ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অগ্নিঝরা মার্চ

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৩ মার্চ ২০১৭

অগ্নিঝরা মার্চ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অগ্নিঝরা মার্চের তৃতীয় দিন আজ। একাত্তরের এই দিনে একটি জনসভায় প্রথম স্বাধীনতার কথা বলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমি মরে গেলেও ৭ কোটি মানুষ দেখবে দেশ সত্যিকার স্বাধীন হয়েছে। হয়ত এটাই আমার শেষ ভাষণ। আমি যদি নাও থাকি আন্দোলন যাতে থেমে না থাকে, স্বাধীনতার আন্দোলন যাতে না থামে।’ পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই বঙ্গবন্ধু এদিনের জনসভায় স্বাধীনতার প্রসঙ্গটি এনেছিলেন। যদিও জোরালোভাবে তা উচ্চারিত হয় ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে। জনসভায় বঙ্গবন্ধু ‘স্বাধীনতা’র কথা বলায় উদ্বেলিত মানুষ ‘বীর বাঙালী অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর’, গ্রামে গ্রামে দুর্গ গড়, মুক্তিবাহিনী গঠন কর’ ইত্যাদি সেøাগানে রাজপথ প্রকম্পিত করে তোলে। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে যে আন্দোলন শুরু হয়, তার রেশ ছড়িয়ে পড়ে দেশের সর্বত্র। দিন যতই গড়াচ্ছিল স্বাধীনতার প্রশ্নে মুক্তিপাগল বাঙালী জাতির আন্দোলন ততই অগ্নিগর্ভ রূপ নিচ্ছিল। একদিকে বঙ্গবন্ধুর ডাকে অসহযোগ আন্দোলনে স্থবির গোটা বাংলা, অন্যদিকে পাকিস্তানের সামরিক জান্তারা কার্ফু দিয়েও আন্দোলন থামাতে পারছিল না। অনেকস্থানেই অহিংস আন্দোলন সশস্ত্র সংগ্রামে রূপ নিতে শুরু করে। একাত্তরের ৩ মার্চ পল্টনে ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগের উদ্যোগে এক বিশাল জনসভায় বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। নূরে আলম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় বঙ্গবন্ধুকে বাংলার স্বাধিকার আন্দোলনের সর্বাধিনায়ক ঘোষণা করা হয়। জনসভায় বক্তব্য রাখেন তোফায়েল আহমেদ, শ্রমিক নেতা আবদুল মান্নান, ডাকসু নেতা আবদুল কুদ্দুস মাখন। জনসভায় বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘দানবের সঙ্গে লড়াইয়ে যে কোন পরিণতিকে মাথা পেতে বরণের জন্য আমরা প্রস্তুত আছি। তেইশ বছর রক্ত দিয়ে এসেছি। প্রয়োজনবোধে বুকের রক্তে গঙ্গা বহাইয়ে দেব। তবু সাক্ষাত মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও বাংলার বীর শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করব না।’ এ জনসভা থেকে ৪ মার্চ থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন ৬টা থেকে ২টা পর্যন্ত হরতাল পালনের আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া ৫ মার্চ বায়তুল মোকাররম থেকে একটি লাঠি মিছিল বের করারও কর্মসূচী ঘোষিত হয়। এর আগে ৩ মার্চ রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকায় পাকিস্তানের নির্বাচিত রাজনৈতিক দলের নেতাদের একটি বৈঠক ডাকেন। আমন্ত্রিতদের তালিকায় উল্লেখযোগ্যরা ছিলেন পাকিস্তান আওয়ামী লীগের শেখ মুজিবুর রহমান, পাকিস্তান পিপলস পার্টির জুলফিকার আলী ভুট্টো, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির খান আবদুল ওয়ালী খান প্রমুখ। বঙ্গবন্ধু প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার এই রাজনৈতিক সভাকে বন্দুকের নলের মুখে ‘নিষ্ঠুর তামাশা’ বলে অভিহিত করে তা প্রত্যাখ্যান করেন। এর পর ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়। এদিকে আসম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডি বুধবার ২ মার্চ প্রথম স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন দিবস পালন করে। একাত্তরের এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মানচিত্র খচিত এই পতাকা উত্তোলন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস এ পতাকাকেই বাংলাদেশের পতাকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই স্বাধীনতার ইতিহাসে ২ মার্চ ছিল এক অনন্য দিন।
×