ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংবাদ সম্মেলন

নির্যাতিত গৃহবধূর অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে

প্রকাশিত: ০৪:৪২, ২ মার্চ ২০১৭

নির্যাতিত গৃহবধূর অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে

নিজস্ব সংবাদদাতা, কেশবপুর, ১ মার্চ ॥ প্রতারক স্বামীর কারণে মাসুমা শারমিনের জীবনে নেমে এসেছে অন্ধকার। গত দুই বছর তিনি স্বামীর গৃহ থেকে বিতাড়িত হয়ে থানা-কোর্টসহ পথে পথে বিচারের আশায় ঘুরছেন। যৌতুক লোভি লম্পট স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করার কারণে শ্বশুরের করা উল্টো মামলার শিকার হয়ে তিনি দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। কেশবপুর থানার পুলিশ এস আই ফকির ফেরদৌসের বিরুদ্ধে জোর করে অর্থ আদায়, হুমকি, নির্যাতন, পলাতক প্রতারক স্বামীর গ্রেফতারসহ নিরাপত্তার দাবিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কেশবপুর প্রেসক্লাবে মাসুমা শারমিন সংবাদ সম্মেলন করেছেন। মনিরামপুর উপজেলার হাসাডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল হামিদ মোড়লের মেয়ে মাসুমা শারমিন সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেন, তাঁর স্বামী শার্শার বামুনিয়া গ্রামের মনিরুজ্জামান বিশ্বাসের ছেলে আবিদ হাসানের সঙ্গে ২০১৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বিয়ে হয়। দুই বছর তারা ঘর-সংসার করেন। প্রতারক স্বামী আবিদ হাসান তার অনুমতি ছাড়াই ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর শার্শা উপজেলার আমলা গ্রামের ইদ্রিস মোড়লের মেয়ে আল্পনাকে বিয়ে করে। এরপর তিন লাখ টাকা যৌতুকের জন্য আবিদ হাসান মাসুমা শারমিনের ওপর নির্যাতন শুরু করে। ৪ নবেম্বর মাসুমা শারমিনকে শ্বশুরবাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়। তিন মাস পর ২০১৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি স্বামী, শ্বশুর মনিরুজ্জামান বিশ্বাস ও শাশুড়ি তাতিয়া পারভিন মাসুমা শারমিনের পিতার বাড়ি গিয়ে যৌতুকের জন্য তাকে বেধড়ক মারপিট করে আহত করে। ওইদিন বিকেলে মাসুমা শারমিনকে কেশবপুর হাসপাতালের জরুরী বিভাগে ভর্তি করা হয়। দুই বছর আগে তিনি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। এছাড়া দেনমোহর ও খোরপোষ দাবি করে মনিরামপুর সহকারী জজ আদালতে আরও একটি মামলা করেন। দুইটি মামলা বিচারাধীন। ওই দুই মামলায় শার্শা থানায় তার স্বামী আবিদ হাসান মাসুমের বিরুদ্ধে বডি ওয়ারেন্ট ও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। কিন্তু পুলিশ তাকে আজও গ্রেফতার করেনি। এদিকে দুটি মামলা করার প্রায় ২ বছর পর তার শ্বশুর মনিরুজ্জামান মাসুমা শারমিনসহ তার বাবা, ভাই, ভগ্নিপতিসহ সাতজনকে আসামি করে মিথ্যে হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করে। মামলায় সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কেশবপুর থানার ওসিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। ওসির নির্দেশ মতে কেশবপুর থানার এস আই ফকির ফেরদৌস মামলার তদন্তভার গ্রহণ করেন। তিনি গত ৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় মাসুমা শারমিকে মোবাইল ফোনে থানায় ডেকে এনে ভয়ভীতি, গালিগালাজ ও হুমকি দিয়ে তিন লাখ টাকা উৎকোচ দাবি করেন এবং তাকে একটি অন্ধকার রুমে প্রায় ২-৩ ঘণ্টা আটকে রাখে। এ সময় মাসুমা শারমিনকে দিয়ে জোরপূর্বক অঙ্গীকারনামা লিখে নেন। এছাড়া তিন লাখ টাকা না দিলে তদন্ত রিপোর্ট তার বিপক্ষে দেয়ার এবং বিভিন্ন মামলায় জেলে দেয়ার হুমকি দেন। নিরুপায় হয়ে তিনি তার দুলাভাই মিজানুর রহমানের মাধ্যমে টাকা আনিয়ে এস আই ফকির ফেরদৌসকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে রিপোর্ট করাতে ও থানা থেকে মুক্তি নেন। টাকা নেয়ার পরও এস আই তার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন। ফলে ওই টাকা ফেরত চাওয়ায় ওই দারোগা মাসুমা শারমিনকে ভয়ভীতি দেখায় এবং বাড়াবাড়ি করলে অন্য মামলায় দিয়ে জেল খাটানোর হুমকি দেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, পুলিশ সুপারের কাছে নিজের ও আত্মীয়স্বজনের নিরাপত্তার দাবি করে দারোগার শাস্তির দাবিতে লিখিত অভিযোগ করেন। গত সোমবার সেই অভিযোগের তদন্তের দিন দেয়া হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই দারোগা রবিবার সন্ধ্যায় তার দুলাভাই মিজানুরকে থানায় তুলে নিয়ে যান এবং দু’ঘণ্টা আটকে রাখেন বলে সংবাদ সম্মেলনে মাসুমা শারমিন অভিযোগ করেন। এ ব্যাপারে এস আই ফকির ফেরদৌস জানান, কোর্টের দেয়া তদন্তের সঠিক রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট তার পক্ষে না যাওয়ায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ করেছে।
×