ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অবাধে অপরাধ তৎপরতা

ভারত ও বাংলাদেশের জঙ্গী সন্ত্রাসীদের হাতে ভুয়া পাসপোর্ট

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১ মার্চ ২০১৭

ভারত ও বাংলাদেশের জঙ্গী সন্ত্রাসীদের হাতে ভুয়া পাসপোর্ট

শংকর কুমার দে ॥ বাংলাদেশ ও ভারত- দুই দেশের জঙ্গী, সন্ত্রাসী, খুনীরা মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভুয়া পাসপোর্ট সংগ্রহ করে নিরাপদে অপরাধ তৎপরতা চালাচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে ভারতের অসমে জঙ্গী অর্থায়ন করার সন্দেহে গ্রেফতার হয়েছে এক ধনাঢ্য ব্যক্তি যিনি ভারতীয় নাগরিক আলমগীর হোসাইন। কোটিপতি ধনাঢ্য ব্যক্তি আলমগীর ভারতের নাগরিক হলেও বিগত প্রায় দশ বছর ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করে অসমের করিমগঞ্জে ফেরার পর পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। দক্ষিণ অসমের করিমগঞ্জ জেলা এলাকা থেকে গ্রেফতারের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় আয়ের উৎস, জঙ্গী অর্থায়ন, দীর্ঘদিন তার অন্তর্ধান, বাংলাদেশী পাসপোর্ট তার হাতে এল কীভাবে? জঙ্গী সন্দেহে বাংলাদেশী পাসপোর্ট শুধু ভারতীয় নাগরিকই নয়, বাংলাদেশের জঙ্গীরাও পাসপোর্ট সংগ্রহ করে দেশ-বিদেশে ভ্রমণ করছে। প্রশ্ন উঠেছে, জঙ্গী সন্দেহে গ্রেফতার হওয়া ভারতীয় নাগরিকসহ দেশীয় জঙ্গী, সন্ত্রাসী, খুনীদের হাতে পাসপোর্ট যায় কীভাবে? বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে ভারতের নাগরিক আলমগীরের জঙ্গী অর্থায়নের খবরের বিষয়ে ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন ঢাকার গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি মালয়েশিয়া থেকে ফেরত আসার পর ঢাকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গ্রেফতার হয়েছে ব্লগার আহমেদ রাজীব হত্যা মামলায় মৃত্যুদ-াদেশপ্রাপ্ত আসামি শীর্ষ স্থানীয় জঙ্গী নেতা রেদোয়নুল আজাদ রানা। রানার হাতে পাসপোর্ট গেল কীভাবে? অনুরূপভাবে আশুলিয়ায় নিহত নব্য জেএমবি নেতা আবদুর রহমান ওরফে সারোয়ার জাহান, জঙ্গী সদস্য মামুনুর রশীদ রিপন, শরীফুল ইসলামের কাছে থাকা পাসপোর্ট দিয়ে বিদেশে ভ্রমণ করেছে। এভাবে জঙ্গী, সন্ত্রাসী, খুনীদের কাছে অবাধে পাসপোর্ট চলে যাওয়ায় তাদের নিরাপদে বিদেশে অবাধে যাতায়াত করার বিষয়টি খুবই বিপজ্জনক বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, আন্তর্জাতিক জঙ্গীগোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত অভিযোগে বাংলাদেশ থেকে অসমে ফিরে জঙ্গী অর্থায়ন সন্দেহে গ্রেফতার হওয়া ধনাঢ্য ব্যক্তি আলমগীর হোসাইনের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। প্রায় একযুগ আগে ভারতের অসমের করিমগঞ্জে ভারতীয় নাগরিক আলমগীরের তেমন অর্থ বিত্ত না থাকলেও বাংলাদেশ থেকে অসমে ফেরত যাওয়ার পর দেখা যায় কোটি কোটি টাকার অর্থ বিত্তের মালিক তিনি। বিলাসী জীবনযাপনের মতোই তার সন্দেহজনক চালচলন। দক্ষিণ অসমের করিমগঞ্জ জেলা থেকে আলমগীর হোসাইন নামের ওই ভারতীয় জঙ্গীকে বাংলাদেশী পাসপোর্টসহ গ্রেফতার করার পর পুলিশ কি ধরনের তথ্য পেয়েছে সেই বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। তার অর্থ বিত্তের উৎসের সঙ্গে আয়ের সামঞ্জস্য না থাকায় জঙ্গীগোষ্ঠী জামায়াত-উল-মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) তাকে অর্থায়ন করে থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছে দেশটির পুলিশ। ঢাকার গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে পাওয়া খবরে জানা গেছে, ভারতীয় নাগরিক আলমগীর হোসাইন (৩৮) করিমগঞ্জের বদরপুরের বাড়ি ছাড়েন ১৯৯৮ সালে। ২০১০ সালে বাংলাদেশী পাসপোর্টসহ এলাকায় ফিরে স্থানীয় এক নারীকে বিয়ের পর দ্রুত করিমগঞ্জ ত্যাগ করেন তিনি। এরপর ২০১৩ সালে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য এলাকায় ফিরে যান তিনি। কয়েক মাস আগে অসমের এই জঙ্গী ৪ কোটি রুপীতে ওই এলাকায় একটি বিলাসবহুল বাড়ি ও আরও কয়েকটি স্থাপনা কেনেন। এত স্বল্প সময়ের মধ্যে কীভাবে এত টাকার মালিক হলেন তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। অসমের পুলিশ ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ হাইকমিশনকে হোসাইনের ব্যাপারে অবগত করা হয়েছে। শুধু ভারতীয় নাগরিক সন্দেহভাজন জঙ্গীরাই যে বাংলাদেশী পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারছেন তা নয়, বাংলাদেশের সন্দেহভাজন জঙ্গীরাও ভারতের পাসপোর্ট সংগ্রহ করে ভ্রমণ করছেন। ভুল তথ্য দিয়ে ভুয়া পাসপোর্ট তৈরি করে বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের জঙ্গী, সন্ত্রাসী, খুনীরাই পাসপোর্ট সংগ্রহ করে ভ্রমণ করছেন। চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি উড়িষ্যাতে দুই বাংলাদেশীকে ভুয়া ভারতীয় পাসপোর্টসহ গ্রেফতার করা হয়। অনেক বাংলাদেশী অপরাধীও গা ঢাকা দিতে ভুয়া পরিচয়ে ভারতে অবস্থান করছেন। তিনটি খুনের মামলার আসামি কুমিল্লা জেলার বাসিন্দা সোহেল আহমেদ ওরফে ওমর নাসির ওরফে সাজু চলতি বছর অসমের কাছ থেকে গ্রেফতার করা হয়। ঢাকার গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের জঙ্গী, সন্ত্রাসী ও খুনীদের এক দেশ থেকে অপর দেশে গিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভুয়া পাসপোর্ট সংগ্রহ করে আত্মগোপন করে থাকার বিষয়ে দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কূটনৈতিক চ্যানেলেও এসব অপরাধীর বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়ার ধরাবাহিকতা অব্যাহত আছে।
×