ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ক্রাইম পেট্রোল vs ফ্যামিলি ড্রামা

প্রকাশিত: ০৫:২২, ২ মার্চ ২০১৭

ক্রাইম পেট্রোল  vs ফ্যামিলি ড্রামা

খুন। ধর্ষণ। স্বামীর সঙ্গে অন্য নারীর বিতর্কিত সম্পর্ক। স্ত্রীর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা হরহামেশা। ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব। নেশাগ্রস্ত স্বামী বা সন্তানের পাশবিক অত্যাচার। স্কুল বা কলেজ পড়ুয়া সুবোধ বালক কিংবা বালিকাকে ফাঁদে ফেলে জীবন পয়মাল করা। কারও সর্বস্ব লুটে নেয়ার চতুর ফন্দি ইত্যাদি। প্রায় অভেদ্য রহস্যের জাল ছড়িয়ে জঘন্যতম অপরাধ প্রতিনিয়ত সংঘটিত হচ্ছে আমাদের জাপিত জীবনে। ক্রাইম পেট্রোল। সংঘটিত সব অপকর্মের সত্য গল্পে নির্মিত টিভি সিরিজ। বিনোদনের খোরাক হিসেবে এসব অপরাধনির্ভর গল্প আমাদের চিত্তে উৎফুল্লের মদদ যোগা”েচ্ছ। বলতে গেলে এক রকম বুদ হয়ে আছি অপরাধের ইন্দ্রজালে। পাশাপাশি পারিবারিক কলহ। সন্দেহ। পরশ্রীকাতরতা। বউ-শাশুড়ির পাল্টাপাল্টি কূট কৌশল। রসাল অনৈতিক সম্পর্ক। নারী প্রধান গল্পনির্ভর ফ্যামিলি ড্রামা আমাদের ঘরনিদের মনোজগতের আহার। এসব গল্প নারীকেন্দ্রিক হওয়ায়, এক্ষেত্রে পুরুষদের খুব একটা টানে না। সমাজ-জীবনের ও বাস্তবতার সঙ্গে অপরাধ সংশ্লিষ্টতার বিষয় পুরুষকে বেশি আকৃষ্ট করে। ২০০৩ সালে যখন সনি এন্টারটেইনমেন্ট টেলিভিশন বাস্তব অপরাধনির্ভর টিভি সিরিজ ক্রেইম পেট্রোল দেখানো শুরু করল। খুব অল্প সময়ে এর দর্শকপ্রিয়তা ভীষণভাবে বেরে গেল। ভারতী গান, সিনেমা, টিভি শো আমাদের দেশে বরাবরই ব্যাপক জনপ্রিয়। বিদ্যাৎ ও প্রযুক্তির কল্যাণে আমাদের দেশের প্রায় সব এলাকায় দেশী টিভি চ্যানেলের পাশাপাশি ভারতীয় চ্যানেলের উপস্থিতি ও কদর দুটোই বেশ। সত্য ঘটনা। নতুন নতুন কেস স্টাডি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চুলচেরা অনুসন্ধান। ভাল চিত্রনাট্য এবং চরিত্রের প্রয়োজনে সাধারণ লোকদের দিয়ে অসাধারণ অভিনয় করিয়ে নয়া, এই সিরিজের বিশেষ বিশেষত্ব। গল্পের ক্লাইমেক্স থ্রিলার ইফেক্ট। দিন দিন ফ্যামিলি ড্রামার গৎবাধা কাহিনীকে ফিকে করে দিচ্ছে। কোন একটা পর্বে চোখ রাখলে মন আপনা আপনি বসে যায়। শেষ না করে উঠতে পারেন না অনেকেই। বছরের পর বছর এক বিষয় টানা হেঁচড়া করতে করতে ফ্যামিলি ড্রামা এখন নিজেই ক্লান্ত। কিন্তু তার পরও নতুন নতুন ক্লাইমেক্স তৈরি করে রমণীদের আকৃষ্টি করছে। রমণীরাও নির্মাতাদের হতাশ করছেন না। কিন্তু বিনোদন উপলক্ষে আমরা যা দেখছি, তা কী সত্যিকার কঠিন বাস্তবতা থেকে আমাদের মনকে মুক্তি দিচ্ছে? না কী নতুন নতুন জিজ্ঞাসা তৈরি করছে? মানবমন সব সময় অপকর্মের গন্ধ খোঁজে। সন্দেহ করতে বা জাগাতে আমাদের জুড়ি নেই। আর এটাই হয়ত বিনোদন নির্মাতাদের মূলধন! যদিও এই অনুষ্ঠান থেকে একটা ইতিবাচক বার্তা দর্শকদের দেয়া হয় তা হলো ‘অপরাধ করে কখন পার পাওয়া যায় না।’ বাস্তব অভিজ্ঞতার জন্য এ প্রসঙ্গে কথা হয় বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী এ্যাডভোকেট নাজমুস সাকিবের সঙ্গে। তিনি বলেন, ক্রেইম পেট্রোলের থিমটা খারাপ না, অপরাধ করলে অপরাধী পার পাবে না, তাকে হতে হবে বিচারের মুখোমুখি। এটা কিন্তু ওভার অল একটা ভাল বার্তা। কিন্তু যখন জনরুচির কথা বিবেচনা করে ফিকশননির্ভর রগরগে গল্প দেখানো হয়, তখন কিন্তু সেটা জনসাধারণের জন্য এক রকম বিপদ হয়ে দাঁড়ায়। অপরাধীরাও তাদের হিংস্র মানসিকতাকে আরও ধারাল করে। সত্যিকার প্রেম হোক আর অপরাধ হোক যথাযথ উপলদ্ধি না করলে কোনটাই বোঝার উপায় নেই। জোর করা বা আইন প্রয়োগ করা এক রকম বৃথাই বলা যায়। দ্বন্দ্বিক জীবনের জঞ্জাল থেকে আমরা সকলেই মুক্তি চাই। বিনোদন আমাদের অসুখ ক্ষণিক ভুলিয়ে রাখে। কিন্তু ক্ষণিকের মহে আমরা যে বিষয়গুলোতে ডুবে যাচ্ছি তা আসলে আমাদের জন্য সুখকর হচ্ছে না। সব বিষয়ে অপরাধের গন্ধ। সব ধরনের সম্পর্কে সন্দেহের নজর। সামান্ন্য অমিলে স্বামী বা স্ত্রী বদল। কিংবা কার বিরুদ্ধে কত গভীর ষড়যন্ত্র করা যায়। অন্য দিকে কত নিখুঁত ভাবে খুন বা ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ সংঘটিত করা যায়। এই বিষয়গুলো কী সত্যই বিনোদনের বিষয় হতে পারে? সমাজে প্রতিনিয়ত ঘটছে অসংখ্য অপরাধ, তার কত ভাগ ব্যক্তিগতভাবে আমরা জানি বা রাষ্ট্র জানে। এর সত্যিকার পরিসংখ্যান কারও জানা নেই। তবে সুচতুর অপকর্ম সব সময় যে প্রকাশ পায় না তা বলা যায়। এমন উদাহরণও বেশ রয়েছে। টেলিভিশনে দেখা সূক্ষ্ম অপকর্মের চাল, অনেক অপরাধীর খুঁজতে থাক পরিকল্পনার মীমাংসাও হতে পরে! কিংবা বাড়াতে পারে অপরাধ প্রেম। পুলিশ বা প্রশাসন যে সব সময় চৌকস ভূমিকা পালন করবে তা কিন্তু বলা যায় না। শেষমেশ একটা বিপদের আশঙ্কা কিন্তু রয়েই যায়।
×