ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রীতিলতাকে নিয়ে নির্মিত যাত্রাপালার প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১ মার্চ ২০১৭

প্রীতিলতাকে নিয়ে নির্মিত যাত্রাপালার প্রদর্শনী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এক সময়ের সাধারণ মানুষের কাছে সমাদৃত যাত্রাপালা এখন ভুগছে বহুমুখী সঙ্কটে। এমন প্রেক্ষাপটে এই শিল্পের সঙ্কট ও সমাধানে অনুষ্ঠিত হলো যাত্রাবিষয়ক আলোচনা। বিকেলের আলোচনা শেষে সন্ধ্যায় ছিল ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের কিংবদন্তি নারী বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারকে নিয়ে নির্মিত যাত্রাপালার প্রদর্শনী। মঙ্গলবার বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নগরভিত্তিক যাত্রাদল জয়যাত্রা। আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ যাত্রা ফেডারেশনের দুই উপদেষ্টা গোলাম সারোয়ার ও কনক কান্তি দাস, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল আকতারুজ্জামান ও বিশিষ্ট অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস। স্বাগত বক্তব্য দেন যাত্রাদল জয়যাত্রার অধিকারী এ্যাডভোকেট হাসান কবির শাহীন। সভাপতিত্ব করেন যাত্রা ফেডারেশনের সভাপতি মৃণাল কান্তি ভট্টাচার্য। এ দেশের যাত্রাপালার সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের কথা উল্লেখ করে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, সে সময় পরিবারের সবাই মিলে আমরা যাত্রাপালা দেখতাম। এখন আর সেই অবস্থা নেই। এখনকার যাত্রা দেখে হতাশ হই। এই শিল্পের একটা সঙ্কট বিরাজ করছে। অথচ প্রাচীন শিল্প-মাধ্যমগুলোর মধ্যে যাত্রাপালা খুবই গুরুত্বপূণ। গ্রাম বাংলার মানুষের আত্মার খোরাক যোগাতো এই শিল্প-মাধ্যমটি। এই মাধ্যমের আশ্রয়ে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানো যায় খুব সহজে। আমরা চেষ্টা করছি, গৌরবময় সেই পুরনো অতীত ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু বর্তমান যাত্রাদলগুলোর মধ্যেও অনেক বিভাজন রয়েছে। তারা সংঘবদ্ধ নয়। যাত্রাশিল্পে গতিময়তা সৃষ্টির লক্ষ্যে কমিটি গঠনের মাধ্যমে যাত্রা নীতি প্রণয়ন করা হবে। আগামী শীত মৌসুমে শিল্পকলা একাডেমিতে বড় পরিসরে যাত্রা উৎসবের আয়োজন করা হবে। এছাড়া সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে পর্যালোচনার ভিত্তিতে পাঁচটি যাত্রাদলকে অনুদান দেয়া হবে। তিনি বলেন, যাত্রা, নাটক, সঙ্গীত কিংবা কবিতার আশ্রয়েই আমাদের ধর্মভিত্তিক উগ্রবাদের বিরুদ্ধে সংস্কৃতির লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। ধর্মভিত্তিক দর্শন থেকে মুক্তি পেতে এর কোন বিকল্প নেই। গোলাম সারোয়ার বলেন, নতুন যাত্রা নির্মাণের ক্ষেত্রে এখনও সেই পুরনো ধ্যান-ধারণাকেই আঁকড়ে ধরে আছে যাত্রাদলগুলো। ফলে ভাল যাত্রা না হওয়া দর্শক বিচ্যুত হচ্ছে এই শিল্প-মাধ্যম থেকে। নতুন যাত্রাপালায় যুক্ত করতে হবে সমসাময়িক বিষয়কে। অরুণা বিশ্বাস তার বক্তব্যে, এ দেশের বরেণ্য যাত্রাশিল্পী ও সংগঠক অমলেন্দু বিশ্বাসের নামে একটি যাত্রা মঞ্চ তৈরির বিষয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা কামনা করেন। আলোচনা শেষে মঞ্চস্থ হয় জয়যাত্রা পরিবেশিত বীরকন্যা প্রীতিলতা শীর্ষক বিপ্লবী যাত্রাপালা। সাধন মুখার্জীর রচনায় পালাটির নির্দেশনা দিয়েছেন হাসান কবির শাহীন। এ পালার মাধ্যমে উঠে আসে মাস্টারদা সূর্য সেনের গোপন বিপ্লবী তৎপরতা। সেই ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে বর্ণিত হয় চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর ইউরোপিয়ান ক্লাবে চালানো প্রীতিলতার দুঃসাহসিক অভিযানের দৃশ্যপট। হামলা শেষে ব্রিটিশের হাতে ধরা না পড়তে বদ্ধপরিকর প্রীতিলতা পটাসিয়াম সায়ানাইট খেয়ে আত্মহত্যা করেন। ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম কোন ভারতীয় নারীর আত্মবলিদানের বিয়োগান্ত দৃশ্যের মাধ্যমে যাত্রাপালার কাহিনীর সমাপ্তি হয়। যাত্রাপালাটিতে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের চরিত্রে রূপ দিয়েছেন শাহনাজ পারভীন শিল্পী। এছাড়া বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন মাশরুফা সায়মা কেয়া, শিউলি জামান, মোর্শেদ ফারুক, আবদুর রহীম, জেরিন, অলিউল্লাহ, এম এ হান্নান, কৌশিক, রিপন, সুভাস বিশ্বাস প্রমুখ।
×