ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা নেটওয়ার্কের আওতায় সারাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২ মার্চ ২০১৭

ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা নেটওয়ার্কের আওতায় সারাদেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বাস্থ্য সেক্টরের উন্নয়নের ধারায় উর্ধগতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেন, এই সেক্টরের বহুমুখী উন্নয়ন কার্যক্রম দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। দেশের সর্বত্র বিস্তার লাভ করেছে ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবার নেটওয়ার্ক। এমন মজবুত অবকাঠামোর ওপর দাঁড়িয়ে দেশে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের মাত্রার ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামো বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশের মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনবল বৃদ্ধি, অবকাঠামোর উন্নয়ন, মাতৃ ও শিশু মৃত্যু হ্রাস, ওষুধের সরবরাহ বৃদ্ধি, কমিউনিটি ক্লিনিক চালু, স্বাস্থ্য খাতে ডিজিটাল বাংলাদেশ কার্যক্রম ইত্যাদি উন্নয়নমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার। দেশের ৯৯ ভাগ উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে রয়েছে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিসেবার ব্যবস্থা। বর্তমানে প্রতি মাসে ৮০ থেকে ৯০ লাখ মানুষ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সেবা নেন। দেশে অনূর্ধ ১২ মাস বয়সের শিশুদের সকল টিকা প্রাপ্তির হার ৮১ ভাগ। পোলিও ও ধনুষ্টঙ্কারমুক্ত হয়েছে দেশ। বুধবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএইচআরএফ) আয়োজিত স্বাস্থ্য সেক্টরের ওপর ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ কথা জানান। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, এমপি, স্বাস্থ্য সচিব সিরাজুল ইসলাম, হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি তৌফিক মারুফ, সহসভাপতি নুরুল ইসলাম হাসিব ও সাধারণ সম্পাদক নিখিল মানখিন। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও বগুড়ায় রোগীর স্বজনদের ওপর ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হামলার সত্যতা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেন, তদন্ত কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন আমার হাতে পৌঁছেছে। হামলার আলামত পাওয়া গেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী আগামী দু’একদিনের মধ্যে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে পরীক্ষা- নিরীক্ষার উচ্চ আদায়ের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সরকারী হাসপাতালে নামমাত্র ডায়াগনসিস ফি নেয়া হয়। সরকারী হাসপাতালের অনেকগুণ বেশি ফি নেয়া হয় বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে। ফি কমিয়ে আনার জন্য ওই সব প্রতিষ্ঠানের মালিকদের আহ্বান জানিয়ে আসছি। খুব শীঘ্রই ওই সব প্রতিষ্ঠানের মালিকদের আবার ডেকে এনে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। বিপুল জনবল নিয়োগ দেয়ার পরও দেশে চিকিৎসক সঙ্কট রয়ে গেছে উল্লেখ করে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, অনেক চেষ্টা করে কয়েক বছর আগে নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের গ্রামে পাঠানো হয়। দু’বছর না যেতেই তারা শহরে আসার জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কেউ কেউ উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণের অজুহাত দেখাচ্ছেন। গ্রাম আবার ডাক্তারশূন্য হতে চলেছে। তবে যাদের সেবার মনোভাব রয়েছে, তারা গ্রামের সাধারণ মানুষদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ ও ওষুধের মানের বিষয়ে কোন রকম ছাড় দেয়া হবে না দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মেডিক্যাল শিক্ষার সঙ্গে মানুষের জীবন-মরণের সম্পর্ক রয়েছে। বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলোর মান বজায় রাখতে হবে। নিম্নমানের কলেজ থেকে বের হয়ে একজন দক্ষ চিকিৎসক এবং মানসম্মত চিকিৎসাসেবা দেয়া সম্ভব নয়। এ ধরনের চিকিৎসকরা অনেক সময় জাতির জন্য হুমকি হয়ে ওঠেন। ভাড়াটে ক্যাম্পাসে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ থাকে না। তাই সম্প্রতি বেশ কয়েকটি কলেজে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কয়েকটি কলেজকে ইতোমধ্যে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়েও একই কথা প্রযোজ্য। কয়েক বছর ধরে চলা পরিদর্শন কমিটির প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে অনেক ওষুধ কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। আর অনেক ওষুধ কোম্পানির ওপর মনিটরিং কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, প্রতি জেলায় মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন করা হবে না। চলমান কলেজগুলোর শিক্ষার মান বাড়ানো বিষয়েই বেশি নজর দেয়া হবে। বেসিক সায়েন্স শিক্ষকের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পাচ্ছে। বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নজরে এসেছে। সচিবের নেতৃত্বে এ বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। টাঙ্গাইলের তিনটি উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে স্বাস্থ্যবীমা কার্যক্রম চলছে। ওই প্রকল্প সফল হলে তা সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হবে। চিকিৎসকদের রোগী দেখার ফি নিয়ে কোন নীতিমালা নাই। রাজধানীর মহাখালীতে পৃথক আরেকটি ১ হাজার বেডের ক্যান্সার হাসপাতাল স্থাপন করা হবে। স্বাস্থ্য সচিব সিরাজুল ইসলাম বলেন, বেসরকারী স্বাস্থ্যসেবা যেন আজ ব্যবসা হয়ে গেছে। কোন বেসরকারী চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান সেবার চেয়ে ব্যবসামুখী হয়ে উঠলে রেগুলেট করা ছাড়া আমাদের তেমন কিছু করার থাকে না। তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি না। এদিকে, ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাংবাদিকরা বেসিক সায়েন্স শিক্ষকদের সংখ্যা হ্রাস, রোগী দেখার ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের উচ্চ ফি আদায়, কর্মস্থলে চিকিৎসকদের উপস্থিত ও বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে জবাবদিহি না থাকা, উপঢৌকন গ্রহণ করে সরকারী হাসপাতাল থেকে চিকিৎসকদের বাইরে রোগী পাচার, উচ্চ ডায়াগনসিস ফি, অপারেশন থিয়েটার চালানোর ক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনা, ওষুধের কাঁচামাল গোপনে বিক্রি, ওষুধের জেনেরিক নাম ব্যবহারে কারখানার মালিকদের অনীহা, ১১৭টি ওষুধ ছাড়া বাকি ওষুধের মূল্য নির্ধারণে কোম্পানির মালিকদের একচ্ছত্র অধিকার ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেন। ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানকে দেখতে হাসপাতালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ॥ বুধবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী লাখি আখন্দকে দেখতে যান। তিনি সেখানে তাদের শয্যা পাশে বসেন এবং চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। এবং কর্তব্যরত চিকিৎসকদের দেশবরেণ্য এসব ব্যক্তিবর্গ চিকিৎসায় যেন কোন রকম ক্রটি না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে বলেন। এ সময় বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল হান্নান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া তিনি একই হাসপাতালে সাবেক সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামানের স্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী সাইফুজ্জামান শেখরের মাতা বেগম আসাদুজ্জামানকে দেখতে যান।
×