ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আমিজুল বগুড়ায় ছুরি মেরেছিল পুলিশকে ॥ বাগেরহাটে দস্যু আস্তানা ধ্বংস ॥ অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার

বন্দুকযুদ্ধে নব্য জেএমবি নেতাসহ নিহত ৪, গণপিটুনিতে ২

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৩ মার্চ ২০১৭

বন্দুকযুদ্ধে নব্য জেএমবি নেতাসহ নিহত ৪, গণপিটুনিতে ২

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ বগুড়া, বাগেরহাট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় র‌্যাব-পুলিশের সঙ্গে পৃথক বন্দুকযুদ্ধে নব্য জেএমবি নেতাসহ তিন জন, এক বনদস্যু এবং গণপিটুনিতে দুই কথিত ডাকাত নিহত হয়েছে। এরমধ্যে বগুড়ার শেরপুরের ভবানীপুরে বুধবার রাতে নব্য জেএমবির উত্তরাঞ্চল সামরিক শাখার প্রধান আমিজুল ওরফে আল আমিন ওরফে রনি নিহত হয়েছে। সে নব্য জেএমবির পুনর্গঠন কাজে নিয়োজিত ছিল। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশী পিস্তল, তিন রাউন্ড গুলি ও দুটি ম্যাগজিন উদ্ধার করেছে। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বগুড়ার শেরপুর থানা ও ডিবি পুলিশ তাকে ধরতে রাজশাহীর গোদগাড়ী এলাকার বুজরুক রাধারামপুরে অভিযান চালানোর সময় বগুড়া ডিবির দুই সদস্য আব্দুস সালাম ও ইসমাইল তারই ছুরিকাঘাতে আহত হয়। বাগেরহাটে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সুখপাড়ার চর এলাকায় বৃহস্পতিবার সকালে র‌্যাব-৮-এর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে বনদস্যু শামসু বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড নিহত হয়েছে। নিহত বনদস্যু বেল্লাল মীর ওরফে কানা বেল্লাল বলে র‌্যাব নিশ্চিত করেছে। বন্দুকযুদ্ধের পর ঘটনাস্থল থেকে পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্র, ৭৭ রাউন্ড গুলি ও দস্যুদের ব্যবহৃত বিভিন্ন মালপত্র জব্দ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ৩টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বন্দুকযুদ্ধে দুজন এবং জেলার নবীনগর উপজেলার সাতমোড়া ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামে বুধবার রাতে গণপিটুনিতে দুই কথিত ডাকাত নিহত হয়েছে। শেষোক্ত দুজনের পরিবারের অভিযোগ, পরিকল্পিতভাবে তাদের খুন করা হয়েছে। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও সংবাদদাতার। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আমিজুল বগুড়ার শেরেপুর উপজেলার জুয়ানপুর কুঠিবাড়ি এলাকায় জেএমবির আস্তানায় বোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণ মামলার অন্যতম আসামি। গত বছর ওই স্থানে বোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণে দুই জঙ্গী নিহত হয়েছিল। সূত্র আরও জানায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে নব্য জেএমবির বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্বে থাকা জঙ্গীরা নিহত ও আটক হওয়ার পর আমিজুল সামনের কাতারে চলে আসে। কয়েক মাস আগে সে জেএমবির উত্তরাঞ্চলের সামরিক শাখার প্রধানের দায়িত্ব পায়। ভয়ঙ্কর জঙ্গী রাজীব গান্ধী পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে উত্তরাঞ্চলের সামরিক শাখার দায়িত্বে ছিল। এরপর আরও দুজন এ দায়িত্বে থাকার পর আজিমুল ওই স্থানে চলে আসে। সূত্র জানায়, উত্তরাঞ্চলে নব্য জেএমবির সামরিক শাখার দায়িত্ব পালনের সঙ্গে আমিজুল তাদের নেটওয়ার্ক পুনর্গঠন করছিল। ২০০৮ সালে রাজশাহীর গোদাগাড়ী এলাকার নরেন্দ্রপুর দাখিল মাদ্রাসা থেকে পাস করা আমিজুল রাজশাহী সরকারী কলেজের মাস্টার্স পূর্বভাগের শিক্ষিার্থী ছিল। ২০১৫ সালে সে নব্য জেএমবিতে যোগ দেয়। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে মঙ্গলবার বগুড়ার শেরপুর থানা ও ডিবি পুলিশ তাকে ধরতে রাজশাহীর গোদগাড়ী এলাকার বুজরুক রাধারামপুরে অভিযান চালায়। এ সময় বগুড়া ডিবির দুই সদস্য আব্দুস সালাম ও ইসমাইল ছুরিকাঘাতে আহত হয়। তবে পুলিশ আমিজুলকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারের পর শেরপুর থানা ও ডিবি পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এ সময় সে অস্ত্র থাকার কথা স্বীকার করে বলে পুলিশ জানায়। তার তথ্যানুযায়ী বুধবার রাত ৩টার দিকে শেরপুর থানা ও গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম তাকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে যায়। শেরপুরের ভবানীপুরের জামনগর ব্রিজের নিকট পৌঁছলে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়লে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এ সময় আমিজুল গুলিবিব্ধ হয়। তাকে বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসার পথে সে মারা যায়। তার নিকট থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্র জানায়। বাগেরহাট ॥ সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সুখপাড়ার চর এলাকায় বৃহস্পতিবার সকালে র‌্যাব-৮-এর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে বনদস্যু শামসু বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড নিহত হয়েছে। নিহত বনদস্যু বেল্লাল মীর ওরফে কানা বেল্লাল বলে র‌্যাব নিশ্চিত করেছে। বন্দুকযুদ্ধের পর ঘটনাস্থল থেকে পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্র, ৭৭ রাউন্ড গুলি ও দস্যুদের ব্যবহৃত বিভিন্ন মালপত্র জব্দ করা হয়েছে। বনের মধ্যে দস্যুদের একটি আস্তানা ধ্বংস করা হয়েছে বলে র‌্যাব-৮-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মোঃ আনোয়ার-উজ-জামান জানিয়েছেন। এদিকে, দস্যুদের একটি আস্তানা ধ্বংস এবং দস্যু নিহত ও অস্ত্র-গুলি উদ্ধারের ঘটনায় বনজীবীরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। র‌্যাব-৮-এর উপ-অধিনায়ক মেজর আদনান কবির জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সকালে সুন্দরবনের ওই এলাকায় অভিযানে যায় র‌্যাবের একটি দল। এ সময় র‌্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে দস্যুরা গুলি ছুড়লে উভয়পক্ষের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয়। বেশ কিছুক্ষণ বন্দুকযুদ্ধের একপর্যায়ে দস্যুরা পিছু হটে গভীর বনে পালিয়ে যায়। পরে ঘটনাস্থলে একটি মরদেহ পাওয়া যায়। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। পরে স্থানীয় জেলেরা জানান, নিহত ব্যক্তি বনদস্যু শামসু বাহিনীর সেকেন্ড ইন কামান্ড বেল্লাল মীর ওরফে কানা বেল্লাল। এদিন বিকেলে ব্যাবের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি মামলা দায়েরের পর নিহতের লাশ ও গোলাবারুদসহ আগ্নেয়াস্ত্র শরণখোলা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, শামসু বাহিনী বেশ কিছুদিন ধরে সুন্দরবনে জেলেদের ট্রলারে ডাকাতি করে জাল ও মাছ লুট করে নিচ্ছিল এবং তাদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করে আসছিল। ওই বাহিনীর দস্যুদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অভিযোগ রয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ স্থানীয় পুলিশ বলছে, এখানে বন্দুকযুদ্ধে অন্তত অর্ধশত রাউন্ড গুলিবিনিময় হয়। জেলার বিজয়নগরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এক মাদক ব্যবসায়ী ও এক ডাকাত নিহত হয়। নিহতরা হলোÑ আন্তঃজেলা ডাকাত সর্দার বুলবুল মিয়া ওরফে বুইল্লা এবং নূরুল ইসলাম। রাত ৩টায় ঢাকা-সিলেট মাহাসড়কের বিজয়নগর উপজেলায় বন্দুকযুদ্ধে নিহতের ঘটনা ঘটে। বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলী আরশাদ জানান, উপজেলার খেতাবাড়ি এলাকায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে বুলবুল ডাকাত নিহত হয়। এছাড়া মেরাসানী গ্রামের বাজারের উত্তর পাশে বন্দুকযুদ্ধে মোঃ নূরুল ইসলাম নিহত হয়। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলী আরশাদ জানান, সে একজন মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে ৫টি মাদকের মামলা রয়েছে। পুলিশ জানায়, এ সময় পুলিশ ও ডিবি পুলিশের সঙ্গে অন্তত অর্ধশত রাউন্ড গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটে। তবে বন্দুকযুদ্ধে লিপ্তদের ধরা সম্ভব হয়নি। ডিবি পুলিশের ওসি মোঃ মফিজউদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, তাদের ৫ সদস্য আহত হয়েছে। তাদের কাছ থেকে পাইপগান, ছোরা ও ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলী আরশাদ জানান, দু’পক্ষের মধ্যে অন্তত ৫০ রাউন্ড গুলিবিনিময় হয়। এ ঘটনায় ১০ পুলিশ সদস্য আহত হয় বলে পুলিশ দাবি করেছে। গণপিটুনি ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার সাতমোড়া ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামে বুধবার রাতে গণপিটুনিতে অবসরপ্রাপ্ত বিডিআর সদস্য মোঃ ইয়াছিন (৪০) এবং খন্দকার এনামুল হক (৪২) নিহত হয়েছেন। পুলিশ সূত্র জানায়, জগন্নাথপুর গ্রামের সাবেক মেম্বার সেন্টু মিয়ার বাড়িতে ১০-১৫ জনের একদল দুর্বৃত্ত ডাকাতির প্রস্তুতিকালে সেন্টু মেম্বার ও তার পরিবারের সদস্যদের চিৎকারে এলাকাবাসী এসে ডাকাতদের ঘিরে ফেলে। এ সময় এলাকাবাসীর গণপিটুনিতে দুজন নিহত হয়। নিহতরা হলোÑ পার্শ্ববর্তী রসুল্লাবাদ গ্রামের মৃত খন্দকার আবু তাহেরের ছেলে খন্দকার এলামুল হক ওরফে হক্কা ডাকাত (৪২) এবং তারই ভায়রা ভাই অবসরপ্রাপ্ত বিডিআর সদস্য শিবপুর ইউনিয়নের কাজলিয়া গ্রামের মৃত জারু মিয়ার ছেলে মোঃ ইয়াছিন (৪০)। পরে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল হতে লাশ দুটি উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। সাবেক ইউপি মেম্বার সেন্টু মিয়া বলেন, হক ডাকাতের নেতৃত্বে ১০-১৫ জন লোক আমার বাড়িতে এসে আমাকে হক ডাকাত নিজে ডেগার ধরে দুই লাখ টাকা চায়। এ সময় আমার পরিবারের সদস্য ও আমার চিৎকারে এলাকার লোকজন এসে তাদের আটক করে। এরপর আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। নিহত হকের ভাই এনামুল বাশার বলেন, আমার ভাই ডাকাতি করতে যায়নি, মিটিং করতে গিয়েছিল। সেখানে তাদের পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। নিহত ইয়াছিনের স্ত্রী নাছিমা বলেন, আমার বোনজামাই এলামুল আমার স্বামীকে চুরি হওয়া মোটরসাইকেলের বিরোধ মীমাংসার জন্য খবর দিলে সে সেখানে যায়। আমার স্বামী ডাকাত নন, তিনি বিডিআর সদস্য ছিলেন। ৬ মাস আগে অবসরে আসেন। তিনি ডিশের ব্যবসা করেন।
×