ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নাজমুল হাসান সজিব

সহিংসতার বিপরীতে সংস্কৃতি

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ২ মার্চ ২০১৭

সহিংসতার বিপরীতে সংস্কৃতি

তরুণ সমাজ। একটি দেশ তথা জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার। তাদের হাতেই আগামীর মশাল তুলে দেবেন আজকের প্রবীণ সমাজ। এই তরুণদের চিন্তা ও মননে থাকার কথা প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা। অথচ আমাদের তরুণ সমাজ ক্রমশ মিশে যাচ্ছে অন্ধকারে। প্রতিনিয়ত অপসংস্কৃতির চর্চা, ক্ষমতার রেষারেষি, সাম্প্রদায়িক মনোভাব কোথাও যেন আমাদের ঠেলে দিচ্ছে এক অসীম নির্জনতায়। তরুণদের এই বেপরোয়া মনোভাব আমাদের সমাজকে ধাবিত করছে এক নেতিবাচকতার দিকে। এর ফলে আমাদের পথ হারিয়ে শেকড়হীন জনগোষ্ঠীতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা উপেক্ষা করতে পারি না। তরুণদের অবক্ষয়ের স্বরূপ তুলে ধরার জন্য কিছু উদাহরণ দিয়ে শুরু“ করি। কিছুদিন আগে চট্টগ্রামের সুমিত নামের এক তরুণ তার মাকে বঁটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। এই খুনের কারণ হিসেবে বলা হয়, এইচএসসিতে খারাপ করায় তার মা তাকে বকাঝকা করেছিল। গত বছর সিলেটে দেখা যায় আর এক পৈশাচিক কর্মকান্ড। রাজন নামের এক শিশুকে খুন করা হয় পৈশাচিকতার আনন্দ নিতে নিতে। অথচ সবার সম্মুখে ঘটা এই ঘটনায় প্রতিবাদ করেনি একটি মানুষও। গুলশানের রেস্তোরাঁয় হামলা করে যে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছিলো তাদের সবাই ছিল তরুণ। এমনকি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া আরেকটি ঘটনা হচ্ছে শোলাকিয়ায় ঈদ এর নামাজের সময় হামলার চেষ্টা। যার পেছনেও ছিল কিছু বিপথগামী তরুণ। সন্তানের সাথে তার পিতামাতার সম্পর্ক হবে মধুর। অথচ সেই চিরন্তন সত্যও আজকাল মিথ্যা মনে হয়। একজন মানুষের মনে ভালোবাসা, মায়া-মমতা, শ্রদ্ধা ও স্নেহসহ প্রায় সকল মানবিক গুণাবলি সংকুচিত হয়ে আসছে। বাড়ছে খুন, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। এই নৈতিকতা বিবর্জিত শিক্ষার দায়ভার যেমন আমাদের, তেমনি সংস্কৃতির চর্চার অভাবও পুরোপুরিভাবে দায়ী। একটা সময় ছিল, যখন শিক্ষাঙ্গনে সংস্কৃচি চর্চা ও খেলাধুলার সুযোগ ছিল অহরহ। ছাত্রছাত্রীরা ক্লাসে শুধু লেখাপড়া নিয়েই ব্যস্ত থাকতো না, পাশাপাশি নিয়মিত সংস্কৃতির নানা বিষয় ও খেলাধুলা চর্চা করার সুযোগ পেত। বিদ্যালয়ের পাঠাগারে গিয়ে বই পড়ার অভ্যাস শিক্ষার্থীদের সাহিত্যকে ভালোবাসতে শেখাত। এই পড়ার সংস্কৃতি একজনের মাঝে তৈরি করতে পারে গভীরতা, একজন ছাত্রকে ভাবতে শেখাতে পারে। খেলাধুলা পারে একজনকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখতে। অথচ ইদানীং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যস্ত হয়েছে শুধু পড়ালেখা নিয়ে। প্রতিযোগিতার বাজার তৈরি করে ব্যবসার হাট খুলে বসেছে প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পড়া, পরীক্ষা আর অসুস্থ প্রতিযোগিতার মধ্যে যে আমরা হারিয়ে ফেলছি সংস্কৃতির চর্চা সকলে তা দেখে না দেখার ভান করছে। আমাদের নীতিবর্জিত এই সমাজ ব্যবস্থা। নাচ, গান, অভিনয়, বই পড়া ইত্যাদি একজন মানুষের মূল্যবোধ তৈরিতে সাহায্য করে। আর মূল্যবোধসম্পন্ন তথা একজন সংস্কৃতিমনা মানুষ কখনো অন্যের গলায় ছুরি বসাতে পারে না। এই সমস্যার জন্য প্রতিরোধের দেয়াল গড়ে তোলা আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিত পারিবারিক শিক্ষা। আমাদের পরিবারগুলোর তাদের সন্তানের প্রতি যতœশীল হওয়া উচিত। তাছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সমাজের প্রতিটি স্তরে বিশেষ মনোযোগ এবং যতœ নেয়ার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। সমাজ কাঠামোর মূল কথা একে অপরের জন্যে এগিয়ে আসার মনোভাব সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। যদি সবকিছু ঠিকভাবে করা যায় তাহলে সকল স্তরের মানুষ তথা শিশু, কিশোর, তরুণদের সার্বজনীন মানবিক বিকাশটা সম্ভব। বারবার কেন সংস্কৃতির চর্চার কথা বলছি? কারণ এত সহিংসতা, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ সমস্যার সমাধান আছে শুধুমাত্র সংস্কৃতির চর্চার মাধ্যমে। তরুণদের উপলব্ধি, আচার-আচরণ, মূল্যবোধ সবকিছুর উন্নতির প্রয়োজন। এই সমাজ সহিংসতা চায় না, বিচারবিহীন ধ্বংসযজ্ঞ চায় না। চায় শান্তির পতাকা ওড়াতে। চায় প্রেমময় সম্প্রীতি। কুমিলা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
×