ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রংপুরে সালিশে কৃষককে পিটিয়ে হত্যা

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ৩ মার্চ ২০১৭

রংপুরে সালিশে কৃষককে পিটিয়ে হত্যা

নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর, ২ মার্চ ॥ রংপুরের গঙ্গাচড়ায় সালিশে লাল মিয়া (৪৮) নামে এক কৃষককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে চেয়ারম্যান ও তার সাঙ্গোপাঙ্গদের বিরুদ্ধে। উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের উত্তর কোলকোন্দ গ্রামে বুধবার রাত ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, কোলকোন্দ ইউনিয়নের সদস্য উত্তর কোলকোন্দ গ্রামের হোদা মিয়ার দ্বিতীয় পুত্র ও গঙ্গাচড়া ডিগ্রী কলেজের অনার্স শেষবর্ষের ছাত্র মিল্টনের (২২) বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনে প্রতিবেশী আলেকিশামত গ্রামের তৈয়ব আলীর পুত্র রফিকুল ইসলাম বুলু (৩৫)। বুলুর অভিযোগ, তার স্ত্রীকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করেছে মিল্টন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে কোলকোন্দ ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব আলী রাজুর নেতৃত্বে বুধবার রাত ৯টার দিকে উত্তর কোলকোন্দ গ্রামের মৃত শহির আলীর পুত্র শাফিকুল ইসলামের বাড়ির উঠানে সালিশ অনুষ্ঠিত হয়। সালিশের রায়ে চেয়ারম্যান রাজু অভিযুক্ত মিল্টনকে শাসন করার জন্য তার পিতা হোদা মিয়াকে নির্দেশ দেন। হোদা মিয়া পুত্রকে ২-৪টা চড়-থাপ্পড় দিলে বিচারকদের তা মনোপূত না হওয়ায় চেয়ারম্যানের নির্দেশে স্থানীয় একরামুলের পুত্র রিপনসহ ৪-৫ জন ইউপি সদস্য হোদা মিয়া, তার ছেলে নাজমুল ও মিল্টনকে বেদম মারপিট করতে থাকে। এ সময় ভাই-ভাতিজাকে রক্ষা করতে হোদা মিয়ার ছোট ভাই লাল মিয়া এগিয়ে গেলে তাকেও বেধড়ক মারতে থাকেন চেয়ারম্যানের সাঙ্গোপাঙ্গরা। এ সুযোগে আত্মরক্ষার্থে হোদা মিয়া ও তার পুত্ররা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। বেদম প্রহারের একপর্যায়ে লাল মিয়া ঘটনাস্থলেই জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎক লাল মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। একপর্যায়ে রাতেই লাল মিয়ার মরদেহ নিয়ে এসে ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে দাফনের চেষ্টা চালান ওই চেয়ারম্যান ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা। তবে নিহতের স্ত্রী শিরিনা বেগম (৪২) ও ছেলেরা এর বিরোধিতা করলে তা সম্ভব হয়নি। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে পাঠিয়ে দেয়। ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব আলী রাজু স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও প্রভাবশালী হওয়ায় তার ও তার লোকদের হুমকির মুখে নিহতের পরিবার ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় রয়েছে বলে জানান নিহতের শ্যালক রুহুল আমিন। এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব আলী রাজু বলেন, আমি মারতে নির্দেশ দেইনি, শাসন করতে বলেছিলাম যাতে আগামীতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
×