ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

সপ্তাহব্যাপী পথনাটক উৎসব শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২ মার্চ ২০১৭

সপ্তাহব্যাপী পথনাটক উৎসব শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বসন্তের বর্ণিল সন্ধ্যা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পাদদেশ সংস্কৃতিকর্মীদের পদচারণায় মুখর। মাইকে ভেসে আসছে হুমায়ুন আজাদের লেখা কবিতার চরণ ‘বইয়ের পাতায় প্রদীপ জ্বলে, বইয়ের পাতা স্বপ্ন বলে’। এমনই সময় আকাশে বেলুন উড়িয়ে বাংলাদেশ পথনাটক উৎসবের উদ্বোধন করেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত নাট্যজন মলয়াশ্রী হাশমি। যে মানুষটির সারাটি জীবনই কেটেছে পথনাটকের লড়াইয়ে। এই পথনাটকের জন্য প্রাণ হারিয়েছেন তার স্বামী উপমহাদেশের পথনাটক আন্দোলনের পথিকৃৎ ব্যক্তিত্ব সফদর হাশমি। তার মৃত্যুর ২৮ বছর পরও এই পথনাটকের জন্য সংগ্রামী মলয়াশ্রী হাশমির হাত ধরে বুধবার থেকে শুরু হয়েছে বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদের আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী এ উৎসব। এবারের উৎসবের সেøাগান ‘সাম্প্রয়াদিয়কতা মুক্ত শিক্ষা চাই, মুক্ত মানবিক দেশ চাই’। এ উৎসব চলেবে আগামী ৭ মার্চ পর্যন্ত। এতে দেশের ৩২টি দলের ৩২টি পথনাটক প্রদর্শিত হবে। ভাষা আন্দোলন-মুক্তিযুদ্ধসহ সকল মুক্তিসংগ্রামে শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন ও এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা। এর পর সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীদের কণ্ঠে গীত হয় জাতীয় সঙ্গীত। এর পর ছিল আলোচনা পর্ব। যাতে উদ্বোধক মলয়াশ্রী হাশমি ছাড়াও আরও বক্তব্য রাখেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, মামুনুর রশীদ, নাসিরউদ্দিন ইউসুফ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, অধ্যাপক বিশ^জিৎ ঘোষ ও ঝুনা চৌধুরী। পথনাটক পরিষদের সভাপতি মান্নান হীরার সভাপতিত্বে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন পরিষদের সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান, স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক আহাম্মেদ গিয়াস ও শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন উৎসবের আহ্বায়ক মোহাম্মদ বারী। এছাড়াও হুমায়ুন আজাদের ‘বই’ কবিতাটি পাঠ করেন আহকাম্্উল্লাহ। উদ্বোধনকালে মলয়াশ্রী হাশমি বলেন, আমার সংগঠন জননাট্য মঞ্চের পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন। আমার মাতৃভাষা দুটি। আমার মা বাঙালী আর আমার বেড়ে ওঠা পরিবেশ ছিল হিন্দি। ভারত ও বাংলাদেশ একই ইতিহাসের অংশীদার। কাজেই আমাদের প্রতিবাদের ভাষা কোন কোন সময় ভিন্ন হলেও বিষয়বস্তু একই। ইতিহাসের পাতায় প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মুখ ভূমিকায় যাদের নাম অগ্রে, তারা বেশিরভাগই জন্মগ্রহণ করেছেন এই ভূখ-ে। সারা পৃথিবীতে এখন দক্ষিণপন্থীদের উত্থান চলছে। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান নিতে হবে। নাটকের মাধ্যমে শৈল্পিকভাবে প্রতিবাদ করতে হবে। বুদ্ধিজীবী, উন্নত সংস্কৃতি এবং শ্রমিক আন্দোলনকে মনেপ্রাণে ঘৃণাকারী ব্যক্তি ছিলেন হিটলার। হিটলারের রাজ্যজয় ও বর্ণবাদী আগ্রাসনের কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রাণ হারাতে হয়। ইহুদি নিধনের ঘটনা ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়। তেমনি পৃথিবীতে এখন নব্য হিটলারের আগ্রাসন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এর প্রতিবাদে দরকার প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলন। প্রতিবাদের এক বিশেষ অস্ত্র পথনাটক। বর্তমান পৃথিবীতে অশুভ শক্তির এই উত্থানের বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার হতে হবে। স্বামী সফদর হাশমির স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, তিনি যেভাবে নাটকের মাধ্যমে সমাজের সকল অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন। আমরা তার দেখানো পথ ধরেই এগিয়ে চলছি। রামেন্দু মজুমদার বলেন, পথনাটকের ভাষা প্রতিবাদের। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে আমরা পথনাটকের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলাম। বর্তমান সময়ে পাঠ্যপুস্তক নিয়ে সরকার যে খেলা খেলছে, তার বিরুদ্ধে পথনাটকের মধ্য দিয়ে লড়াই করতে হবে। নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বলেন, পাঠ্যপুস্তকে একটি ধর্মকে প্রাধান্য দিয়ে সরকার বিভাজন রেখা এঁকেছে। যা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য ভাল হবে না। উদ্বোধন পর্ব শেষে ব্রতচারী নৃত্য পরিবেশন করেন বাংলার ব্রতচারী সংঘের শিল্পীরা। এর পর মান্নান হীরার রচনা এবং আবু হাসিম মাসুদের নির্দেশনায় আরণ্যক নাট্যদল মঞ্চায়ন করে ‘আগুনের পরশমনি’। এরপর শহিদুল হাসান শামিমের রচনা ও তানভির আহাম্মেদ চৌধুরীর নির্দেশনায় গাজীপুরের মুক্তমঞ্চ নাট্যদল মঞ্চস্থ করে ‘চোর সমগ্র’ (মুখ নাটক)। সব শেষে ছিল টাঙ্গাইল কালিহাতির নিপেন পাল ও তার সঙদলের বিশেষ ‘সঙযাত্রা’। আজ বৃহস্পতিবার উৎসবের দ্বিতীয় দিনে পাঁচটি পথনাটক মঞ্চস্থ হবে। এগুলো হলোÑ নরসিংদীর বাংলা নাট্যমের ‘বৈশাখী পাগল’, লোকনাট্যদলের (টিএসসি) ‘গুটিবাজ’, বর্ণালী থিয়েটারের ‘প্রতীকী চাতক’, উৎসের ‘বর্ণমালার মিছিল’ ও প্রাচ্যনাটের ‘মহাবিদ্যা’। বিশেষ পরিবেশনায় ওয়ার্দা রিহাবের পরিচালনায় ধৃতি নর্তনালয়ের মণিপুরি নৃত্য। শিল্পী জান্নাত কেয়ার ‘ঢেউ’ শীর্ষক একক চিত্র প্রদর্শনী জয়নুলে: গ্যালারিতে প্রবেশ করেই চোখে পড়বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের আবক্ষ ছবি। এর পাশেই রয়েছে গাছ, কুমড়া ফুলে নুয়ে পড়েছে লতা, লঞ্চ ঘাটের দৃশ্য, পাখি, নারীর মুখ, বৃষ্টিস্নাত এক মুহূর্ত, নবজাতকসহ প্রকৃতির নানান দৃশ্য। শিল্পী জান্নাত কেয়ার আঁকা এসব ছবি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারি টুতে বুধবার থেকে শুরু হয়েছে ‘ঢেউ’ শীর্ষক একক চিত্র প্রদর্শনী। ওই দিন বিকেলে ৬ দিনব্যাপী এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যারয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ও চারুকলা বিভাগের ডিন প্রফেসর নিসার হোসেন। সম্মানিত অতিথি ছিলেন ড. মলয় বালা ও প্রফেসর নাসরিন বেগম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথিরা বলেন, শিল্পীর সৃষ্ট চিত্রকর্ম আমাদের প্রণোদিত করার পাশাপাশি জাতীয় সাংস্কৃতিক বোধকে উন্নত করে। শিল্পীদের সৃজনকর্মে নতুন প্রজন্ম উজ্জীবিত হবে এটাই স্বাভাবিক। আমরা চাইব আমাদের শিল্পীরা আরও নতুন নতুন শিল্পকর্ম উপহার দিয়ে দেশের শিল্পাঙ্গনকে আরও সমৃদ্ধ করবে। একটি অসাম্প্রদায়িক সমাজ গড়তে শিল্পীদের সৃজনকর্ম বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস। এরপর প্রধান অতিথি ফিতা কেটে প্রদর্শনীর দ্বার উন্মোচন করেন এবং ঘুরে ঘুরে শিল্পীর আঁকা শিল্পকর্ম দেখেন। প্রদর্শনীতে মোট ৩০ চিত্রকর্ম রয়েছে। আগামী ৬ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনী দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ‘কবিকণ্ঠে কবিতা’: আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বুধবার অনুষ্ঠিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নিয়মিত আয়োজন ‘কবিকণ্ঠে কবিতা’। ‘একুশে একুশে একাত্তর’ শিরোনামে এই আসরে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় কবিতা পরিষদের সাবেক সভাপতি হাবিবুল্লাহ সিরাজী। স্বাগত ভাষণ দেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি কবি রবিউল হুসাইন। তিনি বলেন, অশুভের বিরুদ্ধে কবিতা হলো এক দারুণ যুদ্ধাস্ত্র। সৈনিকরা মেটালিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করে, কবিরা করে এই শব্দের অস্ত্র নিয়ে। কবিতা পাঠ করেন রণজিৎ কুমার, পারভীন আক্তার, শামস হক, আতাহার খান, হাসান হাফিজ, রবীন্দ্র গোপ, শিহাব সরকার, তারিক সুজাত প্রমুখ।
×