স্টাফ রিপোর্টার ॥ দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ নেয়ার পর কর্মসংস্থান হওয়ায় কিশোর-কিশোরীদের মাসিক গড় আয় বেড়েছে প্রায় ৬ গুণ। এর পাশাপাশি তাদের মধ্যে সচেতনতা ও আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাওয়ায় শিশু বিয়ের হার ৬২ শতাংশ কমেছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত ‘দি পাওয়ার অব এ্যাপ্রেন্টিসশিপস’ শীর্ষক সেমিনারে এক গবেষণা-তথ্য উপস্থাপনায় এসব চিত্র তুলে ধরা হয়।
গবেষণার প্রাথমিক প্রকল্প হিসেবে ২০১২-২০১৫ সালে দেশের সাতটি জেলায় এ জরিপ কাজ শুরু হয়। জেলাগুলো হচ্ছে : ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, রাজশাহী, খুলনা, চট্টগ্রাম ও সিলেট। এতে প্রকল্প এলাকার ৫৭৩ জনের মধ্যে গবেষণা জরিপ পরিচালিত হয়। এর মধ্যে ২৮০ জন ব্র্যাক থেকে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। তথ্য বিশ্লেষণ করে বলা হয়, প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী কিশোরীদের মধ্যে শিশু বিয়ের হার ৬২ শতাংশ কম। এছাড়া ২০১৪-২০১৫ সালে ‘জীবন যাত্রার ওপর দক্ষতা প্রশিক্ষণের প্রভাব’ শীর্ষক দ্বিতীয় জরিপ পরিচালিত হয় ১৫ জেলায়। জেলাগুলো হচ্ছে : ঢাকা, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, রাজশাহী, রংপুর, বগুড়া, খুলনা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, সুনামগঞ্জ, ঝিনাইদহ ও যশোর। এতে ৪৪৪ জন ছিল দক্ষতা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। এতে দেখা যায়, যাদের মাসিক গড় আয় ছিল ১৬৬.৮৫ টাকা, প্রশিক্ষণের ৬ মাস পর তা বেড়ে দাঁড়ায় ২০৮৯.৪১ টাকা। অপরদিকে প্রশিক্ষণবিহীনদের গড় আয় ৩৭৫ টাকা থেকে বেড়ে হয় ১২৭০ টাকা। তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, দক্ষতার প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের গড় আয় বাকিদের তুলনায় ৬ গুণ বেড়েছে। পাশাপাশি প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের সঞ্চয়ের প্রবণতা প্রায় বেড়েছে ৭.৫ গুণ। ক্রয় ক্ষমতা ও সঞ্চয় বেড়ে যাওয়ায় তারা খাদ্যব্যয়ও ৯ শতাংশ বাড়াতে পেরেছে।
ব্র্যাক আয়োজিত এই সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব মিকাইল শিপার। তিনি দক্ষতা উন্নয়নে ২৩টি মন্ত্রণালয় ও ৩৫ বিভাগের মধ্যে সমন্বয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, আমরা দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রমকে একই ছাতার মধ্যে আনার চেষ্টা করছি। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আগামী ২/৩ মাসের মধ্যে একটা ‘স্কিল ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’ গঠন করা হবে। তিনি টেকসই উন্নয়নে সফলতা আনতে দক্ষতা উন্নয়ন, কৃষির আধুনিকায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকার ও ব্র্যাকসহ বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থাকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।
ব্র্যাকের স্ট্র্যাটেজি, কমিউনিকেশন্স এ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট কর্মসূচীর উর্ধতন পরিচালক আসিফ সালেহর সঞ্চালনায় সেমিনারে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ আরও গতিশীল করতে দীর্ঘমেয়াদী অংশীদারিত্বের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, বেসরকারী সংস্থা হিসেবে আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে। তাই এই কাজে সরকার এগিয়ে আসবে বলে আমরা আশা করছি।
দক্ষতা প্রশিক্ষণের ফলে অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব বিষয়ক দুটি গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন ব্র্যাকের গবেষণা ও মূল্যায়ন বিভাগের সিনিয়র রিসার্চ এ্যাসোসিয়েট অনিন্দিতা ভট্টাচার্য ও রেহনুমা রহমান।
এছাড়া স্কিলস ট্রেনিং ফর এ্যাডভানসিং রিসোর্স (স্টার) শীর্ষক পর্যালোচনা তুলে ধরেন ব্র্যাকের সিনিয়র ম্যানেজার জয়দীপ সিনহা রায়। উপস্থাপনায় তিনি বলেন, ২০১২ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ব্র্যাক স্টারের আওতায় ১৮ হাজার ৯০০ কিশোর-কিশোরীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এর মধ্যে ৫৭ শতাংশই নারী। এই কর্মসূচীর আওতায় ব্র্যাক ২০২০ সাল নাগাদ প্রায় ৫ লাখ কিশোর-কিশোরীকে প্রশিক্ষণ দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে।
সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) অশোক কুমার বিশ্বাস, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন পরিষদের কো- চেয়ারপার্সন সালাউদ্দিন কাশেম খান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম খোরশেদ আলম, ব্র্যাকের দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচীর পরিচালক তাহসিনা আহমেদ প্রমুখ।