ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের ঠেঙ্গারচরে যেতে বাধা দিচ্ছে আরএসও ক্যাডাররা

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ৪ মার্চ ২০১৭

রোহিঙ্গাদের ঠেঙ্গারচরে যেতে বাধা দিচ্ছে আরএসও ক্যাডাররা

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ রোহিঙ্গাদের হাতিয়ার ঠেঙ্গারচরে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সাধারণ রোহিঙ্গারা রাজি। তবে বাধা দিচ্ছে আরএসও ক্যাডাররা। নিজ ভিটামাটি ছেড়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানায়, তাদের যেখানে নিয়ে রাখা হোক, এতে তাদের আপত্তি নেই। যেহেতু তারা নিজ মাতৃভূমিতে বসবাস করেও যেন প্রবাসী। দেশটির সরকার তাদের নাকরিকত্ব কেড়ে নিয়ে স্বাধীনভাবে চলাচলের ওপর কড়াকড়ি আরোপ এমনকি বিয়ে-সাদিতে পর্যন্ত নিজস্ব মত প্রকাশ বা পছন্দ-অপছন্দ করতে দেয় না। তাই তারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পর বাংলাদেশ সরকার তাদের আশ্রয় দিয়ে বড়ই মানবতার পরিচয় দিয়েছে। রোহিঙ্গা নারী-পুরুষরা বলেন, সরকারী সিদ্ধান্তকে আমরা সম্মান জানাই। সেহেতু সরকার যেখানে নিয়ে রাখুক, এতে আপত্তি নেই বলে জানিয়েছে সাধারণ রোহিঙ্গারা। এদিকে রোহিঙ্গাদের ঠেঙ্গারচরে নিয়ে যাওয়া পরিকল্পনা সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপ উল্লেখ করে স্থানীয়রা জানান, রোহিঙ্গারা রাজি থাকলেও আরএসওসহ আরাকান বিদ্রোহী গ্রুপগুলো ঠেঙ্গারচর বিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছে। এ লক্ষ্যে কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তিকে মোটা অঙ্কের টাকার মিশন নিয়ে মাঠে নামিয়ে দিয়েছে ষড়যন্ত্রকারী ওই চক্র। তারা কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গাদের ঠেঙ্গারচর নিয়ে যাওয়া ঠেকাতে অপতৎপরতা চালাচ্ছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে স্বার্থান্বেষী মহল রোহিঙ্গা মাঝিদের মাধ্যমে ক্যাম্প অভ্যন্তরে ব্যাপক অপপ্রচার চালানো শুরু করেছে। রোহিঙ্গারা জানায়, সরকার তাদের এক জায়গায় নিয়ে গেলে সেখানে তাদের জন্য যথেষ্ট সুযোগ সৃষ্টি হবে। শিশু-কিশোরদের পড়া-লেখার সুযোগ সৃষ্টিসহ বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর কথায় কান দিতে হবে না। সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গাদের দিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল বিভিন্ন ধরনের অপরাধ কর্মকা- চালিয়ে আসছে। রোহিঙ্গাদের নামে সাহায্য এনে কয়েকজন আরএসও নেতা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা লুটেপুটে খাচ্ছে। স্থানীয় প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি ও রোহিঙ্গা নেতাদের কাছে বিষয়টি মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোহিঙ্গাদের ঠেঙ্গারচরে নিয়ে গেলে তাদের অবৈধ ব্যবসা ও অপরাধমূলক কর্মকা-ে ভাড়াটে হিসেবে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। হাতছাড়া হতে পারে রোহিঙ্গা বস্তির নামে দখলে নেয়া কোটি কোটি টাকার বনজ সম্পদ। এ কারণে ঠেঙ্গারচরে না যেতে সাধারণ রোহিঙ্গাদের প্ররোচনা দিচ্ছে ওই ধান্ধাবাজরা। সচেতন মহল সরকারের এ মহতী পরিকল্পনা বাস্তবায়নকল্পে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা দিলেও রোহিঙ্গাদের দিয়ে ফায়দা হাসিলকারীরা নানাভাবে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে ক্যাম্প ও বস্তিতে। সূত্র আরও জানায়, কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলায় বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের পুঁজি করে তাদের কোটি টাকার স্বার্থ জড়িত আছে। বিভিন্ন এনজিও সংস্থায় চাকরিরত প্রতিনিধিরা তাদের চাকরি হারানোর ভয়ে রোহিঙ্গাদের ঠেঙ্গারচরে না যেতে উস্কে দেয়ার চেষ্টা করছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। হাতিয়ার ঠেঙ্গারচর বসবাসের উপযোগী নয়, এক কিনারায় নিয়ে গেলে স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ ও সুযোগ-সুবিধা থাকবে না ইত্যাদি আখ্যা দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা চালাচ্ছে ষড়যন্ত্রকারীরা। সাবেক সাংসদ ও টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী জনকণ্ঠকে বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন-পুনর্বাসন কাজে দেশী এবং বিদেশী এনজিও সংস্থা ও কতিপয় ধান্ধাবাজ ব্যক্তি এ পর্যন্ত বাধা সৃষ্টি করে আসছে। এবারেও সরকারের সিদ্ধান্ত যাতে বাস্তবায়ন না হয়, সেই জন্য এনজিও এবং বিশেষ মহল ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, টেকনাফকে অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং পর্যটন জোনে রূপান্তর করতে রোহিঙ্গাদের ঠেঙ্গারচরে স্থানান্তর অবশ্যই করতে হবে। জানা গেছে, সরকার টেকনাফ তথা কক্সবাজারকে অর্থনৈতিক ও পর্যটন কেন্দ্রে রূপ দিতে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। পাশাপাশি অপরাধ প্রবণতা রোধ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে হাতিয়ার ঠেঙ্গারচরে পুনর্বাসনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সূত্রমতে ঠেঙ্গারচরে প্রায় ১০ লক্ষ রোহিঙ্গা বসবাস করতে পারবে। সরকার টেকনাফ উপত্যকা থেকে রোহিঙ্গাদের সরানোর জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে বনভূমির ক্ষতি, পর্যটন ব্যবসায় বিঘœ, নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে কক্সবাজার অঞ্চল থেকে তাদের নোয়াখালীর ঠেঙ্গারচরে স্থানান্তর যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছেন বিজ্ঞ মহল। উল্লেখ্য কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও বান্দরবান জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে চড়িয়ে ছিটিয়ে প্রায় ৫ লাখেরও বেশ রোহিঙ্গা বসবাস করছে। এছাড়াও গত নবেম্বর-ডিসেম্বরে নতুন করে পালিয়ে এসেছে প্রায় ৮০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা।
×