স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা ॥ মামলা দিয়ে ভূমিহীন জনপদ পুরুষ শূন্য করে চারজনকে গ্রেফতার করার পর সন্ত্রাসী বাহিনী ভূমিহীন জনপদে হামলা চালিয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কাটাখালি এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় কমপক্ষে ১০ ভূমিহীন আহত হয়েছে। হামলাকারীরা মসজিদের ইমামের বসত ও রান্না ঘর, ভূমিহীনের বসতঘর, চিংড়ি ঘের মালিকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ঘের কর্মচারীদের বাসা, রান্নাঘর, মাছ, টাকা লুটপাটের পর আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। এ সময় ভাঙচুর করা হয়েছে মসজিদের দেয়াল জানালা । হামলার পর পালিয়ে যাওয়ার সময় ভূমিহীনরা এক ভাড়াটে সন্ত্রাসীকে দাসহ আটক করে পুলিশে দিয়েছে। খাস জমির দখল ও পাল্টা দখল নিয়ে এখন উত্তপ্ত ভূমিহীন জনপদ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
হাজীপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম, তাজুল ইসলাম, শাহীন হোসেন ও মিলন গাজী জানান, শোভনালী ইউপির চেয়ারম্যান জালাল গাজীর কাটাখালি ঘেরের মধ্যে প্রায় ৮৫ বিঘা সরকারী খাস জমি ২০০৭ সালে ভূমিহীনদের জন্য ছেড়ে দেয়া হয়। ওই জমি ভূমিহীনরা একসনা বন্দোবস্ত নেয়। অভিযোগ, পরবর্তীতে শরাফপুরের বসির আহমেদ জাল জালিয়াতির মাধ্যমে দলিল করে এই জমি নিজের দখলে নেয়। এ নিয়ে প্রতিনিয়ত সংঘাত ও বিরোধের মধ্যে ভূমিহীনদের প্রতিহত করতে বসির আহমেদের পক্ষে ভূমিহীনদের নামে ক্রমাগত ১১টি ঘের দখল, লুটপাট ও চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় চার শতাধিক নারী ও পুরুষকে আসামি করা হয়। এসব মামলায় ইউপি সদস্য হাবিবুলসহ কয়েকজন ভূমিহীন বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী কাটাখালি গ্রামের ভূমিহীন রফিকুল ইসলামের স্ত্রী রহিমা খাতুন, আফছার সরদারের স্ত্রী ফিরোজা খাতুনসহ অন্যরা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল সাতটার দিকে বালিয়াপুর, ছয়কোনা, শরাফপুর, জোড়দিয়া বাঁকড়া এলাকা দিয়ে বসির আহমেদের ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা কাটাখালি এলাকায় ঢোকে। তাদের হাতে ছিল রামদা, লোহার রড, বোমা, চাইনিজ কুড়াল, ক্রিজ ও পাইপগান।
তারা কাটাখালি মধ্যপাড়া জামে মসজিদের সামনের দেয়াল, পাঁচটি জানালা ও একটি দরজা ভাঙচুর করে। পরে তারা মসজিদের পিছনে ইমাম সাদ্দাম হোসেনের বসতঘর, রান্না ঘর, পাশেই মিলন গাজীর ঘের পাহারাদারদের বাসা, মাছের সেট ও অফিসঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে। পরে তাতে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়।
ভূমিহীনরা জানায়, ভূমিদস্যুদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে স্থানীয়দের সহায়তায় ভূমিহীনরা জালিয়াতির মাধ্যমে দখলে রাখা বসিরের ৮৫ বিঘা চিংড়ি ঘেরের জমি (পানি শূন্য) বুধবার সকালে দখলে নেয়। জমি নিয়ে তারা ছোট ছোট ঘের করার জন্য বাঁধ নির্মাণ করে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বসিরের ভাই সালাউদ্দীন হোসেন লাল্টু বুধবার একটি মামলায় ৪৬ ও অপরটিতে ৩০ জন ছাড়া অজ্ঞাতনামা দু’শতাধিক ব্যক্তির নামে ঘের লুটপাট ও চাঁদাবাজির মামলা রুজু করে। মামলায় ভূমিহীন ছাড়াও তাদের সহায়তাদানকারী হাজিপুর গ্রামের মিলন গাজী, আশরাফ গাজী, গিয়াসউদ্দিন, তুহিন গাজী, শাহাবুদ্দিন গাজী, রমজান গাজী, হামিজউদ্দিন গাজীকেও আসামি করা হয়। পুলিশ রাতভর অভিযান চালিয়ে হাজিপুর গ্রামের হামিদ সরদারের ছেলে আবুল আহসান, কাটাখালি গ্রামের আব্বাস ঢালীর ছেলে আলমগীর হোসেন, একই গ্রামের আছিরদ্দির মেয়ে হাফিজা খাতুন ও হরিশ্চন্দ্র ম-লের ছেলে বৈদ্যনাথ ম-লকে গ্রেফতার করে।