ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সাম্প্রদায়িকতা রোধে পথনাটক

প্রকাশিত: ০৩:৪২, ৩ মার্চ ২০১৭

সাম্প্রদায়িকতা রোধে পথনাটক

ধর্মের নামে, বর্ণের নামে, জাতির নামে মানুষ মানুষকে হত্যা করে। সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে হানাহানি সৃষ্টি করে মানবতাকে ভূলুণ্ঠিত করা হয়। মুক্ত মানুষের স্বাধীনতা অধিকার খর্ব হচ্ছে প্রতিনিয়ত। মৃত্যুর কাছে পরাজয় মেনে নিতে হয় জীবনকে অথচ জীবন চিরসত্য ও অপরাজিত। বিবেক বুদ্ধিহীন মানুষ সংখ্যায় বেড়ে গেলে স্বাভাবিক জীবনাচরণ অন্যদের পক্ষেও হয়ে দাঁড়ায় দুরূহ। মানবিক মূল্যবোধগুলো ক্রমশ খসে পড়ে। ধর্মান্ধগোষ্ঠী আর ধর্ম ব্যবসায়ীদের দাপট এতই তীব্রতর যে, শুভবোধ ও মানবিক চেতনা লুপ্ত হয়ে যায়। এরাই সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে সৃষ্টি করে হানাহানি। নৃশংসতার উন্মাদনায় এতই মত্ত হয়ে ওঠে যে, ধর্মের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে প্রবৃত্ত হয় মানুষ হত্যায়। নারী ও শিশু হত্যায় তারা মাতে উল্লাসে। রক্তপাতের মধ্য দিয়ে এরা কোন ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে না। বরং ধর্মকেই করে ক্ষতিগ্রস্ত। তাদের উদ্যত সঙ্গীনের নিচে চাপা পড়ে যায় শান্তির ললিত বাণী। ধর্মকে এই যে বর্ম করে ধর্মবিরোধী গোষ্ঠীগুলো এদেশে ওদেশে এমনকি সারাবিশ্বে হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণ, লুটপাট চালিয়ে আসছে, তার পরিণতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বর্তমানে শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং পুরো বিশ্ব আজ বিপন্ন। জঙ্গী ও সন্ত্রাস কবলিত হয়ে মানব সভ্যতা হুমকির সম্মুখীন। প্রাণবায়ু নির্গত হচ্ছে অগণিত নিরীহ সাধারণ মানুষের, নারী ও শিশুর। ঘটছে সম্পদহানিও। মানুষকে হত্যা করে, তার ভিডিওচিত্র সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করে তারা বুঝিয়ে দেয় যে, নিষ্ঠুরতার কত চূড়ান্ত সীমায় এসব ঘৃণ্য মানুষ নামধারী হিংস্র পশুরা নেমে গেছে। বাংলাদেশ নামক স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রটি নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের ব্রত নিয়ে যোদ্ধারা লড়াই করেছে। পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ধর্মের নামে, সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে একুশ বছর ধরে যে শাসন শোষণ করেছে, তারই চূড়ান্ত নিদর্শন রেখেছে একাত্তরে বাংলাদেশ দখলে রেখে। তারা ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদেরও হত্যা শুধু নয়, দেশ ত্যাগে বাধ্য করেছিল। আর এসবই করা হয়েছিল ইসলাম রক্ষার নামে। তাদের এই ধর্ম রক্ষার নাম ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ ঘটিয়েছে বাংলাজুড়ে। সেই পাকিস্তান নামক সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রটিই হচ্ছে জঙ্গী উৎপাদনের দেশ। এরা জঙ্গী প্রশিক্ষণ শেষে তাদের বিভিন্ন দেশে রফতানি করে আসছে। পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হানাদার মনোভাবের এ আরেক রূপ। এই জঙ্গীরা বাংলাদেশে দুই হাজার এক সালের পর হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় জঙ্গীরা শেখ হাসিনার জনসভায় গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল। তাদের ঘৃণ্য তৎপরতার তালিকা ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে। এসব জঙ্গীর বিরুদ্ধে দেশবাসী যেমন সোচ্চার, তেমনি সংস্কৃতিকর্মীরা। তারাও থেমে নেই। জঙ্গী, সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার কণ্ঠও তাদের। দেশবাসীর মতো তারাও জানে, শিক্ষাক্ষেত্রে পাঠ্যপুস্তকের মতো সাম্প্রদায়িকতার বিষ রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়াচ্ছে। মুক্তচিন্তা ভাবনা করার অধিকারও সীমিত হয়ে আসছে। পাঠ্যপুস্তকজুড়ে সাম্প্রদায়িকতার যে থাবা, তা থেকে সমাজকে রক্ষা করা এখন কর্তব্য। এসবের বিরুদ্ধে মানুষের মধ্যে সুপ্ত শুভবোধ ও চেতনাকে জাগ্রত করা, মানবিকতাকে মানুষের মনে বিকশিত করে তোলা গেলে সাম্প্রদায়িকতা মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য। নাটক, গান, কবিতাকে হাতিয়ার করে এগিয়ে যাচ্ছে দেশের সংস্কৃতিকর্মীরাও। তারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত শিক্ষা চাই, মুক্ত মানবিক দেশ চাই’Ñ এ সেøাগানকে সামনে রেখে ৭ দিনব্যাপী পথনাট্যোৎসব আয়োজন করেছে। সংস্কৃতি মানবতা বিকাশের কথা বলে। নাটক তারই অন্তর্গত। আলো দিয়ে মানুষের মনে আলো জ্বালিয়ে এই নাট্যোৎসব প্রেরণা হয়ে জাগরূক থাকবেই।
×