ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মমতা ও ভালবাসা দিয়ে রোগীদের সেবা দিন ॥ স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১ মার্চ ২০১৭

মমতা ও ভালবাসা দিয়ে রোগীদের সেবা দিন ॥ স্বাস্থ্যমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মমতা ও ভালবাসা দিয়ে রোগীদের সেবা দেয়ার জন্য চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেন, সরকারী হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো এখনও দরিদ্র সাধারণ মানুষের চিকিৎসা পাওয়ার শেষ আশ্রয়স্থল। বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার আর্থিক সামর্থ্য তাদের থাকে না। সরকারী হাসপাতালে সেবা না পেলে তারা হয়ে পড়ে অসহায়। দরিদ্র রোগীদের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে প্রণীত হচ্ছেÑ সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা আইন। মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেল বাংলাদেশ প্লাস্টিক সার্জনস সোসাইটি আয়োজিত ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন প্লাস্টিক সার্জারি’ শীর্ষক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সোসাইটির অধ্যাপক ডাঃ সামন্ত লাল সেনের সভাপতি সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন- স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ, বি এম এ মহাসচিব অধ্যাপক ডাঃ ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল, অধ্যাপক ডাঃ মোঃ সাজ্জাদ খন্দকার প্রমুখ। চিকিৎসকদের উদ্দেশ্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার গরিবসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। আশা করি আপনারাও এসব মানুষ যাতে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পান সে বিষয়ে আরও বেশি দায়িত্ববান হবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রণীত সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা বাস্তবায়নে আপনাদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসা ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের ওপর আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথা ব্যবস্থা গ্রহণ করে আসছে সরকার। তবে কথায় কথায় কোন ঘটনার অজুহাত দেখিয়ে চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের জরুরী চিকিৎসাসেবা বন্ধ রাখার বিষয়টি মেনে নেয়া যাবে না। বগুড়ায় রোগীর স্বজনদের ওপর আক্রমণ চালানোর সমালোচনা করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মুমূর্ষু রোগীর স্বজনদের ওপর কিছু সংখ্যক ইন্টার্ন চিকিৎসকদের আক্রমণ চালানোর বিষয়টি অমানবিক। মোহাম্মদ নাসিম আরও বলেন, স্বাস্থ্য খাতে যুগান্তকারী সফলতা পেয়েছে বাংলাদেশ। স্বাস্থ্যবিষয়ক সহস্রাব্দ অর্জনেও পিছিয়ে নেই এই সেক্টর। প্রশংসিত হয়েছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে। দেশের সর্বত্র বিস্তার লাভ করেছে ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবার নেটওয়ার্ক। এমন মজবুত অবকাঠামোর ওপর দাাঁড়িয়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের মাত্রার ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামো বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশের মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে জনবল বৃদ্ধি, অবকাঠামোর উন্নয়ন, মাতৃ ও শিশু মৃত্যু হ্রাস, ওষুধের সরবরাহ বৃদ্ধি, কমিউনিটি ক্লিনিক চালু, স্বাস্থ্য খাতে ডিজিটাল বাংলাদেশ কার্যক্রম ইত্যাদি উন্নয়নমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার। দেশের ৯৯ ভাগ উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে রয়েছে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিসেবার ব্যবস্থা। বর্তমানে প্রতি মাসে ৮০ থেকে ৯০ লাখ মানুষ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সেবা নেন। দেশে অনূর্ধ্ব ১২ মাস বয়সের শিশুদের সকল টিকা প্রাপ্তির হার ৮১ ভাগ। হ্রাস পেয়েছে মাতৃ ও শিশুর মৃত্যুহার। পোলিও ও ধনুষ্টঙ্কারমুক্ত হয়েছে দেশ। বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি উপখাতসমূহের সার্বিক উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। এসব কর্মসূচীর মূল লক্ষ্য হল জনগণের বিশেষ করে মহিলা, শিশু এবং সুবিধাবঞ্চিতদের স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টিসেবা প্রাপ্তির চাহিদা বৃদ্ধি, কার্যকর সেবা প্রাপ্তি সহজলভ্য এবং স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টিসেবাসমূহের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাস, রোগের প্রাদুর্ভাব ও মৃত্যুর হার হ্রাস এবং পুষ্টিমান বৃদ্ধি করা। দেশব্যাপী একটি ব্যাপকভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। সারাদেশে মডেল ফার্মাসি স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ভেজাল, নিম্নমান ও প্রশ্নবিদ্ধ ওষুধ কোম্পানীগুলো বন্ধ করে দিচ্ছে সরকার। এবিষয়ে কোন আপস করা যাবে না। আর অনেক ফার্মাসিতে ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ বিক্রি হওয়ার অভিযোগও পাওয়া যায়। তাই সারাদেশে মডেল ফার্মাসি স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে রাজধানীতে বেশকিছু মডেল ফার্মেসি উদ্বোধন করা হয়েছে। এসব ফার্মাসিতে প্রশিক্ষিত ফার্মাসিস্ট ছাড়া অন্য কেউ ওষুধ বিক্রি করতে পারবে না। দেশে একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সর্বাধুনিক ‘শেখ হাসিনা বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট’ স্থাপনের কাজ দ্রুতগতি চলছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিগত কয়েক বছরে একটি রাজনৈতিক দলের প্রতিহিংসা মেটানোর লক্ষ্যে সারাদেশে আগুন ও পেট্রলবোমা সন্ত্রাস ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। শত শত মানুষ আগুনে দগ্ধ হয়ে ঝলসানো শরীর নিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছিল। মারা গেছে অসংখ্য নিরীহ মানুষ। তাদের হাত থেকে শিশু বা অন্তঃসত্ত্বা নারীও রক্ষা পায়নি। এ সময় দিনমজুর, রিক্সাচালক, ট্রাক ড্রাইভারসহ অগণিত গরিবের পাশে মায়ের মমতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দাঁড়ানোর কথা স্মরণ করে মন্ত্রী বলেন, সারাদেশের মানুষ দেখেছে আগুন সন্ত্রাসের সময় প্রধানমন্ত্রী কিভাবে দরিদ্র মানুষের জন্য সর্বোত্তম চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন। জনগণ ও অগ্নিদগ্ধ মানুষের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর সেই অবদানকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বার্ন ইনস্টিটিউটের নামকরণ জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনার নামে রাখা হয়েছে। এটি চালু হলে দগ্ধরোগীদের আরও উন্নত চিকিৎসার পাশাপাশি অনেক চিকিৎসক ও নার্স প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারবেন। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য এবং স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনে আবারও আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোন বিকল্প নেই। আবেগ দিয়ে রাজনীতি হয় না। আজ মানুষ বুঝে গেছে একটি দলকে যদি ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতায় না রাখা যায় তাহলে উন্নয়ন হবে না। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন মঞ্চ ও মুক্তিযোদ্ধা যুব কমান্ড আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। মহান একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা যুব কমান্ডের সভাপতি নজরুল ইসলাম বাচ্চুর সভাপতিত্বে সভায় নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বক্তব্য রাখেন। মোহাম্মদ নাসিম বলেন, জঙ্গী উত্থানকারীদের বেগম খালেদা জিয়া সমর্থন করেছেন। তাদের ব্যবহার করে জ্বালাও-পোড়াও করে মানুষ হত্যা করেছেন। আর যাই হোক, বাংলার মানুষ এই মানুষ হত্যাকারীদের আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তাই আগামী নির্বাচনে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে দেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবে। সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে ১৪ দলের এই মুখপাত্র বলেন, আগামী নির্বাচনে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হবেন- শেখ হাসিনা। আমরা সংবিধানের বাইরে যেতে পারব না। নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে অনেকে অনেক ফর্মুলা দিচ্ছেন। কিন্তু কোন ফর্মুলা দিয়ে কোন লাভ হবে না। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে বাম দলগুলোর ডাকা হরতাল প্রসঙ্গে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, রাজনীতি এখন পরিবর্তন হয়েছে। এখন হরতাল ডাকলে হয় না। হরতাল ডাকলেই হরতাল হবে এই সংস্কৃতি বাংলাদেশে আর নেই। মানুষ এখন বুঝে গেছে, মানুষ উন্নয়ন চায়। যারা হরতাল ডাকে তারাও বুঝে হরতাল হবে না। নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। তাই তিনি দেশের উন্নয়ন ও সরকারের কোন ভাল কাজ দেখতে পান না। অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নৌপরিবহনমন্ত্রী সারাদেশে পরিবহন শ্রমিকদের অঘোষিত কর্মবিরতিতে ধর্মঘট বলতে নারাজ। তিনি বলেন, ধর্মঘট নয় শ্রমিকরা কাজ করবেন না বলে স্বেচ্ছায় অবসরে গেছেন।
×