ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নীলফামারীতে বৈদিক যুগের পাণ্ডবদের প্রাসাদ, মন্দির

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২ মার্চ ২০১৭

নীলফামারীতে বৈদিক যুগের পাণ্ডবদের প্রাসাদ, মন্দির

তাহমিন হক ববী ॥ প্রায় হাজার বছরের পুরনো বৈদিক যুগের বিরাট রাজার প্রাসাদ ও মন্দিরের সন্ধান মিলেছে। এটি পাওয়া গেছে নীলফামারী জেলা সদরের গোড়গ্রাম ইউনিয়নের বিন্না দীঘি-তথা নীলসাগর পাড়ের ঢিবিতে। পরীক্ষামূলক অনুসন্ধানের সময় প্রতœতত্ত্ববিদরা এটি আবিষ্কার করেন। অনুসন্ধানকালে মাটির নিচে পাওয়া প্রাচীন নির্দশন দেখতে সেখানে প্রতিদিন ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বিশেষ করে সনাতন ধর্মের নারী-পুরুষদের উপচেপড়া ভিড় পরিলক্ষিত হচ্ছে। এদিকে আজ ২ মার্চ বৃহস্পতিবার দুপুরে এই স্থানের পুরো খনন কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। সংশ্লিষ্টরা জানান, খ্রিস্টপূর্ব আনুমানিক অষ্টম ও নবম শতাব্দীর কোন এক সময়ে এই দীঘির খনন কাজ শুরু করা হয়েছিল। বিরাট দীঘি ও ‘বিন্না দীঘি’ নামে এর পরিচিতি থাকলেও বর্তমানে এর নাম দেয়া হয়েছে নীলসাগর। হিন্দু শাস্ত্রমতে, খ্রিস্টপূর্ব নবম হতে অষ্টম শতাব্দীতে পান্ডবরা কৌরবদের চক্রান্তের শিকার হয়ে ১২ বছরের বনবাস ও ১ বছরের অজ্ঞাতবাসে যেতে বাধ্য হন এবং মৎস্য দেশের রাজা বিরাটের রাজধানী ছিল উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকাজুড়ে। এ স্থানটিতে ছদ্মবেশে বসবাস শুরু করেন তারা। মনে করা হয়, তখনকার দিনে নির্বাসিত পা-বদের তৃষ্ণা মেটাতে বৈদিক রাজা বিরাট এ দীঘিটি খনন করেছিলেন। কারও কারও মতে, রাজা বিরাট তার বিশাল গরুর পালের জন্য পানির সংস্থান করতেই এ দীঘি খনন করেন এবং তার কন্যা বিন্নাবতীর নামে এর নামকরণ করেন। একদিকে দীঘি খনন অন্যদিকে এর চারদিক ঘিরে তৈরি করা হয় বিরাট রাজার কন্যা বিন্নার রাজপ্রাসাদ ও পূজোর জন্য মন্দির, যা কালের আর্বতে মাটির নিচে তলিয়ে যায়। এখন সেগুলোই খননের মাধ্যমে সন্ধ্যান করা হচ্ছে। সদর উপজেলার জিরোপয়েন্ট চৌরঙ্গী মোড় থেকে উত্তর-পশ্চিম কোণে ১৪ কিলোমিটার দূরে গোড়গ্রাম ইউনিয়নের ধোবাডাঙ্গা মৌজায় ৫৩.৯০ একর জমির ওপর নীলসাগরের এই বিন্না দীঘির অবস্থান। এর জলভাগ ৩২.৭০ একর, এবং চারদিকের ডিপিপাড়ের জমির পরিমাণ ২১ একরের মতো। দীঘির গভীরতা গড়ে ৩০ ফুট। সারা বছর দীঘি ভরে পানি থাকে। ১৯৮৩ সালে নীলফামারীর তৎকালীন জেলা প্রশাসক এম এ জব্বার এই দীঘিকে পর্যটন ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত করতে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং নীলফামারীর নামানুসারে বিন্না দীঘির পরিবর্তে এর নামকরণ করা হয় নীলসাগর। মহাস্থানগড় জাদুঘরের সহকারী তত্ত্বাবধায়ক এস এম হাসনাত বিন ইসলাম জানান, বিরাট রাজার এই বিন্নাদীঘি খনন আরও অনেক প্রাচীন নির্দশন খুঁজে পাওয়া যাবে। ঐতিহাসিক এ স্থানটি সম্পর্কে রংপুর জাদুঘরের তত্ত্বাবধায়ক এবং খননকারী দলের সদস্য আবু সায়েদ ইনাম তানভিরুল বলেন, ১৮০৭-১৮০৮ সালে ব্রিটিশ প্রতœতত্ত্ববিদ ড. ফ্রান্সিস এ অঞ্চল ভ্রমণ করেছিলেন। সূত্রমতে, রাজা বিরাট আজও স্বনামধন্য এবং রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের এই এলাকাটি বাৎসরিক তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত। নীলফামারীর এই স্থানে ঐতিহাসিক মৎস্য দেশের রাজধানী ও সনাতন (হিন্দু) সম্প্রদায়ের অন্যতম তীর্থক্ষেত্র ‘রাজা বিরাট’। কিংবদন্তী আছে, হিন্দু পৌরাণিক উপাখ্যান মহাভারতের বর্ণনায় যে রাজা বিরাটের নাম উল্লেখ রয়েছে। পৌরাণিক কাহিনী মতে, রাজা বিরাট নেপাল রাজ্যের বৈরাট নগরাধিপতি মহারাজ উত্তরের একমাত্র পুত্র ছিলেন। তিনি মৃগয়ার্থে বৈরাট নগর হতে আলোচ্য বিরাটে আগমন করেন। এই বিরাট বনের এক উচ্চ ভূমিতে রাজবাড়ী ও নগর স্থাপন করেন। মহাভারতে বিরাট রাজাকে বিরাট নামেই অভিহিত করা হয়। তিনি তার রাজ্যে হাজার হাজার দীঘি-পুস্করিনী খনন করে মৎস্য চাষ করে ‘মৎস্যরাজ বিরাট’ নামে খ্যাত হয়েছিলেন।
×