ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশকে নিয়ে একাধিক ভাবনায় শ্রীলঙ্কা

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২ মার্চ ২০১৭

বাংলাদেশকে নিয়ে একাধিক ভাবনায় শ্রীলঙ্কা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ তামিম, মুমিনুল, মাহমুদুল্লাহ, সাকিব, মুশফিক, মুস্তাফিজ, তাসকিন, মিরাজদের নিয়ে ভাবতে হচ্ছে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটারদের। এরসঙ্গে যোগ হয়েছেন বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কান কোচিং স্টাফরাও। বাংলাদেশ প্রধান কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহে শ্রীলঙ্কান। ব্যাটিং কোচ থিলান সামারাবিরাও শ্রীলঙ্কান। আবার ফিটনেস ট্রেইনার মারিও ভিল্লাভারায়েনও একজন শ্রীলঙ্কান। একেতো বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের নিয়ে ভাবনায় শ্রীলঙ্কানরা। আরেকদিকে ৭ মার্চ প্রথম টেস্ট দিয়ে শুরু হতে যাওয়া পূর্ণাঙ্গ সিরিজে লঙ্কানদের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশের কোচিং স্টাফও। এবার সিরিজে শ্রীলঙ্কাকে আসলে একাধিক ভাবনাতেই ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশ। সেই ভাবনার ফল কি তাহলে আজ মরাতুয়ায় শুরু হতে যাওয়া দুইদিনের প্রস্তুতি ম্যাচেই দেখা মিলবে? সেই ভাবনা যে ভালভাবেই করা হচ্ছে, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের বিপক্ষে আসন্ন দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক হওয়া রঙ্গনা হেরাথই। তিনি বলেছেন, ‘আমি মনে করি শ্রীলঙ্কা সফরে আসা বাংলাদেশের সেরা দল এটিই। কয়েক মাস আগেই ওরা ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে। যদিও তারপর ফর্ম খুব ভাল যায়নি, নিউজিল্যান্ড ও ভারতে হেরেছে।’ সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘ওদের (বাংলাদেশের) দলে এত বেশি শ্রীলঙ্কান যে আমাদের দল ও দলের খেলা নিয়ে ওদের একটা ভাল ধারণা তৈরি হয়েছে। ওরা তিনজনই (হাতুরাসিংহে, সামারাবিরা ও ভিল্লাভারায়েন) বাংলাদেশের জন্য দারুণ কাজ করে যাচ্ছে, বিশেষ করে হাতুরাসিংহে। এ কারণেই আমি বলছি, এই সিরিজটি হবে আমাদের জন্য দারুণ চ্যালেঞ্জিং। অন্য কোচদের চেয়ে আমাদের সম্পর্কে ওদের ধারণা বেশি।’ অবশ্য এত সুবিধার পরও দলের ওপর বিশ্বাস রাখছেন হেরাথ। বলেছেন, ‘আমার দলের ওপর বিশ্বাস আছে। বাংলাদেশের জন্য এটা অনেক বড় সুযোগ ক্রিকেটবিশ্বকে তাদের সামর্থ্য দেখানর। আমি যখন শ্রীলঙ্কার হয়ে খেলতাম তখন শ্রীলঙ্কা এই পর্যায়ে ছিল।’ বাংলাদেশের জন্য দুই টেস্টকে সামনে রেখে শ্রীলঙ্কার টেস্ট দল ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে হেরাথ ছাড়াও রাখা হয়েছে আর এক বামহাতি স্পিনার মালিন্দা পুষ্পকুমারাকে। জাতীয় দলের নতুন এই ক্রিকেটারকে নিয়ে হেরাথ অনেক আশাবাদী। বলেন, ‘সে অনেক অভিজ্ঞ বোলার, ঘরোয়া লীগে তার ৫০০’র বেশি উইকেট আছে। যখন সুযোগ আসবে আমরা তাকে খেলাব। আমি নিশ্চিত সে দ্রুতই সুযোগ পাবে।’ হেরাথ ঘরোয়া ক্রিকেটে হাতুরাসিংহের সঙ্গে খেলেছেন। সেই হাতুরাসিংহে এখন বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ। তার হাত ধরে দল উন্নতিও করছে। তাই হাতুরাসিংহেকেই বেশি ভয় যেন হেরাথের। সাবেক শ্রীলঙ্কান টেস্ট ওপেনার ছিলেন হাতুরাসিংহে। শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলের সহকারী কোচও ছিলেন। আট বছর আগে নিজ দেশে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। এরপর আর ফেরেননি লঙ্কায়। ১৯৯১ সালে শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলে অভিষেকের পর খেলেছেন ২৬ টেস্ট ও ৩৫ ওয়ানডে। ক্রিকেটারের চেয়ে কোচিংয়েই বেশি নাম কামিয়েছেন। শুরুটা হয়েছিল শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দলের হয়ে। তরুণ বয়স থেকেই এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস, দীনেশ চান্দিমালদের শিখিয়েছেন। জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পর ‘এ’ দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন থিলান সামারাবিরা, রাসেল আর্নল্ডরা। তারাও হাতুরাসিংহের কারণেই নতুন করে ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে শুরু করেছিলেন। এরপর ২০০৯ সালে জাতীয় দলের কোচিং করানোর সুযোগ আসে। নিয়োগ পান প্রধান কোচ ট্রেভর বেলিসের সহযোগী হিসেবে। ভালই চলছিল সবকিছু। কুমার সাঙ্গাকারা, মাহেলা জয়াবর্ধনেদের ভক্ত হয়ে ওঠেন হাতুরাসিংহে। এমন সময়ে শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলের সামনে জিম্বাবুয়ে সফর পড়ে। কোচিংয়ের লেভেল ‘থ্রি’র পরীক্ষা সামনে চলে আসাতেই লাগে ঝামেলা। প্রধান কোচ বেলিসকে জানিয়ে ছুটি নিয়ে উড়াল দেন অস্ট্রেলিয়ায়। তাতেই চটেছিলেন ওই সময়কার শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের সভাপতি ডি এস ডি সিলভা। জিম্বাবুয়ে সফর থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে কেন সিলভার অনুমতি নেননি হাতুরাসিংহে, সেটাকেই অপরাধ হিসেবে সামনে আনা হয়। হাতুরাসিংহে অস্ট্রেলিয়া থাকা অবস্থাতেই জানতে পেরেছিলেন চাকরি হারিয়েছেন। একইসঙ্গে দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা। অভিমানে আর ফেরেননি। অস্ট্রেলিয়াতেই অভিবাসী হয়ে যান। সেখানেই শুরু করেন কোচিংয়ের কাজ। পরবর্তীতে ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্লাব ও ইংলিশ জাতীয় দলের হয়ে কাজ করে অনেকখানি জনপ্রিয় হয়েছিলেন কোচ হিসেবে। বিগব্যাশেও কোচিং করান। এরপর ২০১৪ সালে বাংলাদেশের কোচ হিসেবে নিয়োগ পান। তার হাতে আমূল পরিবর্তন হতে থাকে এশিয়ার দলটির। ধারাবাহিক সাফল্য এনে দেয়ার পথে এখনও কোচ হিসেবে রয়েছেন এই লঙ্কান কোচ। এবার তার মিশন নিজের মাতৃভূমি শ্রীলঙ্কা। হাতুরাসিংহের এবারের সফরটির সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই আবেগ জড়িত। তবে তিনি এখন বাংলাদেশের কোচ। সেভাবেই নিজেকে মেলে ধরতে চান। বলেছেন, ‘২০০৯ সালের ওই ঘটনার পর আমি চলে গিয়েছিলাম। দুঃস্বপ্নটা এখনও পোড়ায়। আরও বেশি পোড়ায় দেশের ক্রিকেটের জন্য কিছু করতে না পারার কষ্ট। তবে আমি তখন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তারজন্য আমি সন্তুষ্ট।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলছি বলে খুশি। অন্তত এটা আমার মাতৃভূমিকে দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। এখান থেকে আমি অনেক সমর্থন পেয়েছি, উৎসাহ আর প্রেরণা পেয়েছি। এখানে খেলতে আসার সুযোগ দেয়ার জন্য এসএলসিকে বিসিবির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমাদের (বাংলাদেশ) বিপক্ষে লঙ্কান দল সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলেছে। দুই বোর্ড সবসময় একে অপরের জন্য কাজ করেছে। সমর্থকদেরও ধন্যবাদ।’ জানিয়েও দিয়েছেন শ্রীলঙ্কা শক্তিশালী দলই আছে। যতই দলে অভিজ্ঞ সাঙ্গাকারা, জয়াবর্ধনে, ম্যাথুসরা অনুপস্থিত থাকুন না কেন। হাতুরাসিংহে জানিয়েছেন, ‘সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ায় শ্রীলঙ্কানদের পারফর্মেন্স দেখেছেন নিশ্চয়ই। কাজেই এখানে ওদের হালকাভাবে নেয়ার কোন সুযোগই নেই।’
×