ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সদিচ্ছা থাকলে

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ২ মার্চ ২০১৭

সদিচ্ছা থাকলে

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে মিডওয়াইফ নিয়োগ পরীক্ষাটি এবার ব্যতিক্রমী ধারায় ফল প্রকাশের নতুন মাত্রা যোগ করেছে। পরীক্ষার দিন সকালেই এমসিকিউ প্রিলিমিনারি প্রশ্নপত্র ছাপানো এবং নির্ধারিত সময়ে নিয়োগ পরীক্ষা শুরু হয়। পরের দিন দুপুরে অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই প্রার্থীরা তাদের ফল জেনে যায়। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষার ফল দ্রুততম সময়ে প্রকাশ পাওয়া বিস্ময়ের ব্যাপার হলেও তা যে সম্ভব সেটাই জানান দেয় সরকারী কর্মকমিশন। পিএসসি চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক মাত্র একদিনের মাথায় ফল প্রকাশে আনন্দিত হয়ে তার অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেয়া অসংখ্য প্রার্থীর সময় নষ্ট না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের উদ্বিগ্ন এবং দুশ্চিন্তার কবল থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যেই এই ধরনের নতুন একটি পদক্ষেপ নেয়া হয়। আর এটাই প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম দায়িত্ব এবং সেটা করার জন্যই সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি আশা ব্যক্ত করেন, ভবিষ্যতে কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠেয় সব পরীক্ষা নতুন পদ্ধতিতে নেয়া হবে। এতে ফলাফলের দীর্ঘসূত্রতার অবসান হবে এবং পরীক্ষার্থীদেরও অপেক্ষায় বসে থাকতে হবে না। পরীক্ষার দিনেই চেয়ারম্যান এবং কমিশনের সদস্যদের উপস্থিতিতে সকালে প্রশ্ন মুদ্রণ করে নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন ফাঁসের অপতৎপরতা থেকে বের হয়ে আসা যাবে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু এরকম একটি উন্নতমানের পরীক্ষা গ্রহণ পদ্ধতি কিভাবে সম্ভব হলো? সেটাও তথ্যপ্রযুক্তির আধুনিক প্রয়োগ বলে স্পষ্ট ধারণা দিয়েছেন বুয়েটের অধ্যাপক ড. আবদুল জব্বার। আগের পরীক্ষা গ্রহণের পদ্ধতি ছিল ম্যানুয়েল। কিন্তু প্রযুক্তির নতুন প্রয়োগে তা হয় অটোমেশন। এই অটোমেশন পদ্ধতিটা আসলে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আইসিটির বিশেষজ্ঞরা বিশেষ একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছেন। এই সফটওয়্যার যেমন স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করে, একইভাবে দ্রুততম সময়ের ব্যাপারেও এর ভূমিকা অনবদ্য। যার কারণে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নিয়োগ পরীক্ষার ফল প্রকাশ। আগে নিয়োগ পরীক্ষায় মেধা তালিকার যে ফল প্রকাশ করা হতো তার পদ্ধতি ছিল ম্যানুয়েল। যাতে কমিশনের সংশ্লিষ্টদের অনেক কর্মপ্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত থাকতে হতো। যা ছিল সময়ের ব্যাপার এবং ত্রুটি-বিচ্যুতির আশঙ্কাও কম ছিল না। কিন্তু অটোমেশন পদ্ধতিতে এই ধরনের বিলম্বিত কার্যক্রমের কোন ব্যাপার থাকবে না। ম্যানুয়েলের মতো এখানে কোন জটিলতাও থাকবে না, ভুলভ্রান্তিরও কোন অবকাশ নেই। আর তাই অটোমেশন একেবারে ডিজিটালাইজ। এর সফটওয়্যার স্বল্প সময়ে ফল প্রকাশে যেমন ভূমিকা রাখবে, পাশাপাশি নিয়োগ পরীক্ষার্থীদেরও অনেক জটিলতা থেকে মুক্তি দেবে। এ আশা সংশ্লিষ্ট সবারই। এখানে সদিচ্ছার বিষয়টিও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আরও একটি বিশেষ ব্যবস্থা উল্লেখ করার আছে। আগে এই সরকারী কর্মকমিশন সরকারের অনুমতি ছাড়া কোন বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় করতে পারত না। কিন্তু বর্তমানে আর্থিকভাবেও স্বাধীনতা অর্জন করে কমিশন। ফলে নিজেদের ব্যবস্থাপনা ও প্রয়োজনে কমিশন সরকার প্রদত্ত অর্থ খরচ করার স্বাধীনতা পেয়েছে, যা কমিশনের কার্যক্রমে নতুন মাত্রা যোগ করবে। কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। ফলে সংবিধান প্রদত্ত সমস্ত ক্ষমতা প্রয়োগ কমিশনের মৌলিক এবং যৌক্তিক অধিকার। সব মিলিয়ে সরকারী কর্মকমিশন প্রযুক্তিগত এবং আর্থিক স্বাধীনতা পরীক্ষা গ্রহণ পদ্ধতিকে আরও আধুনিক এবং সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেÑ এ আশা সাধারণ জনগোষ্ঠীর।
×