই গান, বাঁশি ও তবলা বাজানোর প্রতি তার অসীম আগ্রহ ছিল। এ কারণে এলাকার এক উস্তাদের কাছে আলী আকবর গান, বাঁশি ও তবলা বাজানো শেখে। পরিবার ও ভাইদের অবহেলা ও নির্যাতনের শিকার হওয়া আলী আকবর রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা এলাকার উস্তাদ সুন্দর আলী দেওয়ানের কাছে এসে গান, বাঁশি ও তবলা বাজানো শেখা শুরু করে। এর পর থেকেই আলী আকবর বিভিন্ন বিয়ের অনুষ্ঠানে গান ও বাঁশি বাজাত। দেড় বছর আগে উস্তাদ সুন্দর আলীর ছাত্রী শিরিন আক্তার নামে এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ভালবেসে হিন্দু ধর্ম থেকে মুসলমান ধর্ম গ্রহণ করে। হিন্দু পরিবারের জন্ম নেয়া দিপক চন্দ্র বিশ্বাস ভালবাসার জন্য মুসলমান ধর্ম গ্রহণ করে নিজের নাম পাল্টে রাখে আলী আকবর। ধর্ম পরিবর্তন করায় আলী আকবরের পরিবার ও ভাইয়েরা তার সঙ্গে কোন যোগাযোগ রাখেনি। স্বামী-স্ত্রী তারা দুজনেই বিভিন্ন বিয়ের অনুষ্ঠান ও বিভিন্ন শোতে গান ও বাঁশি বাজানোর জন্য যেত। কথায় আছে, অভাগা যেদিকে চায় সাগর শুকিয়ে যায়। বিয়ের এক বছর যেতে না যেতেই আলী আকবের স্ত্রী শিরিনা আক্তার হৃদ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এর পর থেকেই আলী আকবর এক হয়ে পড়েন। এছাড়া আলী আকবরের বাঁশিতে রয়েছে এক জাদুকরি ধ্বনি। আলী আকবর এখন বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে বাঁশি বাজিয়ে মানুষের মন জয় করে মানুষের কাছে বাঁশি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। সে কারও কাছ থেকে টাকা চেয়ে নেয় না । এছাড়া কেউ তার বাঁশি বাজানোতে সন্তুষ্ট হয়ে টাকা দিতে চায় তাহলে তার বিনিময়ে সে তাকে একটি বাঁশি দিয়ে দেয়। প্রতিটি বাঁশির মূল্য হচ্ছে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ টাকা। আলী আকবর প্রতিদিন প্রায় ৮শ’ থেকে ৯’শ টাকার বাঁশি বিক্রি করতে পারে। বর্তমানে ভুলতা এলাকা একটি ভাড়া করা বাড়িতে আলী আকবর বসবাস করছেন। আলী আকবর বলেন, আমি প্রতিবন্ধী বলে নিজেকে কখনও ছোট মনে করিনি। আমার প্রতিবন্ধিতা আমার দুর্বলতা নয় বরং এটাই আমার অস্ত্র। আলী আকবরের মতো যারা প্রতিবন্ধী তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তার মতো যারা প্রতিবন্ধী আছে তাদের ভিক্ষা না করে আমার মতো কোন না কোন কাজ করা উচিত। জীবনে চলতে গেলে অনেক বাধাবিপত্তি আসবে তাই বলে থেমে থাকলে চলবে না।
×