ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিলম্বিত হচ্ছে ব্রেক্সিট ॥ সংশোধনের পক্ষে ভোটগ্রহণ

লর্ডসভায় হেরে গেলেন মে

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ৩ মার্চ ২০১৭

লর্ডসভায় হেরে গেলেন মে

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডসের সদস্যরা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে সরকারের প্রস্তাবিত ব্রেক্সিট বিল সংশোধনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। হাউস অব লর্ডসে ব্রেক্সিট বিলের ওপর সোমবার বিতর্ক শুরুর পর বুধবার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা সংশোধনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। সংশোধনের পক্ষে ৩৫৮টি ও বিপক্ষে ২৫৬টি ভোট পড়ে। খবর এএফপি, বিবিসি ও আলজাজিরা অনলাইনের। ইইউ ছাড়ার প্রক্রিয়ায় শুরুতেই হোঁচট খেল প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মের সরকার। টেরেসা মে বলেছেন, ব্রিটেনে থাকা ইউরোপীয়দের তিনি আশ্বস্ত করতে চান কিন্তু ইউরোপে থাকা ব্রিটিশদেরও একই ভাবে সুরক্ষা পাওয়া উচিত। ‘দ্য থ্রি মিলিয়ন’ নামে একটি গ্রুপ ব্রিটেনে বসবাসকারী ইউরোপীয়দের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। গ্রুপটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা মেইকি বোন একজন জার্মান, ব্রিস্টলে থাকেন। পার্লামেন্টের ভোটকে তিনি স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ব্রেক্সিটের পক্ষে ভোট হওয়ায় আমাদের পৃথিবী উলট পালট হয়ে গিয়েছিল। আমাদের অনেকে এখানে এসেছে কয়েক যুগ আগে এবং এখানেই আমরা অনেকে বিয়ে করেছি। আমরা অনেকেই এখানকার নাগরিক, তাই ব্রিটেনের ভাল-মন্দ নিয়ে আমাদের ভাবনা আছে, আমরা এখানে কাজকর্ম করি। কিন্তু ব্রেক্সিট আমাদের পরিচিতি হুমকির মুখে ফেলেছে। তিনি আরও বলেন, ইউরোপীয়দের মধ্যে যারা এই মুহূর্তে কাজ করছে না বা স্থায়ী বসবাসের অনুমতিপত্র পায়নি তারা চরম অনিশ্চয়তায় মধ্যে আছেন। সে কারণে তিনি হাউস অব লর্ডসের সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক মনে করেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (নোটিফিকেশন অব উইথড্রয়াল বিল) বিলটি ব্রেক্সিট বিল হিসেবে পরিচিত। হাউস অব লর্ডসের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য বিলটি সংশোধনের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় তা পাস হতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। হাউস অব লর্ডসের সদস্যদের প্রথম সংশোধনীতে বর্তমানে ব্রিটেনে বসবাসরত ৩০ লাখ ইউরোপীয় নাগরিকের স্বার্থ নিশ্চিত করার নিশ্চয়তা চাওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় সংশোধনীর জন্য আগামী সপ্তাহে আরেক দফা ভোটগ্রহণ করা হবে। ব্রেক্সিট সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে আগামী মাসে ইইউর লিসবন চুক্তির ৫০ ধারা প্রয়োগের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রেক্সিট আলোচনা শুরু করবেন টেরেসা মে। আলোচনা চূড়ান্ত হতে অন্তত দুই বছর সময় লাগবে। তবে দেশটির সর্বোচ্চ আদালতের জারি করা রুল অনুযায়ী ইইউ ত্যাগের এখতিয়ার রয়েছে পার্লামেন্ট সদস্যদের হাতে। এ কারণে পার্লামেন্টের অনুমোদন ছাড়া তিনি আলোচনা শুরু করতে পারবেন না। সুপ্রীমকোর্টের রুলের জবাবে পার্লামেন্টে একটি খসড়া আইন উত্থাপন করে ব্রিটিশ সরকার। সেখানে জোটের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রেক্সিট আলোচনা শুরুর সার্বিক ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর ওপর অর্পণ করা হয়। খসড়া ব্রেক্সিট বিলটি জানুয়ারিতে সংসদের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সের অনুমোদন লাভ করে। বর্তমানে আইনটি হাউস অব লর্ডসের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। নিম্নকক্ষে টেরেসা মের ক্ষমতাসীন দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় খসড়া বিলটি পাস করতে বেগ পেতে হয়নি সরকারকে। কোন সংশোধনী ছাড়াই বিলটি নিম্নকক্ষে পাস হয়। তবে হাউস অব লর্ডসে ক্ষমতাসীন দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। উচ্চকক্ষের অনির্বাচিত ৮০০ সদস্যের মধ্যে মাত্র ২৫২ জন কনজারভেটিভ পার্টির। হাউস অব লর্ডসে প্রথম সংশোধনীটি গৃহীত হওয়ার ফলে সেগুলোর আইনে পরিণত হতে নিম্নকক্ষের অনুমোদনের প্রয়োজন পড়বে। এছাড়া আরেকটি সংশোধনীর ওপর দ্বিতীয় দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে হাউস অব লর্ডসে। আগামী মাসের শেষের দিকে ব্রেক্সিট আলোচনা শুরুর যে পরিকল্পনা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নিয়েছেন তা বাস্তবায়ন কষ্টসাধ্য করে তুলবে। উত্তর আয়ারল্যান্ডে ভোটগ্রহণ ॥ উত্তর আয়ারল্যান্ডে রাজনৈতিক সঙ্কট অবসানে বৃহস্পতিবার সেখানে ভোট হয়। গত দশ মাসের মধ্যে এটি দ্বিতীয় দফায় ভোটগ্রহণ। তবে সঙ্কট নিরসনে এ ভোট কতটা ফলপ্রসূ হবে তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। ক্যাথলিক সংখ্যাগরিষ্ঠ আইরিস রিপাবলিকান সোশ্যালিস্ট সিন ফেইন ও বৃটেনপন্থী প্রটেস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টির মধ্যে সৃষ্ট উত্তেজনার প্রেক্ষিতে জানুয়ারিতে এ ভোট আহ্বান করা হয়। উভয় দলই খুব দ্রুত একটি সরকার গঠন করতে চায়, যেখানে নতুন করে ক্ষমতার ভাগাভাগি হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক জনাথন টংকে এ দুই দলের একত্রে দ্রুতই একসঙ্গে সরকার গঠনের ব্যাপারে বেশ হতাশই মনে হয়েছে।
×