ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদে প্রধানমন্ত্রী

জঙ্গীপথ ছেড়ে ফিরে এলে পুনর্বাসন ও আইনী সহায়তা

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২ মার্চ ২০১৭

জঙ্গীপথ ছেড়ে ফিরে এলে পুনর্বাসন ও আইনী সহায়তা

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে তার সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, ভবিষ্যতে যেসব বিপথগামী জঙ্গী সদস্য জঙ্গীবাদের পথ থেকে ফিরে আসবে তাদের আইনী সহায়তা প্রদানসহ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এদেশের মানুষ সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গীবাদকে ঘৃণা করে। আর দেশের সুষম উন্নয়ন ও নিরাপত্তার জন্যও সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গীবাদ হুমকিস্বরূপ। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার জাতীয় সংসদে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারী দলের সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদারের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জঙ্গীবাদ দমনে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এ জন্য জঙ্গী দমনে সারাবিশ্বে বাংলাদেশ আজ ‘রোল মডেল’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেশ কিছু সফল অভিযানে শীর্ষস্থানীয় জঙ্গী নেতাসহ গুরুত্বপূর্ণ সদস্য গ্রেফতার ও নিহত হয়। এতে বিপুল অস্ত্র ও গোলা-বারুদ উদ্ধার করা হয়। তিনি বলেন, এ সব অভিযানের ফলে বর্তমানে জঙ্গী তৎপরতা বহুলাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে এবং জঙ্গী দমনে এ সাফল্য আন্তর্জাতিক পরিম-লে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে সক্ষম হয়েছে। বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দও বাংলাদেশের জঙ্গীবাদবিরোধী অবস্থানের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। এ প্রসঙ্গে সংসদ নেতা আরও জানান, জঙ্গীবাদবিরোধী ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক জঙ্গী সদস্য ইতোমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে এবং তাদের মোটিভেশন ও সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সন্দেহভাজন নিখোঁজ ব্যক্তি এবং পলাতক জঙ্গীদের সঠিক তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নিখোঁজ ব্যক্তির খোঁজ পাওয়া গেছে। অনেকে তাদের নিজ গৃহে ফিরে এসেছে। এটি বর্তমান সরকারের জঙ্গীবাদবিরোধী অন্যতম সফলতা। জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাস দমনে বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা জানান, জঙ্গী সংগঠনগুলোর অনলাইনভিত্তিক প্রচারের দিকে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজরদারি আরও বৃদ্ধি করা হবে। এ জাতীয় প্রচারের মাধ্যমে যাতে জনগণের মধ্যে জঙ্গীবাদী মতাদর্শের র‌্যাডিক্যালাইজেশন না ঘটে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এছাড়া আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে জঙ্গী দমনের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তিনি জানান, জঙ্গীবাদবিরোধী ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক সংগঠন, মসজিদের ইমাম, আলেম সমাজ, শিক্ষক-ছাত্র সমাজ, অভিভাবকবৃন্দ, বুদ্ধিজীবী, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন এবং সর্বস্তরের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে জঙ্গীবাদ ও উগ্র সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। রফতানি বৃদ্ধির হার অব্যাহত ॥ সংসদ সদস্য সেলিম উদ্দিনের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও ব্যবসাবান্ধব বিভিন্ন কার্যক্রমের ওপর নির্ভর করে। আওয়ামী লীগ সরকার যুগোপযোগী রফতানি নীতি ও আমদানি নীতি আদেশ প্রণয়ন করে আমদানি-রফতানি খাতকে বেগবান করেছে। তিনি বলেন, রফতানি ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার বিভিন্ন খাতে আর্থিক সহায়তা প্রদান করছে। রফতানি পণ্যের অধিক পরিমাণ কাঁচামাল আমদানি সুবিধা সৃষ্টির লক্ষ্যে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রফতানি উন্নয়ন তহবিল গঠন করে স্বল্পসুদে ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া বর্তমান সরকার দূরদর্শী ও অক্লান্ত বাণিজ্যিক কূটনৈতিক সাফল্যের কারণে বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশে পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা আদায় করেছে। ফলে এসব দেশে পণ্য রফতানি বৃদ্ধির হার অব্যাহত আছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে আমদানি-রফতানি প্রক্রিয়া সহজীকরণে বর্তমান সরকার সর্বদাই নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের রফতানিবান্ধব নীতি ও আর্থিক প্রণোদনা প্রদানসহ নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে রফতানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে। রফতানি প্রক্রিয়া সহজীকরণের লক্ষ্যে আরও উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে বহুমুখী পদক্ষেপ ॥ সরকারী দলের সংসদ সদস্য কামরুল আশরাফ খানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, দেশের সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে বর্তমান সরকার বহুমুখী পদক্ষেপ ইতোমধ্যেই গ্রহণ করেছে। সমীক্ষার মাধ্যমে মোট ২২৭টি দুর্ঘটনাপ্রবণ (ব্ল্যাক স্পট) স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। তার মধ্যে রক্ষণাবেক্ষণ খাতের আওতায় বিভিন্ন মহাসড়কের ২৭টি ব্ল্যাক স্পটের প্রতিকারমূলক কাজ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। অবশিষ্ট ব্ল্যাক স্পটে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ১৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ চলছে। তিনি জানান, জাতীয় মহাসড়ক পর্যায়ক্রমে ধীরগতি যানবাহনের জন্য পৃথক লেনসহ ৪ লেনে উন্নীতকরণের নিমিত্তে ১ হাজার ৬৬৬ কিলোমিটার মহাসড়কের ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি ও ডিটেইল্ড ডিজাইনের কাজ সমাপ্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় গুরুত্বপূর্ণ রেলক্রসিং ও ইন্টার সেকশনে যথাক্রমে ওভারপাস ও ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হচ্ছে। জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে ইজিবাইক, নসিমন, করিমন, ভটভটি ও ব্যাটারিচালিত যানবাহন/রিক্সা চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সংসদ নেতা জানান, সড়কপথে দুর্ঘটনা রোধ ও নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ফিটনেস বিহীন মোটরযান যাতে রাস্তায় চলাচল করতে না পারে সে কারণে গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট ম্যানুয়েল পদ্ধতির পরিবর্তে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রদানের লক্ষ্যে চারটি বিভাগীয় শহরে ৫টি মোটরযান পরিদর্শন কেন্দ্র স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পথচারীকে জেব্রা ক্রসিং, ফুটওভারব্রিজ ও আন্ডারপাস ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। নারীর ক্ষমতায়নে সারাবিশ্বে বাংলাদেশ ষষ্ঠ ॥ সরকারী দলের সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, টেকসই গণতন্ত্রের জন্য নারীর ক্ষমতায়ন বাড়াতে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার গত ৬ বছরই শুধু নয়, ২০০৮ সালে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। ২০১৫ সালে প্রকাশিত গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট অনুযায়ী নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান এখন বিশ্বে ষষ্ঠ। তিনি জানান, স্পীকার ছাড়াও সংসদ নেতা, উপনেতা, বিরোধী দলের নেতা হিসেবে নারীরা দায়িত্ব পালন করছেন। মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রীসহ ২ পূর্ণমন্ত্রী এবং ৩ প্রতিমন্ত্রী, সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ২১ নারী সরাসরি নির্বাচিত এবং সংরক্ষিত ৫০টি আসনে নারী এমপি রয়েছেন। উপজেলা পরিষদে ১টি মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদে নারীর জন্য ৩টি করে সংরক্ষিত আসন রাখা হয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে মোট ৪ হাজার ৫৪০টি ইউনিয়ন পরিষদে ১৩ হাজার ৬২০ নারী সদস্য রয়েছেন। এক জমিতে চার ফসল ॥ সরকারী দলের সংসদ সদস্য সাধন চন্দ্র মজুমদারের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, আগামী দিনের বাড়তি জনসংখ্যার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বছরে একই জমি থেকে ২-৩টি ফসলের পরিবর্তে ৪টি ফসল অন্তর্ভুক্ত করে নতুন ফসলধারা উদ্ভাবিত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় এই ধারা অনুসরণ করে সন্তোষজনক ফলন পাওয়া গেছে। দেশের ফসলের নিবিড়তা ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে এ ধারার প্রচলন বিশেষ অবদান রাখবে।
×