ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রাম স্টেশন এলাকায় তৎপর অপরাধী সিন্ডিকেট

প্রকাশিত: ০৪:৪৮, ২ মার্চ ২০১৭

চট্টগ্রাম স্টেশন এলাকায়  তৎপর অপরাধী সিন্ডিকেট

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম স্টেশন এলাকা আবারও স্পর্শকাতর হয়ে উঠছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে স্টেশনের আশপাশ এলাকায় থাকা অপরাধের স্বর্গরাজ্য চোরাই মোবাইল ও মাদক বিক্রির হাট। দীর্ঘ প্রায় ত্রিশ বছরেরও বেশি সময় এ ধরনের অপরাধ বাণিজ্য চলে এলেও পুলিশ কোন ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বরং জিআরপি ও আরএনবি সদস্যরা পুলিশের সঙ্গে যোগসাজশ করে স্টেশন এলাকায় আবারও স্থাপনা নির্মাণে সহায়তা করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা ও রেলওয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে শতাধিক দোকান উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়। মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে হকাররা আবারও ফুটপাথ দখলসহ ফুটওভারব্রিজ দখলের মধ্য দিয়ে আগের অবস্থানে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে, উচ্ছেদের পর পর ওইদিন বিকেলেই হকাররা সিন্ডিকেটবদ্ধ হয়ে স্টেশন এলাকায় প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। এ প্রতিবাদ সমাবেশে চট্টগ্রাম সম্মিলিত হকার্স ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ উল্টো হকারদের ওপর রেল কর্তৃপক্ষ হামলা করেছে এবং মালামাল লুটে নিয়েছে বলে অভিযোগ আনে। এ ব্যাপারে পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা জসিম্ উদ্দিন জানান, দফায় দফায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। অবৈধ দখলদাররা স্পর্শকাতর স্থানগুলো ঘিরে আবারও অবস্থান নিচ্ছে। তবে কর্তৃপক্ষও থেমে নেই। অভিযানের মাধ্যমে পুনরায় উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালিত হবে। একই স্থানে কয়েক দফায় অভিযান পরিচালিত হলে দীর্ঘ সময়ের অবৈধ দখলে যাওয়া সরকারী সম্পত্তি উদ্ধার সম্ভব হবে। অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রাম রেল স্টেশনের সামনে থাকা প্রায় আধাকিলোমিটার ফুটপাথজুড়ে দীর্ঘ প্রায় ত্রিশ বছর ধরে অবৈধ দখল নিয়ে ব্যবসা করে আসছে হকাররা। ফুটপাথকে কেন্দ্র করে হকাররা যেমন যাত্রী সাধারণের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে তেমনি পথচারীদের রাস্তা পারাপারের সুবিধার অন্যতম ফুটওভার ব্রিজটিও দখলে নিয়ে অসামাজিক কর্মকা-ের আখড়ায় পরিণত করা হয়েছে। দিনের বেলাতেই চট্টগ্রাম রেল স্টেশনের শিপমেন্ট ইয়ার্ডকে ঘিরে মাদকের হাট যেমন জমে উঠত তেমনি নতুন স্টেশন এলাকায় চোরাই মোবাইলের দোকান গড়ে তুলে পথচারীদের ক্রেতা বানিয়ে অপরাধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কারণ এসব চোরাই মোবাইল নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে অথবা কোন হত্যাকা- কিংবা ছিনতাইয়ের বিপরীতে নিয়ে আসা হয়েছে। তবে এসব মোবাইল ক্রয়-বিক্রির সঙ্গে যারা জড়িত তারা আইনের চোখে সমান অপরাধী হিসেবে গণ্য হবে। বিশেষ করে হতদরিদ্র অথবা দামী মোবাইল কেনার সামর্থ্য কম রয়েছে এমন ক্রেতারাই তাদের টার্গেট। এছাড়া দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে এ এলাকায় অপরাধের মাত্রা যেমন বেড়েছে তেমনি যাত্রীরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। অপরদিকে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চলাচলরত শাটল ট্রেনের শিক্ষার্থীদেরও এ অপরাধ স্পট ডিঙিয়ে স্টেশনে আগমন এবং বহির্গমন করতে হয়। বিভিন্ন সময় ছিনতাইকারীরা এ স্পট থেকে ছোঁ মেরে যাত্রী ও শিক্ষার্থীদের মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। সিআরবির এস্টেট বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা রয়েছে স্টেশনকেন্দ্রিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদসহ রেললাইন ঘিরে গড়েওঠা বাজারও উচ্ছেদ করতে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। গত ডিসেম্বরে দু’দফায় চট্টগ্রাম স্টেশনের পেছনে থাকা আইস ফ্যাক্টরি রোডে প্রায় এক হাজার স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলেও পরক্ষণেই তা আবার অবৈধ দখলে চলে গেছে। ষোলশহর স্টেশন এলাকায় গড়ে ওঠা রেললাইন কেন্দ্রিক বাজার যেমন উচ্ছেদ করা হয়েছিল তেমনি বেদখল হতেও বেশি সময় নেয়নি। একইভাবে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম স্টেশনের সামনে থাকা ফুটপাথ ও ফুটওভার ব্রিজ ঘিরে গেড়ে বসা অপরাধীরা ২৪ ঘণ্টা পর আবারও অবস্থান নিয়েছে ওই স্থানে।
×