ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কবিতা

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ৩ মার্চ ২০১৭

কবিতা

আমি ও একটি পাখি মা বলতেন, মেয়েদের পাখি হতে নেই। তবুও হয়েছি, কখনো বুক খোলা মাঠ। কখনো বা বন মোরগী। চৌকাঠ ডিঙালেই গোমতী নদীর চিৎকার। সন্ন্যাস ধর্মের ব্রত নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বটবৃক্ষের ছায়া কেবলি দীর্ঘায়িত হতো বিকেলবেলা। আর রাত্রিতে নিশাচর পাখির ডাক শুনলেই ইকথিয়া-ারের পালায়নে বুঝে নিতাম আমার শরীরটাই কেবল নারীচিহ্ন বহনকারী। ভেতরবাড়ির বন্য স্বভাবজাত সত্তার ঘুমপাড়ানি গানের প্রত্যাখ্যান ক্রমেই প্রিয় হয়ে উঠছিল ইকথিয়া-ারের কাছে। মৃত্যুর পূর্বে মরতে চাইনি দেখে কাঠের কফিনে জমিয়েছি ছাই ও অন্ধকার। এরচেয়ে অনেক বেশি অন্ধকার জমেছিল রূপকথার মাঠে। ইকথিয়া-ার বলত, মাঠের চারপাশের মেয়েগুলো জন্মান্ধ ও বধির। তারা কোনদিন শোনেনি, দেখেনি বুকের ঠিক মাঝখানে একটি হিজল ও খেজুর গাছ সৃষ্টির প্রথম থেকেই কাঁদছিল। নূহের অন্ধ জাতির মতো ওরা ঘুমিয়েছিল ঘুণপোকা হয়ে। প্রথমে আমরাও অন্ধ ছিলাম। আমাদের ডানা ছিল না। অন্ধত্ব দূর হতে ডানাযুক্ত আলোর পাখিরা ছুটে গেলো বটবৃক্ষের কাছে। নদী তখন বুকের আঁচল ফেলে ঘুমে মগ্ন। সারা মাঠ জুড়ে জোস্নার প্রণয় সঙ্গীতে অনেক পাখির ওড়াউড়ি দেখে ইকথিয়া-ার বলেছিল, আবাবিল। সে জানত না, আবাবিল পাখিরও মৃত্যু হয়েছিল ঘুমঘরে, একেবারে আমাদের মতো। ** দূরত্ব ও আমাদের মগ্নতা দূরত্ব বিষয়ক দীর্ঘ রচনা শেষ হওয়ার পর অনুধাবন করেছিলাম বিয়োগাত্মক নাটক তত মন্দ নয় যতটা সেলাইবিহীন ক্ষত। অসমাপ্ত বারান্দায় চাইলে বসিয়ে দেয়া যায় সমুদ্রঢেউ। দক্ষ হাত জানে কি করে সরিয়ে দিতে হয় স্তূপীকৃত ছাই। সেপ্টেম্বরের পর অতিথি পাখি আসেনি আর করতলে। শোকসঙ্গীতে মনে পড়ে আতা গাছের জন্ম ও মৃত্যুকথা। আমরা মৃত্যুর অধিক শোকপাথর নিয়ে মগ্ন থাকি দূরত্ব ও চৈতন্যে। বৃষ্টিফুল ১ সমস্ত শহর থেকে কে যেন মুছে দিয়ে গেছে হাওয়াই মিঠাই রঙ! রাতের অন্ধকারে স্কার্টের রঙগুলোও চুরি হয়ে যায়। একবার রঙের পেছনে দৌড়াতে থাকা কালো ঘোড়াগুলো হারিয়ে যাওয়ার পর বুনে দিয়েছিলাম লাল গোলাপ। কিন্তু বর্ণবাদী রোদ্দুরে আমরা কেবল বেঁচে থাকি বিয়োগফল নিয়ে। ২ শোকাচ্ছন্ন সন্ধ্যা নয় তোমাকে দিলাম শিশিরবিন্দু। জানি, স্পর্শের সুখ না পেলেও এখন সকালটা ভিজে যাবে আদ্যোপ্রান্ত। হয়তো তোমার হাতে নেই এ শহরের রোদ ও ছায়াসমগ্র। তাই মেঘমুক্ত আকাশে ছড়িয়ে দিলাম কয়েকটি বৃষ্টিফুল।
×