ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দুই ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচী পালন

গ্যাসের দাম কোনভাবেই বাড়ানো যাবে না ॥ মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৩ মার্চ ২০১৭

গ্যাসের দাম কোনভাবেই বাড়ানো যাবে না ॥ মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, দেশে এমন কোন অবস্থার সৃষ্টি হয়নি যে গ্যাসের দাম বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, যেখানে গ্যাস কোম্পানিগুলো মুনাফা করছে সেখানে কোনভাবেই দাম বাড়ানো যাবে না। সরকার ক্ষমতা চিরস্থায়ী করবার জন্য, একদলীয় শাসনকে পাকাপোক্ত করার জন্য একের পর এক গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধিসহ সরকারের গণবিরোধী সব কর্মকা-ের বিরুদ্ধে জনগণকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে দলের পক্ষ থেকে আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ানো যাবে না। জনগণের একটাই দাবি গ্যামের দাম কমাতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, বিশিষ্টজনেরাও বলেছে, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিতে দেশের অর্থনীতির বিরূপ প্রভাব পড়বে। এই সরকারকে জনগণের কাছে কোন জবাবদিহি করতে হয় না। সে কারণেই তারা একের পর এক গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেছে। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচী সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে চলে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। এ সময়ে বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মী অবস্থান কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করে। এ সময় দলের পক্ষ থেকে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে লিফলেটও বিতরণ করা হয়। দুই পৃষ্ঠার লিফলেটে উল্লেখ করা হয় ‘আসুন, গ্যাসের দাম বৃদ্ধির গণবিরোধী সরকারী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই’। অবস্থান কর্মসূচীতে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, মীর নাসির, আবদুল আউয়াল মিন্টু, জয়নাল আবেদীন, আবদুল মান্নান, আহমেদ আজম খান, এ জেড এম জাহিদ, নিতাই রায় চৌধুরী, প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অবস্থান কমসূচীতে অংশ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব আরও উল্লেখ করেন, আমরা এই অবস্থান কর্মসূচীর মাধ্যমে সরকারকে বলতে চাই, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা যাবে না, গ্যাসের মূল্য কমাতে হবেÑ এটা সকলের দাবি। এ ধরনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীর মাধ্যমে জনগণকে উজ্জীবিত করে তুলতে হবে। সরকারের গণতন্ত্রবিরোধী ও রাষ্ট্রবিরোধী যেসব পদক্ষেপ তার বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। এ সময় গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার গণবিরোধী ও অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গ্যাস কোম্পানিগুলো এ থেকে ব্যবসা করছে। এই সরকারকে জনগণের কাছে কোন জবাব দিতে হয় না। এ কারণে তারা এই অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তগুলো নিচ্ছে। ফখরুল বলেন, এই সরকার জনগণের সরকার না। নতজানু হয়ে তারা বিভিন্ন চুক্তি করছে। এগুলো বাংলাদেশের মানুষের পক্ষে না, বিপক্ষে যাচ্ছে। আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, বিএনপি ও খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে কোনভাবেই নির্বাচন এ দেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। জনগণ তা প্রতিহত করবে। বিএনপি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে নিরপেক্ষ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য এ সরকারকে বাধ্য করব। পরিবহন ধর্মঘটের বিষয় উল্লেখ করে বলেন, আপনারা দেখেছেন পরিবহন ধর্মঘট ছিল সরকারের সাজানো। গত মঙ্গলবার বুধবার কী ‘নাটক’ তারা দেখালো। সরকারের মন্ত্রী উস্কানি দিয়ে একটা ধর্মঘট করে জনগণকে যেমন কষ্ট দিয়েছেন, তেমনি একজন শ্রমিকেরও মৃত্যু হয়েছে। এই সরকার প্রতিটি ক্ষেত্রে জনজীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। এ সময় তিনি বলেন, বিরোধী দলকে সমাবেশ ও কথা বলতে না দিয়ে সরকার গণতন্ত্রের পরিসর সংকুচিত করে দিয়েছে। নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে বলেও জানান মির্জা ফখরুল। অবস্থান কর্মসূচীতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। সাক্কুকে ২০ দলের সমর্থন ॥ এদিকে আসন্ন কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপিদলীয় প্রার্থী মনিরুল ইসলাম সাক্কুকে সমর্থন দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ২০-দলীয় জোট। একই সঙ্গে এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদকে ২০-দলীয় জোটের পক্ষ থেকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার জোটের শরিক দলগুলোর মহাসচিব পর্যায়ের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে বিএনপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি উল্লেখ করা হয়েছে। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে বৈঠকে জাতীয় পার্টির (বিজেপি) আবদুল মতিন সাউদ, জাতীয় পার্টির (জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, ইসলামী ঐক্যজোটের আবদুল করিম, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, খেলাফত মজলিশের শফিকউদ্দিন, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, বাংলাদেশ ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভূইয়া, কল্যাণ পার্টির এম এম আমিনুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। কম বয়সে বিয়ের বিশেষ বিধান বাতিল চায় বিএনপি ॥ বিশেষ ক্ষেত্রে বাল্যবিয়ের অনুমতি প্রদান করে সংসদে পাস হওয়া ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ বিল-২০১৭’-এর ওই বিধান সংশোধনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে এ দাবি জানান। বিবৃতিতে তিনি বলেন, পূর্বের আইনানুযায়ী মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৮ বছর এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে ২১ বছর বয়সসীমা সঠিক ছিল। এখানে কোন বিশেষ প্রেক্ষাপট বিধির প্রয়োজন ছিল না। দেশের মানুষ মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৮ ও ছেলেদের ক্ষেত্রে ২১ বছর বিবাহের ন্যূনতম বয়স মেনে নিয়েছিল। এই আইন পাস করার মধ্য দিয়ে সরকার তার প্রতিক্রিয়াশীল চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটালো। তিনি বলেন, নারী ও শিশু অধিকারের অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টি করতে এ আইন করা হয়েছে। এই আইন দেশের সামাজিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করবে। বিএনপি মনে করে, কয়েক দশক ধরে, বিশেষ করে জিয়াউর রহমান নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করার পরে শিশু ও নারী অধিকারের ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। সেই অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টি করতে এ আইন। বাল্যবিয়ে বাংলাদেশের সামাজিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা।
×