ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ সংস্কৃতি চর্চা

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ২ মার্চ ২০১৭

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ সংস্কৃতি চর্চা

আমরা বাঙালী। খ্রিষ্টপূর্ব কয়েক হাজার বছরের ইতিহাস ও স্মৃতিচিহ্নের নির্দশন রয়ে গেছে মহাকালের বাঁকে বাঁকে। বিদেশী শক্তির বার বার আক্রমণ-লুণ্ঠণ, বিজাতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসন, নানা প্রতিকূলতা, বাঁধা-বিপত্তি পেরিয়ে বাংলার মানুষের সৃষ্ট জীবনাচার ও সংস্কৃতি। যা বহতা নদীর মতোই বয়ে গেছে। বাংলার মাটি এবং ভাষার সঙ্গে মিশে আছে বাঙালী সংস্কৃতির শিকড়। হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খৃস্টান সকল সম্প্রদায় সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এদেশের সমৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এই অর্জনকে নস্যাৎ করার জন্য জন্ম দিয়েছিল সাম্প্রদায়িকতার। পাকিস্তানের শোষণ ও ক্ষমতার সংস্কৃতি ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে বাংলার মানুষের জন্য অনিবার্য হয়ে পড়েছিল মুক্তিযুদ্ধের। এই সময় ধর্মজ সংস্কৃতির বিকৃত চর্চাকারীরা গঠন করে আল বদর বাহিনী। দেশ স্বাধীনের প্রাক্কালে হত্যা করে বুদ্ধিজীবীদের। দীর্ঘ নয় মাস সন্ত্রাস ও হত্যা চালিয়ে তারা গা ঢাকা দেয়। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে উন্মেষ ঘটায় সন্ত্রাস-সংস্কৃতির। এ সময় ধর্মজ সংষ্কৃতির দ্রুত প্রসার ঘটে। ধর্মরক্ষার নামে যুব ও দরিদ্র শ্রেণির ইহজগতে অর্থনৈতিক লাভবান এবং পরপারে বেহেস্তের অনাবিল সুখের স্বপ্ন দেখিয়ে প্রলুব্ধ করে। জন্ম দেয় নব সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের। এর মূলে ধর্ম নয়, প্রচুর সম্পদের মালিক হওয়া এবং ক্ষমতার অধিপত্য বিস্তারই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। যুক্তিহীন অন্ধবিশ্বাসগুলিকে টিকিয়ে রেখে নিরাপরাধ মানুষদের হত্যা সংস্কৃতিতে মেতে উঠেছে। যারা এহেন কার্য করছে, তাদের রয়েছে ধর্ম সম্পর্কে প্রচুর অজ্ঞতা। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় নিয়ে পুনরায় তাঁর দল সরকার পরিচালনার ভার গ্রহণ করার পর শুরু হয় যড়যন্ত্র। বঙ্গবন্ধুর খুনী ও যুদ্ধাপরাধীদের হত্যার বিচার শুরু হলে তাদের অগ্নিমূর্তি প্রকাশ পায়। তারা মেতে ওঠে সন্ত্রাস, সংস্কৃতিতে। এ সময় তারা বিত্তশালী ও শিক্ষিতদের একাংশের সমর্থন পায়। নানা ধর্ম উদার ও মানবিক হলেও ধর্মকে ব্যবহার করে সন্ত্রাসী ও জঙ্গি কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে তারা। এদেশের ধর্মের নামে যেভাবে ভিন্ন মত, ভিন্ন ধর্ম, ভিনদেশি এবং মুক্তমনা মানুষদের হত্যা করছে, তাতে জাতি আজ উদ্বিগ্ন। মুষ্টিমেয় মানুষ যাতে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে রাষ্ট্রের ক্ষতি করতে না পারে, তরুণদের বিপথগামী করতে না পারে, এজন্য গণচেতনা বাড়াতে হবে। ধর্মের নামে আজও যারা বিপথগামী তাদেরকে স্বাভাবিক পথে ফিরিয়ে আনতে ধর্ম সংস্কৃতির সংকীর্ণতা থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ থেকে এদেশের মাটি ও মানুষকে মুক্ত করে সোনার বাংলাকে এগিয়ে নিতে হবে। আর সেজন্য সুস্থ সংস্কৃতির বিকল্প নেই। আসুন সকলেই সুস্থ সুন্দর সংস্কৃতি চর্চা করি। নিজেদের সংকীর্ণতা সাম্প্রদায়িকতা দূর করার জন্য পাঠাভ্যাস গড়ে তুলি। অর্জিত জ্ঞানই পারে অপসংস্কৃতির হাত হতে বাংলাদেশ তথা বাংলাদেশের মানুষকে সুন্দর ও সুস্থ পথে ফিরিয়ে আনতে। কালিহাতী, টাংগাইল থেকে
×