ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মা সেতুর জাজিরা পয়েন্ট

দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ, ৪ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১ মার্চ ২০১৭

দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ, ৪ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা

নিজস্ব সংবাদদাতা, শরীয়তপুর, ২৮ ফেব্রুয়ারি ॥ পদ্মা সেতুর জাজিরার নাওডোবা পয়েন্টে সেনানিবাস নির্মাণ প্রকল্পে স্থাপনা ও গাছপালার মূল্য নির্ধারণে অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ ও সংবাদ সংগ্রহ করার জের ধরে মঙ্গলবার শরীয়তপুর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে (জাজিরা অঞ্চল) স্থানীয় ৪ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও এক মহিলার শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। এদিকে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে ২ সাংবাদিক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় এক সাংবাদিক জাজিরা থানায় মামলা করেছে। পুলিশ বলছে, ঘটনার সত্যতার জন্য তদন্ত চলছে। একজনকে আটক করে কোর্টে প্রেরণ করা হয়েছে। এ নিয়ে জাজিরা থানার সামনে শ’য়ে শ’য়ে নারী গ্রেফতারকৃত তোফাজ্জল মাস্টারের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। জাজিরা উপজেলার নাওডোবা হাজী তাহের ঢালী কান্দি গ্রামের ফয়জল ঢালীর স্ত্রী মোসাম্মৎ লিপি আক্তার বাদী হয়ে চ্যানেল ২৪ টিভির শরীয়তপুর প্রতিনিধি কাজী নজরুল ইসলাম, তার ভাই যমুনা টিভির প্রতিনিধি কাজী মনিরুজ্জামান, দৈনিক প্রথম আলোর শরীয়তপুর প্রতিনিধি সত্যজিৎ ঘোষ ও ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন প্রতিনিধি নূরুল আমীন রবিনকে আসামি করে এ মামলা করা হয়েছে। আদালত মামলাটিকে জুডিশিয়াল তদন্তের আদেশ দিয়েছে। মামলার বিবরণে জানা যায়, সোমবার দুপুরে আসামিগণ মামলার বাদী মোসাম্মৎ লিপি আক্তারের বসত বাড়িতে গিয়ে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে ভুয়া সংবাদ প্রচার করবে এবং গাছপালা ও ঘরবাড়ির ক্ষতিপূরণের টাকা তুলতে পারবে না। এসব কথার প্রতিবাদ করলে আসামিগণ মামলার বাদী মোসাম্মৎ লিপি আক্তারের শ্লীলতাহানি ঘটায়। অভিযুক্ত সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, সোমবার দুপুরে পদ্মা সেতুর জাজিরার নাওডোবা পয়েন্টে সেনানিবাস নির্মাণ প্রকল্পের স্থাপনা ও গাছপালার মূল্য নির্ধারণের অনিয়মের অভিযোগের সংবাদ সংগ্রহে গেলে শরীয়তপুরের চার সাংবাদিকের ওপর হামলা করা হয়েছে। এ সময় হামলাকারীরা সাংবাদিকদের লাঞ্ছিত করে। তারা যমুনা টিভির শরীয়তপুর প্রতিনিধি কাজী মনিরুজ্জামানের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়। তাহের ঢালী কান্দি গ্রামে সোমবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানের জন্য সেনানিবাস নির্মাণ করা হচ্ছে। সে জন্য জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ৯৯ দশমিক ৪৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ওই জমিতে থাকা ঘরবাড়ি, স্থাপনা ও গাছপালার মূল্য নির্ধারণে অনিয়মের সংবাদ দৈনিক জনকণ্ঠসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়। এরপর জেলা প্রশাসক পুনরায় মূল্য নির্ধারণের নির্দেশ দেন। বন বিভাগের পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি পুনরায় মূল্য নির্ধারণের কাজ শুরু করেন। অভিযোগ উঠেছে, রাতের আঁধারে একটি চক্র ওই জায়গায় নতুন করে গাছ লাগাচ্ছে। বিয়ষটি সরেজমিনে দেখার জন্য প্রথম আলোর শরীয়তপুর প্রতিনিধি সত্যজিৎ ঘোষ, ইনডিপেনন্ডেন্ট টিভির জেলা প্রতিনিধি নূরুল আমীন, যমুনা টিভির জেলা প্রতিনিধি কাজী মনিরুজ্জামান ও স্থানীয় বর্তমান এশিয়া পত্রিকার প্রতিনিধি শহীদুল ইসলাম সোমবার ওই প্রকল্প এলাকায় যান। দুপুর ১টার দিকে নাওডোবা তাহের ঢালি কান্দি গ্রামের রহমান ব্যাপারীর দোকানের সামনে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানো হয়। সাত্তার ঢালির নেতৃত্বে ১৫-২০ জন সন্ত্রাসী এ হামলা চালায়। যমুনা টিভির সাংবাদিক কাজী মনিরুজ্জামান বাদী হয়ে এ ঘটনায় ২ জনকে আসামি করে জাজিরা থানায় একটি মামলা করেছেন। জাজিরা থানা পুলিশ তোফাজ্জাল হোসেন নামে এক আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করলে মঙ্গলবার তিনি জামিনে মুক্ত হন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্র জানায়, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের সার্বিক নিরাপত্তা রক্ষার লক্ষ্যে ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগেডের স্থায়ী সেনানিবাস নির্মাণ করার জন্য ৯৯ দশমিক ৪৪ একর জমি অধিগ্রহণ করতে জেলা প্রশাসককে চিঠি দেয়া হয়। গত বছরের ৫ মে সেনাবাহিনী এই চিঠি দেয়। এরপর জমি অধিগ্রহণ করার জন্য জেলা প্রশাসন থেকে ১ জুন জমির মালিকদের নোটিস করা হয়। জেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনী ১৬ জুন যৌথ তদন্ত শুরু করে জমির মালিকদের তালিকা ও স্থাপনার তালিকা প্রস্তুত করতে থাকে। ঘরবাড়ি ও স্থাপনার মূল্য নির্ধারণ করার জন্য সেই তালিকা ২২ আগস্ট শরীয়তপুর গণপূর্ত বিভাগকে ও গাছপালার মূল্য নির্ধারণের জন্য সামাজিক বন বিভাগকে দেয়া হয়। গণপূর্ত বিভাগ ও বন বিভাগ থেকে মূল্য নির্ধারণের কাজ শেষ করে গত ডিসেম্বরে সেই তালিকা জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় জমা দেয়া হয়। অধিগ্রহণ করা জমির ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশায় ঘরবাড়ি, পুকুর, অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ করে একটি চক্র। এছাড়া ওই স্থানে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা রোপণ করা হয়। অভিযোগ উঠেছে, ওই সব স্থাপনা ও গাছপালার অতিরিক্ত মূল্য ধরা হয়েছে। ওই জমি এক বছর আগেও ছিল পদ্মার ধু ধু বালুচর। ঘরবাড়ি ও স্থাপনার মূল্য নির্ধারণ করেছেন শরীয়তপুর গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাহরিয়ার জাহান এবং গাছপালার মূল্য নির্ধারণ করেছেন শরীয়তপুর সামাজিক বন ও নার্সারি কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুধীর কুমার রায় দেব সিংহ। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হোসাইন খান সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে ও গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে চিঠি দেন। জেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর যৌথ তদন্ত অনুয়ায়ী সরেজমিনে পুনঃতদন্ত ও যাচাইপূর্বক বাস্তবভিত্তিক বাজার মূল্য নির্ধারণের অনুরোধ করা হয়। জাজিরা থানার ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিকদের ওপর হামলার অভিযোগ পেয়েছি। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। মামলার বিষয়ে দৈনিক প্রথম আলোর শরীয়তপুর প্রতিনিধি সত্যজিৎ ঘোষ বলেন, আদালতে একটি মামলা হয়েছে শুনেছি, এখনও কাগজপত্র হাতে পাইনি।
×