ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জামায়াত শিবিরের বিভীষিকার বর্ষপূর্তি আজ

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ৩ মার্চ ২০১৭

জামায়াত শিবিরের বিভীষিকার বর্ষপূর্তি আজ

সমুদ্র হক ॥ বগুড়ায় জামায়াত শিবিরের তা-ব ও বিভীষিকার দিন আজ। যা মনে করলে আজও শিউড়ে ওঠে বগুড়ার মানুষ। দেশের মানুষের মধ্যে বগুড়ার সেই ভয়াবহ দিনের কথা মনে পড়লে তারা বলে কি শঙ্কিত দিনই না কেটেছে। সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা বগুড়ায় বদলি হয়ে আসেন সহকর্মীরা তাদের আজও বলেন, ‘বগুড়া কিন্তু সেই জায়গা যে এলাকার মানুষ চাঁদে সাঈদীকে দেখে তা-ব চালায়।’ সেই দিন ছিল ৩ মার্চ ২০১৩ সাল। জামায়াতীদের তৈরি করা একটি কলঙ্কের দিন। আগের দিন মধ্যরাতের পর হতে শুরু হয় পরিকল্পিত অভিযান। গভীর রাতে শহর ও শহরতলি এলাকা ছাড়িয়ে আশপাশের এলাকায় গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয় যুদ্ধাপরাধের বিচারে সাজাপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে। ফেসবুকে কৌশলে ফটোএডিট করে চাঁদে সাঈদীকে দেখানো হয়। ধর্মান্ধ মানুষেরা রাতেই কেউ ঘর থেকে বের হয়ে, কেউ ঘরের ছাদে উঠে চাঁদ দেখা শুরু করে। মোবাইল ফোনগুলো সচল হয়ে ওঠে। একে অপরকে চাঁদে সাঈদীকে দেখতে বলে। বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে মানব মনের হ্যালুসিনেশনে যা কল্পনা করে তাই দেখতে পায়। তারপর ইসলামের নিষেধাজ্ঞায় শিরিক পুঁজি করে মানুষের মনে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে তা-ব ও বিভীষিকা শুরু করে জামায়াতীরা। গান পাউডার ছিটিয়ে আগুন, বোমাবাজি, ককটেলবাজি, লুটপাট তথা সন্ত্রাসের সব সীমা অতিক্রম করে তারা। ভোর থেকেই বগুড়া নগরীজুড়ে জামায়াত শিবিরের ক্যাডার ও কর্মীরা লাঠিসোটা আর দেশী অস্ত্র নিয়ে হুঙ্কার দিয়ে মিছিল শুরু করে। সাধারণ মানুষ কিছু বুঝে ওঠার আগেই মিছিল থেকে ক্যাডাররা বিভিন্ন দোকানপাট প্রতিষ্ঠানে ভেঙ্গে ঢুকে আগুন লাগায়। বাদ যায়নি পুলিশ ফাঁড়ি। জেলার সব পুলিশ ফাঁড়িতে একযোগে আগুন দেয়। শেরপুর রোডে এসএ পরিবহনের অফিস, করতোয়া কুরিয়ার সার্ভিসসহ আশপাশের যত দোকান আছে কোথাও আগুন কোথাও ভাংচুর কোথাও ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়। নন্দীগ্রাম উপজেলা পরিষদের ভেতরে ঢুকে গান পাউডার ছিটিয়ে উপজেলা প্রশাসনের সব অফিস থেকে আসবাবপত্র বের করে প্রতিটি অফিসের নথি ফাইল পুড়িয়ে ফেলে ক্যাডাররা। পুড়িয়ে দেয়া হয় শাজাহানপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের অফিস। অল্পের জন্য রক্ষা পায় শাজাহানপুর থানা। জামায়াতী ক্যাডাররা যখন শাজাহানপুর থানার মালখানার অস্ত্র লুট করার প্রস্তুতি নেয় তখনই কাছাকাছি অবস্থানের ক্যান্টনমেন্ট থেকে একটি গাড়ি থানার সামনে গিয়ে দাঁড়ালে জামায়াতীরা পালিয়ে যায়। আওয়ামী দলীয় সংসদ সদস্য মোঃ আব্দুল মান্নানের চকলোকমানের বাসভবন, আওয়ামী লীগ জেলা সভাপতি মমতাজ উদ্দিনের কালিতলা বাসভবন পুড়িয়ে দেয় তারা। এই দিনে শাজাহানপুর থানাসহ পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার পরিকল্পনা করা হয় শাজাহানপুর উপজেলা জামায়াত নেতা ইয়াসিন আলীর বাড়িতে। এ ছাড়া জামায়াত শিবির আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। বগুড়ায় জামায়াতী তা-বের এত বড় ঘটনার অভিযুক্তদের বিচার আজও হয়নি। জামায়াত নেতা ইয়াসিন আলী ও নন্দীগ্রামের কয়েক নেতা ছাড়া কেউ গ্রেফতারও হয়নি। অভিযোগ পাওয়া যায় মামলা দায়েরের সময় অভিযুক্তদের ভুল নাম ঠিকানা, ঘটনার বিবরণ দুর্বল করে অভিযোগপত্র দেয়ায় অনেক অভিযুক্ত পার পেয়ে যাচ্ছে। সেদিনের এই ঘটনার পর বগুড়ার সাধারণ মানুষ তা মনে করে নিজেরাই এখন লজ্জা পায় এই ভেবে তারা কতটা ভুল ভেবেছিল। যার সুযোগ নিয়ে জামায়াত শিবির ভয়াবহ তা-ব চালিয়েছে। জামায়াতীদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের যতটুকু ধারণা ছিল এই ঘটনার পর তা পাল্টে গেছে। এখন তারা জামায়াতকে বিভীষিকার দল মনে করে।
×