ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বইমেলা ২০১৭

প্রকাশিত: ০৪:২১, ৪ মার্চ ২০১৭

বইমেলা ২০১৭

বই জ্ঞানের সবচেয়ে উপাদেয় মাধ্যম। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। জ্ঞানই যদি মুক্তি হয় তাহলে জ্ঞানার্জনের সর্বোত্তম মাধ্যম গ্রন্থ ও মানুষের মুক্তির দিশারী। আর এই লক্ষ্যমাত্রা নিয়েই প্রতিবছর নতুন বইয়ের বিরাট আয়োজনে গ্রন্থমেলার যে উৎসবমুখর আবেদন সেটাই দর্শনার্থীদের বিভিন্নভাবে প্রলুব্ধ করে। মুখরিত এই বর্ণাঢ্য আবহে দর্শকরা নিজেদের একাত্ম করে নেয়। যা নতুন বইয়ের প্রতি আগ্রহ আর আকাক্সক্ষায় পুরো পরিবেশকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যায়। বই হয়ে ওঠে আরও গ্রহণযোগ্য, পাঠের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম এবং প্রয়োজনীয় সম্পদ। নতুন বইয়ের সম্ভার পাঠককে যেমন প্রাণিত করে একইভাবে প্রকাশকদের নিয়ে যায় আনন্দঘন অনুভবে। বইমেলায় নতুন বইয়ের ভিড়ে মানসম্মত বই নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়। বর্তমানে লেখকরা নিজের অর্থায়নে পছন্দের প্রকাশনের মাধ্যমে যেভাবে বাজারে নতুন বই আনার প্রতিযোগিতায় নামেন তাতে ভাল বইয়ের সংখ্যা কিছুটা হলেও কমে। কারণ সব নতুন বই মান ধরে রাখতে পারছে না এটা যেমন ঠিক নয়, একইভাবে উদীয়মান লেখকরাও নিজেদের জায়গা তৈরি করতে ব্যর্থ সেটাও বলা যাবে না। তার পরেও বইমেলা মানেই হাজারো নতুন গ্রন্থের উৎসব আর আয়োজন। যা শুধুমাত্র মেলার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। যার রেশ চলতে থাকে সারা বছর। লেখকরা তাদের বছরের সঞ্চয় সৃষ্টিকর্ম নিয়ে অপেক্ষায় থাকেন যে কোন উৎসবে হাজির করার আগ্রহ নিয়ে। আর ভাষার মাসের বইমেলা অসংখ্য লেখকের প্রতীভাদীপ্ত মননের এক উজ্জ্বল অভিব্যক্তি। ফলে সৃজনশীল লেখকের সঙ্গে থাকে আগ্রহী পাঠক এবং ভক্তবৃন্দ। প্রথমেই সবার দৃষ্টি পড়ে প্রতিষ্ঠিত এবং নন্দিত লেখকদের প্রতি। যাদের কাছ থেকে নতুন কিছু পাওয়ার আশায় পাঠকরা অপেক্ষা করতে থাকে। জ্ঞানপ্রিয় লেখকদের বই মেলায় আসতেই শেষ হয়ে যায়। আবার উদীয়মান এবং নতুন প্রজন্মে লেখা গ্রন্থ ও পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। নতুন পাঠক তৈরিতে মেলায় আসা নতুন বইগুলো গুরুত্ব পায়। ফলে সম্ভাবনাময় তরুণ লেখকরাও আপন বৈশিষ্ট্যে নিজেদের স্থান করে নেয়। পাঠক তৈরি করা এবং তরুণ প্রজন্মের সৃষ্টিকর্ম দুটোই একে অপরের সহায়ক ও পরিপূরক। এবারের বইমেলায় অনেক বই বিক্রি হলেও মানসম্মত বইয়ের সংখ্যা মাত্র এক-চতুর্থাংশ। অর্থাৎ প্রায় সাড়ে তিন হাজার প্রকাশিত নতুন বইয়ের মধ্যে মাত্র সাড়ে আট শ’ বই তার গুণগত মান বজায় রাখতে পেরেছে। গত বছরের তুলনায় এই বছর বই বিক্রি হয়েছে বেশি। প্রতিবছর এ সংখ্যা হয়তবা আরও বাড়বে। কিন্তু পাঠকের ভাললাগা এবং মানসিক বিকাশের বিষয়টিও সামনে আসা জরুরী। বিভিন্ন স্টলের সামনে সারিবদ্ধ দর্শনার্থীদের ভিড়, লেখকদের আলাপচারিতা এবং বই কেনার যে আনন্দ-উৎসব সব মিলিয়ে মেলায় তৈরি হয় এক মনোমুগ্ধকর আমেজ। পাঠকরা আবেগতাড়িত হয়, শিশু-কিশোরদের কলকাকলিতে মুখরিত মেলা প্রাঙ্গণ পুরো পরিবেশকে মোহনীয় করে তোলে। দর্শকের উপচে পড়া ভিড়ে এই জনাকীর্ণ প্রাঙ্গণটির আনন্দ এবং মুগ্ধতার মাত্রা ম্লান হয় না বরং অনাবিল এক অনুভূতিতে প্রাণ-মন সিক্ত হয়। এসব আবেগ আর অনুভব মেলায় সরাসরি উপস্থিত না হলে উপলব্ধি করা যায় না। এত বড় আয়োজনের ত্রুটিবিচ্যুতি কিংবা ভুল-ভ্রান্তি থাকলেও মেলার মূল উদ্দেশ্য যে সফল হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আগামী মেলায় আরও নতুন কিছু যোগ করা যায় কিনা সেটাও ভেবে দেখা প্রয়োজন।
×