ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দুই মাসে গ্রেফতার ১০ ॥ অভিযানে গিয়ে হামলায় আহত দুই পুলিশ

রাজশাহীতে জঙ্গীরা গোপনে আস্তানা গড়ে তুলছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২ মার্চ ২০১৭

রাজশাহীতে জঙ্গীরা গোপনে আস্তানা গড়ে তুলছে

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী থেকে ॥ রাজশাহীর বিভিন্ন স্থানে ফের গোপনে আস্তানা গেড়েছে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জামা’আতুল মোজাহেদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) ও হরকত-উল-জিহাদের সদস্যরা। ছদ্মবেশে এসব জঙ্গী সংগঠনের নেতারা আশ্রয় নিয়েছে জেলার বিভিন্ন উপজেলায়। গত দু’মাসে নগরী ও জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে জেএমবি ও হরকত-উল-জিহাদের ১০ নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এরা বিভিন্ন উপজেলায় আস্তানা গেড়ে ব্যবসায়ীর ছদ্মবেশ ধারণ করে গোপনে জঙ্গী তৎপরতা চালাচ্ছিল। সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতে জেলার গোদাগাড়ীতে অভিযানে যাওয়া বগুড়া গোয়েন্দা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে জেএমবির সদস্যরা। তারা পুলিশের দুই সদস্যকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করেছে। মাথায় টার্গেট করে হত্যার উদ্দেশ্যে পুলিশের দুই সদস্যকে কুপিয়েছে জেএমবির সদস্যরা। এ ঘটনায় একজন গ্রেফতার হলেও অন্যরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এদিকে জঙ্গীদের ধরতে গিয়ে ছুরিকাঘাতে জখম বগুড়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশের দুই সদস্যকে গুরুতর অবস্থায় রাতেই রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে এ ঘটনার সময় হামলাকারী জেএমবির ওই জঙ্গীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি খুরশিদ আলম। ডিআইজি বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে গোদাগাড়ী পৌরসভার রাজারামপুর এলাকায় এক জঙ্গীকে গ্রেফতার করতে অভিযান চালায় বগুড়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। এ সময় এক জঙ্গী পালানোর চেষ্টা করলে কনস্টেবল তাকে ধরে ফেলে। এ সময় সে কনস্টেবল সালামের উপর এলোপাতাড়ি ছুরি চালায়। সালামকে রক্ষা করতে গেলে অপর কনস্টেবল ইসমাইলকেও উপযুপরি ছুরিকাঘাত করে। গোদাগাড়ী মডেল থানার ওসি হিপজুর আলম মুন্সী বলেন, খবর পেয়ে গোদাগাড়ী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই কনস্টেবলকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। এদের মধ্যে কনস্টেবল সালামের অবস্থা গুরুতর বলে জানান ওসি। তার মাথায় অসংখ্য ছুরির আঘাত রয়েছে। বুক ও পিঠ ক্ষত-বিক্ষত। পুলিশ সূত্র জানায়, জেএমবির এ সদস্য প্রশিক্ষিত ক্যাডার। পুলিশের ওপর তার হামলার ধরন দেখে এমনটাই প্রমাণিত হয়েছে। এ ঘটনায় গ্রেফতার জেএমরি নাম আজিমুল ইসলাম (২৪)। সে উপজেলার রাজারামপুর এলাকার আতাউর রহমানের ছেলে। আজিমুল মাঝে মধ্যেই বাড়ি থেকে চলে গিয়ে ৩/৪ দিন পর বাড়ি আসে। মাঝে মধ্যে বাইরে থেকে তার বাড়িতে লোকজনও এসে ২/১ দিন থেকে চলে যায়। সে এবং তার পরিবারের সদস্যরা গ্রামের কারও সঙ্গে মিশে না। বাড়ির বাইরেও তেমন বের হয় না বলেও স্থানীয়রা জানায়। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, জেএমবি ও হরকত-উল-জিহাদ বিচ্ছিন্ন হয়ে ছদ্মবেশে এ বিভিন্ন উপজেলার নির্জন এলাকায় আখড়া গেড়েছে। অন্যদিকে একই উপজেলার কাঁকনহাট থেকে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি জিহাদী বই-পুস্তক ও লিফলেটসহ আনসার তালহা ওরফে মামুন (৩৬) নামের এক জেএমবি ক্যাডারকে আটক করে র‌্যাব রাজশাহীর সদস্যরা। জেএমবি ক্যাডার তালহা জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী থানার মৃত মজিবর রহমানের ছেলে। র‌্যাব জানায়, তালহা ওরফে মামুন এলাকায় গেঞ্জি ব্যবসায়ী হিসেবে বাড়িভাড়া নিয়ে আত্মগোপন করেছিল। ব্যবসায়ীর বেশে সে বেশ কিছুদিন থেকে ওই এলাকার লোকজনকে জেএমবিতে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করছিল। সে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) দুর্ধর্ষ ক্যাডার। এছাড়া মঙ্গলবার রাজশাহীতে নিষিদ্ধ হরকত-উল- জিহাদের দুই সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। ওইদিন বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো আবদুল্লাহ আল মাসুদ ওরফে মাসুদ ম-ল (৩৫) ও বুলবুল রহমান ওরফে বাবু (২২)। এদের মধ্যে মাসুদ ম-লের বাড়ি মাগুরা ও বাবুর বাড়ি সাতক্ষীরা জেলায়। র‌্যাব জানায়, তারা নিষিদ্ধ হরকত-উল-জিহাদের সক্রিয় সদস্য। জিহাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা বিভিন্ন স্থানে সাংগঠনিক প্রশিক্ষণও নিয়েছে। এদের অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণও আছে। এর আগে গত ৫ জানুয়ারি জেলার বাগমারা থেকে জেএমবি তালিকাভুক্ত সদস্য শহিদুল ইসলাম (৩১) ওরফে শিবির শহিদুলকে বাগমারা থানার পুলিশ গ্রেফতার করে। সে উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে। পুলিশ জানায়, জঙ্গীবিরোধী অভিযান শুরু হলে গত সেপ্টেম্বর মাসে শিবির শহিদুল আত্মগোপন করে। কিছুদিন আগে এলাকায় ফিরে এসে দল গোছাতে শুরু করে এবং বিভিন্ন দাঙ্গায় জড়িয়ে পড়ে। এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পর থানা পুলিশের একটি দল তাকে ধরার জন্য অভিযান চালায়। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে শহিদুল পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে পুলিশ তাকে ধাওয়া দিয়ে ধরে ফেলে। বাগমারা থানার ওসি সেলিম হোসেন জানান, শহিদুল ইসলাম পুলিশের তালিকাভুক্ত জেএমবির সদস্য। তার বিরুদ্ধে জেএমবির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এর আগে গত ২৫ ডিসেম্বর জেএমবি সক্রিয় সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে মন্টুকে (৫২) উপজেলার হামিরকুৎসা বাজার থেকে গ্রেফতার করা হয়। মন্টু বাগমারা থানার থানার তালিকাভুক্ত জেএমবি সদস্য। তার নামে থানায় একাধিক মামলাও আছে। এরমধ্যে একটি মামলা হত্যা মামলার আসামিও সে। ওসি জানান, মন্টু এলাকায় ফিরে জেএমবি সদস্যদের সংগঠিত করার কাজ করছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া সম্পতি চারঘাট ও বাঘা থানা পুলিশ আরও দুই জেএমবি সদস্যকে গ্রেফতার করে। যোগাযোগ করা হলে রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোয়াজ্জেম হোসেন ভুইয়া বলেন, তারা (জঙ্গীরা) নানা বেশ ধারণ করে বিভিন্ন উপজেলায় অপতৎপরতায় লিপ্ত থাকলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনী সজাগ রয়েছে। পুলিশ ও র‌্যাবের অভিযানও অব্যহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন জঙ্গীকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।
×