ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সৃষ্টিশীল প্রজন্মের শুদ্ধ জমিন

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ৩ মার্চ ২০১৭

সৃষ্টিশীল প্রজন্মের শুদ্ধ জমিন

তথ্যানুযায়ী, স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে উল্লেখ করার মতো প্রথম ছোটদের পত্রিকা সম্ভবতঃ ‘টাপুর-টুপুর’। এখলাস উদ্দীন আহমেদ সম্পাদিত এই পত্রিকাটি লেখার মানে, ছাপায়, কাগজে, রঙে এখনও অদ্বিতীয়। ‘টাপুর-টুপুর’-এর সমান্তরালে যে পত্রিকাটির নাম উচ্চারিত হবে তা হচ্ছে রফিকুল হক দাদুভাই সম্পাদিত ‘কিশোর বাংলা’। ‘কিশোর বাংলা’ কনটেন্টে সমৃদ্ধ হলেও এর ফরমাট, কাগজ, রঙ ছিল একেবারেই অনাকর্ষণীয়। এই পত্রিকাটি বের করার ক্ষেত্রে পেশাদারি মনোভাব (বাণিজ্যিক অর্থে নয়) কাজ করেনি। তাই অপেক্ষাকৃত কমবয়সী শিশুদের এই পত্রিকাটি আকর্ষণ করতে পারেনি। সত্তরের দশক শেষ হওয়ার পর এই দুই পত্রিকাকে আর চোখে পড়েনি। শিশু একাডেমির পত্রিকা ‘শিশু’ আর ডিএফপির পত্রিকা ‘নবারুণ’ যাত্রা শুরু করে সত্তরের দশকেই। এদের মধ্যে ‘নবারুণে’র কাগজ আর ছাপা ‘শিশু’র চেয়ে ভালো হলেও ‘শিশু’র কনটেন্ট ছিল অপেক্ষাকৃত সমৃদ্ধ। জানা যায়, নিয়মিত পত্রিকা হিসেবে ‘নবারুণ’ দ্রুত পটল তুললেও ‘শিশু’র সুদিন থাকে আঁশির দশকের শেষ ভাগ পর্যন্ত। ‘নবারুণ’ ও ‘শিশু’ এখনও প্রকাশিত হয়, সম্ভবতঃ ‘শিশু’ বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘদিন ধরে একটানা প্রকাশিত হওয়া ছোটদের পত্রিকা। ছোটদের জন্য স্বতন্ত্র পত্রিকার চেয়েও আকর্ষণীয় ছিল দৈনিক পত্রিকার সাপ্তাহিক ছোটদের পাতা। ‘ঝিলিমিলি’, ‘কচি-কাঁচার আসর’, ‘খেলাঘর’, ‘গোল্লাছুট’, ‘চাঁদের হাট’, ‘মুকুলের মাহফিল’ এগুলো শুধু সাহিত্য-সাপ্লিমেন্টের নামই না বরং এক সময়ে দেশব্যাপী ছোটদের শক্তিশালী সংগঠনেরও নাম। অতীতে সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে পত্রিকায় ছোটদের পাতার জন্য আমাদের অধীর আগ্রহ ছিল। বাসায় যেহেতু একটির বেশি দৈনিক পত্রিকা রাখা হয় না, তাই বিভিন্ন পত্রিকার ছোটদের পাতা বদলা-বদলি করে পড়ার রীতিও ছিল। বর্তমানে ফেসবুক কিংবা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সর্বগ্রাসী আগ্রাসনের যুগে ছোটদের হাতে তুলে দেয়ার মতো কোন পত্রিকা আর অবশিষ্ট নেই। আজকের ছোটরা যখন বড় হবে তখন তারা তাদের শৈশব নিয়ে আলোচনার সময় কোন পত্রিকার নামই কী মনে করতে পারবে না? তাই ইলেকট্রনিক মিডিয়া বা ইন্টারন্টের যুগে কোমলমতি শিশুদের কথা মাথায় রেখে এ প্রজন্মের ক্ষুরধার সুপরিচিত তরুণ কবি ও শিশু সাহিত্যিক আল জারিরী তার চিন্তাশক্তিকে কাজে লাগিয়েছে। ছোটদের চিন্তার জগৎকে আরও সমৃদ্ধশালী করতে আল জারিরী সম্পাদনা করেছেন সৃষ্টিশীল ছোটদের পত্রিকা ‘লাটিম’। ‘লাটিম’ নিঃসন্দেহে শিশুদের মননকে জাগ্রত করতে সক্ষম হবে। এ পত্রিকা বা লিটলম্যাগটি হাতে নিয়েই বুঝলাম, ম্যাগটির ওজন যেমন আছে ভেতরে জ্ঞানের পরিধিও ব্যাপক। ‘লাটিম’ সময়ের প্রয়োজনে প্রকাশিত একটি শিশুতোষ পত্রিকা বা লিটল ম্যাগ। নজরকাড়া অলংকরণে সমৃদ্ধ ৪৮ পৃষ্টার এ পত্রিকাটিতে ১৫টি বিভাগ স্থান পেয়েছে। প্রত্যেকটি বিভাগ সময়োপযোগী-শিশুদের শিক্ষামূলক বিষয়ে ভরা। বিভাগগুলোর নাম উল্লেখ করা যেতে পারে- প্রবন্ধ, গল্প, ছড়া-কবিতা, অভিমত, কেমন ছিলেন তারা, আবিষ্কার, থাকবো নাকো বদ্ধ ঘরে, জানা অজানা, তোমরা যারা স্বপ্ন আঁকো, স্কুল তারকা, খেলা, ছবির গল্প, খোলাডাক, বই আলোচনা এবং শিশুতোষ পত্রিকাতে সম্পূর্ণ নতুন সংযোজনও ‘নামকাব্য’। সূচনা সংখ্যাটিতে একটি মাত্র প্রবন্ধ। আর প্রবন্ধটি লিখেছেন তরুণ কবি-গদ্যকার ইলিয়াস বাবর। তার ‘শিশুসাহিত্য : সময়ের ভাবরেখা’ নামক প্রবন্ধে শিশুসাহিত্যের স্বরূপ উঠে এসেছে চমৎকারভাবে। এ সংখ্যাটিতে ছবির গল্পসহ মোট গল্প আছে ৭টি। প্রতিটি গল্প অসাধারণ-শিক্ষামূলক। পড়ামাত্রই শিশুদের মগজে সৃষ্টিজগৎ বা পরোপকার সম্পর্ক গেঁথে যাবে। এত সুন্দর যারা লিখেছেন- বিএম বরকতউল্লাহ, আলী আসকর, মোহছেন ঝর্ণা, রহিমা আক্তার মৌ, আমির সোহেল, ইদ্রিস রিয়াদ এবং আরমানউজ্জামান। এ সংখ্যায় যারা মজার মজার ছড়া-কবিতা লিখেছেন তারা হলেন- ইকবাল বাবুল, মিজানুর রহমান শামীম, এমরান চৌধুরী, এয়াকুব সৈয়দ, সুফিয়ান আহমদ চৌধুরী, ওবায়দুল সমীর, রমজান আলী মামুন, মানসুর মুজাম্মিল, নূরুজ্জামান ফিরোজ, গোলাম নবী পান্না, তৌফিকুল ইসলাম চৌধুরী, সোহেল মল্লিক, সনজিত দে, মোস্তফা হায়দার, সোহেল বীর, সমীর ঘোষ, হামিদা আনজুমান, চন্দ্রশিলা ছন্দা, তামান্না সঞ্চিতা, শামীম খান যুবরাজ, শহিদুল আলীম, সাজিদ মোহন, আমিন আফসারী, আবু ইউছুফ সুমন, মজুমদার হানিফ, রোশনী ইয়াসমীন, ইসলাম তরিক, আলমগীর কবির, শামীম হাসনাইন, কানিজ ফাতিমা, ওমর ফারুক নাজমুল, আমিন মুহাম্মদ, সৈয়দ শরীফ এবং জাহিদ সজল। প্রতিটি ছড়া-কবিতায় স্বদেশপ্রেম, প্রকৃতিপ্রেম, স্বজনপ্রীতি, হাসি ও নানা স্মৃতিকথায় ভরপুর। ছড়া-কবিতাগুলো যতই পড়া হয় ততই মন ছুঁয়ে যায়- বারবার পড়তে ইচ্ছে করে। এ ছাড়া দুজন খুদে বন্ধুর আঁকা ছবি ছাপা হয়েছে খুব যতœ সহকারে। আরও আছে সৃষ্টিশীল শিশু-কিশোরদের কচি হাতের লেখা ১টি গল্পসহ ৫টি ছড়া। কচি মনের কচি হাতে যারা গল্প ও ছড়া লিখেছে তারা হলো- সুরাইয়া আক্তার (চৈতী), জান্নাতুল ফেরদৌস, উদিতা মহাজন পূজা, জান্নাতুল মাওয়া (নিহা), মুহাম্মদ তাফহীমুল ইসলাম ও আবদুল্লাহ আল মাহমুদ হৃদয়। ‘লাটিম’র পাতায় পাতায় রয়েছে ফারজানা পায়েলের আঁকা নজরকাড়া সব ছবি। এমন একটি ছোটদের পত্রিকা বর্তমান সময়ে সত্যিই পাঠকের জন্য পরম পাওয়া। সম্পাদকের শিল্পীত রং-তুলিতে আঁকা মনকাড়া প্রচ্ছদসমৃদ্ধ ৪৮ পৃষ্ঠার ‘লাটিম’ সূচনা সংখ্যার দাম মাত্র ৩০ টাকা। মিজান মনির
×