ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ময়মনসিংহে জমাট সার বরাদ্দ

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ২ মার্চ ২০১৭

ময়মনসিংহে জমাট সার বরাদ্দ

স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ ॥ শহরতলির শম্ভুগঞ্জ বাফার গুদামে দীর্ঘদিন ধরে মজুদ দুই হাজার ৭০০ মে.টন ইউরিয়া সার বস্তার ভেতর জমাট বেঁধে বিনষ্ট হয়ে গেছে। এর আগে ২০০৮ সাল থেকে এই সার গুদামের বাইরে খোলা আকাশের নিচে পড়েছিল। কয়েক দফা বৃষ্টিতে ভেজার পর নষ্ট সার রাতারাতি গুদামজাত করে রাখা হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে বাফার গুদামের এই সার মজুদ দেখানো হচ্ছে। এখন এই নষ্ট ইউরিয়া সার নিতে ডিলারদের বাধ্য করা হচ্ছে। আর ডিলাররা এই সার নিয়ে পড়েছে চরম বিপাকে। বিষয়টি জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির নিয়মিত মাসিক সভায় উত্থাপন করে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ চেয়েছে স্থানীয় ডিলাররা। জেলা প্রশাসক বিষয়টি বিসিআইসির চেয়ারম্যানকে অবহিত করবেন বলে ডিলারদের আশ্বস্ত করার পরও বন্ধ হয়নি নষ্ট ইউরিয়া বিতরণ। নষ্ট ইউরিয়া সার চাপিয়ে দেয়ার ভয়ে অনেক ডিলার সার উত্তোলন বন্ধ রেখেছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ ও হতাশ ডিলাররা। স্থানীয় সূত্র জানায়, শম্ভুগঞ্জ বাজারের বাফার গুদামে প্রায় তিন কোটি টাকা মূল্যের দুই হাজার ৭০০ মে.টন ইউরিয়া সার দীর্ঘদিন ধরে মজুদ দেখানো হচ্ছে। ২০০৮ সালের দিকে এই সার গুদামের বাইরে ফেলে রাখা হয়েছিল। বৃষ্টিতে ভিজে ওই সময়েই সার নষ্ট হয়ে যায়। এরপর তড়িঘড়ি ওই ইউরিয়া গুদামের ভেতরে ঢোকানো হয়। আমদানি এই সার দীর্ঘদিন বস্তার ভেতর থাকায় জমাট বেঁধে পাথরের মতো শক্ত হয়ে গেছে। ফলে ডিলারসহ কৃষকদের মধ্যে এই জমাট বাঁধা সারের কোন চাহিদা নেই। তারপরও নষ্ট ইউরিয়া সার স্থানীয় ডিলাদের বরাদ্দ নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। ডিলার আবদুল মান্নান জানান, বরাদ্দপ্রতি কিস্তির সারের সঙ্গে ওজনে কম এই জমাট বাঁধা নষ্ট ইউরিয়া নিতে বাধ্য করছে বাফার গুদামের ইনচার্জ আবদুল বারী। কোন ডিলার নষ্ট ইউরিয়া নিতে প্রতিবাদ কিংবা অনীহা প্রকাশ করলে তাকে হয়রানিসহ ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ডিলার মফিজ উদ্দিন। স্থানীয় সার ডিলাররা অভিযোগ করে জানান, বিষয়টি বার বার বলার পরও কোন প্রতিকার মেলেনি। হয়রানি ও হুমকির ভয়ে নিরীহ ডিলাররা বাফার গুদামের নষ্ট ইউরিয়া নিতে বাধ্য হচ্ছেন। বরাদ্দের প্রতি কিস্তি ইউরিয়া সার নেয়ার সময় ২ থেকে ৩ মে.টন জমাট বাঁধা নষ্ট ইউরিয়া চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। অনেক ডিলার কৃষক পর্যায়ে এই সার বিক্রি করতে না পেরে লোকসান গুনছেন। ভয়ে অনেক ডিলার বোরো আবাদের এই ভরা মৌসুমে বরাদ্দের ইউরিয়া সার উত্তোলন করছে না। নষ্ট এই ইউরিয়া সার মজুদ দেখানোর কারণে বরাদ্দ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতার। বিসিআইসি চলতি মৌসুমে যে পরিমাণ সার শম্ভুগঞ্জের বাফার গুদামে বরাদ্দ দেয়ার কথা- এই মজুদের কারণে বরাদ্দ কমে গেছে। ফলে শম্ভুগঞ্জের বাফার গুদামে প্রকৃত মজুদ কম বলে জানিয়েছে ডিলারদের সূত্র। গুদামের এই মজুদ বাদ না দিলে চলতি মৌসুমে ময়মনসিংহে ইউরিয়া সারের সঙ্কট দেখা দিতে পারে বলে দাবি স্থানীয় কৃষক ও ডিলারদের। ত্রিশালের ডিলার গোলাম সারোয়ার জানান, তিনি এখন পর্যন্ত বাফার গুদাম থেকে গত ফেব্রুয়ারি মাসের কোন বরাদ্দ পাননি। এমন অভিযোগ অনেক ডিলারের। যদিও জেলা প্রশাসক খলিলুর রহমান গত ৭ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির নিয়মিত মাসিক সভায় ইউরিয়া সারের কোন ঘাটতি নেই বলে দাবি করেছেন। চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় চার হাজার ৫০০ মে.টন ইউরিয়া সারের চাহিদা রয়েছে বলে জানিয়েছে খামারবাড়ির উপপরিচালক কৃষিবিদ আলতাবুর রহমান। নষ্ট সারের ব্যাপারে শম্ভুগঞ্জ বাফার গুদামের ইনচার্জ আবদুল বারী ডিলারদের কাছে ওজনে কম ও নষ্ট ইউরিয়া বিতরণের বিষয়টি স্বীকার করে জনকণ্ঠকে জানান, বিষয়টি নজরে আসার পর সঠিক ওজন নিশ্চিত করার পাশাপাশি নষ্ট ইউরিয়া বিতরণ বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে রিপ্যাক করে এই সার ডিলারদের বরাদ্দ দিতে বিসিআইসির চেয়ারম্যানের নির্দেশনা রয়েছে দাবি করে তিনি আরও জানান, আমদানি ইউরিয়া সারের বস্তায় ২-১ কেজি ঘাটতি পাওয়া গিয়েছিল।
×