ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চমক দেখালেন না ট্রাম্প

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ২ মার্চ ২০১৭

চমক দেখালেন না ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার রাতে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন। তিনি এতে কর হ্রাস, সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার গৃহীত স্বাস্থ্যসেবা সংস্কার আইন পরিবর্তন ও সন্ত্রাসবাদ দমনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব বুঝে নিয়ে এক মাস আগে ক্যাপিটল হিলের ওয়েস্ট ফ্রন্টে দাঁড়িয়ে তিনি যে ভাষণটি দিয়েছিলেন তার সঙ্গে মঙ্গলবারের ভাষণের যথেষ্ট পার্থক্য ছিল বলে পর্যবেক্ষকরা বলছেন। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট ও গার্ডিয়ান অনলাইনের। কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনের এ ভাষণের শ্রোতা ছিলেন সিনেটর, কংগ্রেস সদস্য, সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতি ও সেনাবাহিনীর জেনারেলগণ। ট্রাম্প লিখিত বক্তব্যের বাইরে অন্য কিছু বলেননি। বিতর্কিত বক্তব্য রেখে নির্বাচনী প্রতিযোগিতার শুরু থেকে ট্রাম্প যেভাবে চমক দেখিয়ে এসেছেন মঙ্গলবারের ভাষণে তার কিছুই ছিল না। বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, ট্রাম্পের যৌথ অধিবেশনের ভাষণে কোন চমক না থাকাই ছিল সবচেয়ে বড় চমক। নির্বাচনে জেতার আনন্দ অথবা মিডিয়াকে টার্গেট করে আক্রমণ এর কোনটিই ছিল না এই ভাষণে। এর আগে রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশন বা উদ্বোধনী ভাষণে যেমন বাগাড়ম্বর করেন সেটিও এতে দেখা গেল না। সব মিলিয়ে ভাষণটি ছিল রাজনীতিকদের মতো যিনি ভবিষ্যতের দিকে চেয়ে আশাবাদী হতে চান। অতীতে প্রায় সব ভাষণেই তিনি লিখিত বিষয়বস্তুর বাইরেও বক্তব্য রেখেছেন। যৌথ অধিবেশনে ভাষণেও তিনি সেটি করেছেন, তবে তার পরিমাণ ছিল খুব কম। যেমন তিনি প্রসঙ্গক্রমে ইয়েমেনে মার্কিন বিশেষ অভিযানে নিহত রায়ান ওয়েন্সের কথা স্মরণ করেন। সবাই মনোযোগ দিয়ে তার বক্তৃতা শোনেন। বত্তৃতা চলাকালে কোন হট্টোগোল হয়নি। কাউকে সেøাগান দিতে দেখা যায়নি। ‘ইউ লাই’ বা আপনি মিথ্যা বলছেন বলেও কাউকে চিৎকার করতে দেখ যায়নি। নিরাপত্তাজনিত কারণে কাউকে বাইরে নিয়ে যেতে হয়নি। কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাট দলের সদস্যরা আগে থেকেই নিজেদের মধ্যে শলাপরামর্শ করে ঠিক করে রেখেছিলেন, তারা ট্রাম্পের ভাষণের সময় হৈ চৈ করবেন না। প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্র্যাটদের নেতা ন্যান্সি পেলোসিসহ দলের নারী সদস্যরা সাদা পোশাক পরে আসেন। কংগ্রেসের উভয়কক্ষে তার যে যন্ত্রণার শিকার হচ্ছেন তারই প্রতিবাদ হিসেবে তারা এই রং বেছে নেন। ডেমোক্র্যাট সদস্যরা খুব কম ক্ষেত্রেই ট্রাম্পের বক্তব্যের সঙ্গে সমর্থন সূচক আওয়াজ করেন। বিশেষ করে তারা তার বক্তব্যের যেসব অংশের সঙ্গে একমত পোষণ করেন সেক্ষেত্রেও তারা প্রায় নীরব থাকেন। ভাষণ চলাকালে ডেমোক্র্যাটরা চুপচাপ থেকে এই বার্তা দেন যে ট্রাম্পকে নিয়ে তারা খুব বেশি আশাবাদী নন। এর আগের বছরগুলোতে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে প্রেসিডেন্টের ভাষণ চলাকালে কংগ্রেসের উভয়কক্ষে অনেক ইতিবাচক সাড়া লক্ষ্য করা গেছে। ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রতি সমর্থন জানিয়ে কেবল একজন ডেমোক্র্যাটকে উঠে দাঁড়াতে দেখা গেছে। অবকাঠামো খাতে ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টি ট্রাম্প বরাবর বলে এসেছেন। বিষয়টি নিয়ে তারা কোন আগ্রহ প্রকাশ করেনি। রিপাবলিকানদের শরীরী ভাষাও ছিল আড়ষ্ট। তাদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে দেখা যায়নি। পর্যবেক্ষকদের মতে, কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ট্রাম্পের ভাষণ গভীরভাবে বিভক্ত দেশটির রাজনৈতিক চিত্রটির কোন পরিবর্তন ঘটাবে না। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট সুলভ একটি ভাষণ দিয়েছেন ঠিকই কিন্তু এটি রাজনৈতিক তিক্ততা দূর করার জন্য যথেষ্ট নয়। প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণের পর দেড় মাস সময়ে তিনি বেশ কিছু বিতর্কিত নির্বাহী আদেশে সই করেছেন। এ সময় তার বিরুদ্ধে অনেক বিক্ষোভও হয়েছে। কর পুনর্বিন্যাস ও ওবামা কেয়ার নামে পরিচিত এ্যাফোর্ডেবল হেলথ কেয়ার সংস্কারের জন্য তাকে কংগ্রেসে উভয় দলের সমর্থন পেতে হবে। সেটি এই মুহূর্তে সম্ভব কিনা তা স্পষ্ট নয়।
×