ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জামায়াত থেকে আলাদা না হওয়ায় সারাবিশ্বে বন্ধুহীন বিএনপি

প্রকাশিত: ০৯:০২, ৩ মার্চ ২০১৭

জামায়াত থেকে আলাদা না হওয়ায় সারাবিশ্বে বন্ধুহীন বিএনপি

সংসদ রিপোর্টার ॥ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার দেশকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার জঙ্গী গোষ্ঠীকে নির্মূল করে দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে এনেছে। তাই দেশে এখন শান্তি ও স্বস্তি বিরাজ করছে। জামায়াত থেকে আলাদা না হওয়ায় বিএনপি সারাবিশ্বে বন্ধুহীন হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকার দলীয় সংসদ সদস্যরা এ কথা বলেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার আলম বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিএনপিকে জামায়াত থেকে আলাদা হওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু তারা জামায়াত থেকে আলাদা না হওয়ায় সারাবিশ্বে এখন বন্ধুহীন। তিনি বলেন, বিগত নির্বাচন বানচালের চেষ্টা হয়েছে। ক্ষমতা দখলের জন্য বিদেশের পত্রিকায় মিথ্যাচার করা হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী এটা করেছেন। তার দলের নেতারা দেশে বিনিয়োগ বন্ধের অনুরোধ জানিয়েছেন। আজ সেই দলটি দেশে-বিদেশে সন্ত্রাসী দল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। আগে যুক্তরাষ্ট্রের আদালত একই রায় দিয়েছিল। এখন কানাডার আদালতও তাই বলেছে। তাদের এই দেশে রাজনীতি করার কোন অধিকার নেই। কূটনৈতিক ক্ষেত্রে সরকারের ব্যাপক সফলতার দাবি করে তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে বিভিন্ন দেশে আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু এখন আর তারা সমালোচনা করেন না। আমরা কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে বিচার ও রায় কার্যকর করার যৌক্তিকতা তুলে ধরতে পেরেছি। তিনি বলেন, জঙ্গী দমন, সন্ত্রাস নির্মূল, নারীর উন্নয়ন, জনগণের ক্ষমতায়ন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সমালোচনা করে বলেন, যুদ্ধের সময় আমার বয়স ও ড. ইউনূসের বয়স ৪০ বছরের নিচে ছিল। আমি যুদ্ধে গেলাম, আর উনি কোথায় গেলেন? এখন ওনার বয়সের যারা বাংলাদেশে নসিহত করেন তারা তখন কোথায় ছিলেন? তিনি বলেন, একজন বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে আমরা বাংলাদেশ পেতাম না। একজন শেখ হাসিনার জন্ম না হলে বাংলাদেশ এই অগ্রগতির মুখ দেখতে পারত না। বঙ্গবন্ধু হত্যা ও যুদ্ধাপরাধের বিচার হতো না। দেশের ৬৮ হাজার গ্রামে বিদ্যুত জ্বলে উঠত না। তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার যে মনোযোগ দিয়েছে, সেটা অন্য কোন সরকার দিতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু ৩৬ হাজার স্কুল জাতীয়করণের পরে, তার কন্যাই আবার ২৬ হাজার ১৯৩টি স্কুল জাতীয়করণ করল। জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, জিয়া ক্যু-পাল্টা ক্যু করে ১ হাজার ২শ’ সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে। আর খালেদা জিয়া ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন। ২০১৫ সালে আবার দেশে আন্দোলনের নামে হত্যাকা- ও জ্বালাও-পোড়াও করেছে। হকার উচ্ছেদের সমালোচনা করে মোঃ ইসরাফিল আলম বলেন, স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে পণ্য পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে হকারদের ঐতিহাসিক ও অসাধারণ অবদান রয়েছে। এটা কোন অবৈধ পেশা নয়। জিডিপিতে তাদের অবদান রয়েছে। এখন তাদের অমানবিকভাবে বুলডোজারদের দিয়ে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পুনর্বাসন ছাড়া কোন হকার উচ্ছেদ করা যাবে না। তিনি বলেন, হকার উচ্ছেদ করলে চুরি-ডাকাতি বেড়ে যাবে। তিনি অবৈধ শ্রমিক ধর্মঘট আহ্বানের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে ব্যাপক অনিয়ম চলছে উল্লেখ করে তিনি এ অনিয়ম খতিয়ে দেখার জন্য একটি সংসদীয় টিম গঠনের দাবি জানান। নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বলেন, আমরা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মতো ক্যান্টনমেন্ট থেকে আসিনি। জনগণের ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছি। সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-ের খতিয়ান তুলে ধরে হাবিবুর রহমান মোল্লা বলেন, বিএনপি দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বানাতে চেয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে তুলেছেন। মোঃ আব্দুল্লাহ বলেন, বিদ্যুত উৎপাদনে সরকার নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। এর মাধ্যমে দেশকে অন্ধকার থেকে আলোতে আনা সম্ভব হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোটের আমলে দেশ অন্ধকারে ছিল। আজও যারা রামপাল নিয়ে আন্দোলন করছে তারা দেশকে অন্ধকারের দিকে ফিরিয়ে নিতে চায়। আলোচনায় অংশ নিয়ে বিমানের দুরবস্থার কথা তুলে ধরেন জাতীয় পার্টির মাহজাবীন মোর্শেদ। জাতীয় সংসদের এ অধিবেশনে এই আলোচনাকালে প্রথমে সভাপতিত্ব করেন স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও পরে সভাপতিম-লীর সদস্য এ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু। আলোচনায় আরও অংশ নেন মোর্শেদ আলম, হোসনে আরা বেগম ও নাজিম উদ্দিন আহমেদ।
×