ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কম খেলে কেন বেশি দিন বাঁচে

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৩ মার্চ ২০১৭

কম খেলে কেন বেশি দিন বাঁচে

কথায় বলে কম খেলে বেশি দিন বাঁচে। সেটা হয় এ জন্য যে কম খাওয়ার কারণে বুড়িয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া মন্থর হয়ে যায়। বার্ধক্যের লক্ষণগুলো দূর করার বা মুছে ফেলার নানা রকম পণ্য আছে যেমন মলম, লোশন ইত্যাদি। এগুলো উৎপাদনের জন্য শত শত কোটি ডলারের শিল্প নিয়োজিত। পণ্যগুলো মূলত পুল ময়েশ্চারাইজার। তবে এগুলো শুধু ত্বক পর্যন্ত গভীরতায় যেতে পারে, তার বেশি নয়। অথচ বার্ধক্য বা বুড়িয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা আরও গভীরেÑ কোষ পর্যায়ে ঘটে। বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন যে কম খেলে এই কোষ পর্যায়ের প্রক্রিয়াটি মন্থর হতে পারে। মলিকুলার এ্যান্ড সেলুলার প্রোটিওমিক্স সাময়িকীতে বার্ধক্যের ওপর সাম্প্রতিক এক গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। তাতে ক্যালরি কমিয়ে দেয়া হলে শেষের অভ্যন্তরে বুড়িয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ার ওপর কিভাবে তার প্রভাব এসে পড়ে সেটা এক পলক দেখার সুযোগ পাওয়া গেছে। গবেষকরা দেখেছেন যে কোষের প্রোটিন গঠনকারী উপাদান রিবোসেমের উৎপাদন ও ক্রিয়াকলাপ মন্থর হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বুড়িয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় মন্থর হয়। এই মন্থরতার কারণে রিবোসোমের উৎপাদন কমে যায় বটে তবে রিবোসোমগুলো নিজেদের সারিয়ে তোলার জন্য বাড়তি সময় পেয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের এক জৈবরসায়ন বিজ্ঞানী অধ্যাপক জন প্রাইস বলেন যে রিবোসোম হলো এক অতি জটিল ধরনের মেশিন। অনেকটা আপনার গাড়ির মতো। মাঝে মাঝে এর রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়। যে অংশগুলো সবচেয়ে দ্রুত ক্ষয়ে গেছে সেগুলো বদলানোর প্রয়োজন হয়। টায়ার পুরনো হয়ে বা ক্ষয়ে গেলে আপনি গোটা গাড়িটা ছুরে ফেলে দেন না বরং নতুন টায়ার কেনেন। টায়ার বদলানোটা সহজ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে রিবোসোম উৎপাদন মন্থর হয়ে যায় কেন? অন্তত ইঁদুরের ক্ষেত্রে এর জবাব হলো ক্যালরি উৎপাদন কমে যায় বলে। প্রাইস ও তার গবেষক দল এ ব্যাপারে দুই গ্রুপ ইঁদুরের ওপর পর্যবেক্ষণ চালান। একটি গ্রুপকে সীমাহীন খাবার খাওয়ার সুযোগ দেয়া হয়। অপর গ্রুপকে ৩৫ শতাংশ কম ক্যালরি গ্রহণে সীমাবদ্ধ রাখা হয়। তবে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি উপাদান তাদের যোগানো হয়েছিল। প্রাইস বলেন, ক্যালরি গ্রহণ সীমিত করা হলে প্রায় সমান্তরালভাবেই আয়ু বেড়ে যায়। তা থেকে এই উপসংহারে পৌঁছানো হয় যে কম খাবারের কারণে শরীরে যে জৈব রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে তাতে বুড়িয়ে যাওয়ার হার মন্থর হয়ে পড়ে। প্রাইসের দল যে এই প্রথম ক্যালরি ও আয়ুর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে দেখান তা নয়। তবে তারাই প্রথম দেখিয়ে দিল যে সাধারণ প্রোটিন সংশ্লেষণ মন্থর হয়ে যায়। উপরন্তু তারাই প্রথম যৌবন বৃদ্ধিকারক জৈব রাসায়নিক পরিবর্তনগুলোর পথ সুগম করতে রিবোসোমের ভূমিকা চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়। প্রাইস বলেন, সীমিত ক্যালরি গ্রহণকারী ইঁদুররা অধিকতর কর্মোদ্যমী হয় ও রোগব্যাধি তাদের কম হয়। তারা যে শুধু বেশি দিন বাঁচে তা-ই নয়, উপরন্তু তাদের শরীরের রক্ষণাবেক্ষণও ভাল হয়। তারা দীর্ঘদিন তারণ্যদীপ্ত থাকে। রিবোসোম গাড়ির মতোই ব্যয়বহুল ও গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো দেহকোষকে চালু রাখার জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিনের সব উৎপাদন করতে কোষের মোট এনার্জির ১০ থেকে ২০ শতাংশ ব্যয় করে। এই কারণে রিবোসোমের কাজের ত্রুটি দেখা দিতে শুরু করলে পুরো রিবোসোম ধ্বংস করে ফেলা বাস্তবসম্মত নয়। তবে নিয়মিত ভিত্তিতে রিবোসোমের এক একটি অংশ মেরামত করা হলে রিবোসোমগুলো আরও দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ মানের প্রোটিন উৎপাদন চালিয়ে যেতে থাকে যা অন্যথায় পারত না। এই উচ্চমানের প্রোটিন উৎপাদনের ফলে দেহকোষগুলো তথা গোটা শরীর সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে পারে। প্রাইস অবশ্য বলেছেন যে তাদের গবেষণায় কম ক্যালরি গ্রহণের সঙ্গে আয়ু বৃদ্ধির সম্পর্ক দেখা গেলেও মানুষের দীর্ঘদিন তারুণ্য ধরে রাখার আশায় কম ক্যালরি গ্রহণ শুরু করা উচিত নয়। কারণ বুড়িয়ে যাওয়া মন্থর করার কৌশল হিসেবে ক্যালরি সীমিত করার কাজটা মানবদেহে পরীক্ষা করে দেখা হয়নি। সূত্র : লাইফ সায়েন্স
×