ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রিমান্ডে রানাকে জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

আনসারুল্লাহর টার্গেট কিলিংয়ের নেতৃত্বে ছিল পাকিস্তানী জঙ্গীনেতা

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২ মার্চ ২০১৭

আনসারুল্লাহর টার্গেট কিলিংয়ের নেতৃত্বে ছিল পাকিস্তানী জঙ্গীনেতা

শংকর কুমার দে ॥ বাংলাদেশের জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সঙ্গে যোগাযোগ আছে পাকিস্তানের জঙ্গী গোষ্ঠীর। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের জঙ্গীরা যেসব টার্গেট কিলিং করেছে তার নেতৃত্ব দিয়েছে পাকিস্তানের জঙ্গী নেতা ইজাজ হোসেন। পাকিস্তানী জঙ্গী নেতার সহযোগী ছিল আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের শীর্ষ জঙ্গি নেতা রেদোয়ানুল আজাদা রানা। গ্রেফতার করে তাকে সোমবার দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডে আনার পর জিজ্ঞাসাবাদে এই ধরনের তথ্য পেয়েছেন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, মিথ্যা তথ্য দিয়ে অন্য পরিচয়ে ভুয়া পাসপোর্টে রানা চলে যায় মালয়েশিয়ায়। জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগে মালয়েশিয়া তাকে ফেরত পাঠায়। তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর পর গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর দ্বিতীয় দফা রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে এই ধরনের তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যা মামলায় ফাঁসির দ-প্রাপ্ত আসামি রেদোয়ানুল আজাদ রানাকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফের পুলিশ হেফাজতে দিয়েছেন আদালত। জঙ্গী দল আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নেতা রানাকে গত ২০ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ঢাকার উত্তরা থেকে আশরাফ নামে এক সহযোগীসহ গ্রেফতারের পরদিন আদালতের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুজনকেই পাঁচ দিন করে রিমান্ডে পায় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট। পাঁচ দিনের রিমান্ডে শেষে সোমবার তাকে আদালতে হাজির করে ফের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। আবারও জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে রানা। জিজ্ঞাসাবাদে রানা জানায়, জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের অপারেশনের দায়িত্বে রয়েছে পাকিস্তানে পলাতক জঙ্গি ইজাজ হোসেন ও আত্মগোপনে থাকা সে (রেদোয়ানুল আজাদ রানা)। ২০১৪ সালের শুরুর দিকে ভুয়া পাসপোর্ট নিয়ে নিজেকে হিন্দু পরিচয় দিয়ে মালয়েশিয়ায় যায় সে। সেখানে গিয়েও সে জঙ্গী কর্মকা-ে সক্রিয় ছিল। জঙ্গী সংগঠন আইএসে যোগ দিতে চেয়ে সে ব্যর্থ হয়। একপর্যায়ে জঙ্গী প্রশিক্ষণ নিতে ফিলিপিন্সে যাওয়ার প্রস্তুতিকালে মালয়েশিয়ার পুলিশের কাছে ধরা পড়ে রানা। ২০১৩ সালে ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার শোভন হত্যার মধ্য দিয়ে আলোচনায় আসে জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম। এ ঘটনার পর এই টিমের সিøপার সদস্যরা একের পর ব্লগার ও প্রকাশকদের টার্গেট করে হামলা চালাতে থাকে। কিন্তু কোনভাবেই হামলাকারীদের চিহ্নিত করতে পারছিল না ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। অবশেষে রাজীব হত্যা মামলার একটি সূত্র ধরে ৫ খুনিকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর পরিকল্পনাকারী ও হামলার নির্দেশ দাতা হিসেবে আলোচনায় আসে রেদোয়ানুল আজাদ রানার নাম। ঘটনার পর থেকে তাকে গ্রেফতারে মরিয়া হয়ে ওঠে পুলিশ। কিন্তু পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে নাম পরির্বতন করে এরই মধ্যে মালয়েশিয়া পালিয়ে যায় রানা। অবশেষে মালয়েশিয়া থেকে ফেরত পাঠানোর পর সোমবার দুপুরে মোস্ট ওয়ান্টেড রেদোয়ানুল আজাদ রানাকে উত্তরা থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন চলাকালে ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পল্লবীতে ব্লগার রাজীবকে তার বাসার কাছে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র আনসারুলাহ বাংলা টিমের এই সংগঠক রানার পরিকল্পনায় ওই হত্যাকা- সংগঠিত হয় বলে পরে পুলিশের তদন্তে উঠে আসে। ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহম্মেদ ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর ওই মামলার রায়ে রানা এবং ফয়সাল বিন নাঈম দীপের ফাঁসির আদেশ দেন। এছাড়া একজনের যাবজ্জীবন কারাদ- এবং জসীমউদ্দিন রাহমানীসহ পাঁচজনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজার আদেশ হয়। নিম্ন আদালতের ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে সাত আসামির আপিলের রায় যে কোন দিন ঘোষণা করা হবে। পলাতক থাকায় রানা হাইকোর্টে আপিল করার সুযোগ পায়নি। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা বলেন, ব্লগার রাজীব হত্যার পর ২০১৩ সালের শেষদিকে ভুয়া ঠিকানায় পাসপোর্ট বানিয়ে মালয়েশিয়ায় পালিয়ে যায় রানা। সেখানেও গত প্রায় তিন বছর ধরে জঙ্গী তৎপরতা চালাচ্ছিল। মালয়েশিয়ায় গ্রেফতার হওয়ার পর দেশটির কর্তৃপক্ষ রানাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠায়। মৃত্যুদ-াদেশ প্রাপ্ত রানাকে রিমান্ডে এনে ব্লগার, প্রকাশক, লেখক, প্রগতিশীল ব্যক্তিদের টার্গেট কিলিং ঘটানোর অনেক চাঞ্চল্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।
×