ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অগ্নিঝরা মার্চ

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১ মার্চ ২০১৭

অগ্নিঝরা মার্চ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ‘মুক্তির মন্দির সোপানতলে কত প্রাণ হলো বলিদান, লেখা আছে অশ্রুজলে...।’ রক্তক্ষরা-অগ্নিঝরা মার্চের প্রথম দিন আজ। উনিশ শ’ একাত্তর সালের এই মাসে তীব্র তুঙ্গ আন্দোলনের পরিণতিতে শুরু হয় মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটেছিল বাংলাদেশ নামক স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা হলেও চূড়ান্ত আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল একাত্তরের ১ মার্চ থেকেই। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এদিন বেতার ভাষণে ৩ মার্চের গণপরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। এ সময় ঢাকা স্টেডিয়ামে (বর্তমান বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম) পাকিস্তান বনাম বিশ্ব একাদশের ক্রিকেট খেলা চলছিল। ইয়াহিয়া খানের ওই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে দর্শক খেলা ছেড়ে বেরিয়ে আসে। ততক্ষণে হাজারো মানুষ পল্টন-গুলিস্তানে বিক্ষোভ শুরু করে দিয়েছে। সেই আন্দোলন শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ নেয়। সেদিন মতিঝিল-দিলকুশা এলাকার পূর্বাণী হোটেলে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। ক্ষুব্ধ ছাত্ররা সেখানে গিয়ে প্রথমবারের মতো সেøাগান দেয়, ‘বীর বাঙালী অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর’। ছাত্ররা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে কর্মসূচী ঘোষণার দাবি জানায়। বিক্ষোভ-সেøাগানে উত্তাল ঢাকাসহ সারাদেশ। আর কোন আলোচনা নয়, এবার পাক হানাদারদের সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তোলার দাবি ক্রমশঃ বেগবান হতে থাকে। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বাইরে চলছে বিক্ষুব্ধ বাঙালীর কঠোর কর্মসূচী দাবিতে মুহুর্মুহু সেøাগান। বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধু ২ ও ৩ মার্চ তৎকালীন পাকিস্তানে সর্বাত্মক হরতালের ডাক এবং ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসভার ঘোষণা দেন। সেই শুরু। এরপর ১ মার্চ পেরিয়ে ২ মার্চ। একে একে পার হয় ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ ২৫টি দিন। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালীর ওপর আক্রমণ চালায়, শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। এই পথ ধরে বাঙালী দামাল ছেলেরা এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনেন একটি স্বাধীন দেশ- গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। বছর ঘুরে এক অন্যরকম পরিবেশে বাঙালীর জীবনে এসেছে অগ্নিঝরা মার্চ। একাত্তরের পরাজিত শত্রু ও তাদের দোসররা এখন অনেকটাই গর্তে ঢুকে পড়েছে। দেশের বিভিন্নস্থানে চোরাগোপ্তা হত্যাকা- চালিয়ে তাদের অস্তিত্বের জানান দিলেও দেশের কোথাও প্রকাশ্য মাথা তুলে দাঁড়ানোর মতো শক্তি নেই তাদের। তবে পরাজিত শত্রুদেশ পাকিস্তানের ষড়যন্ত্র এখনও শেষ হয়নি। মাত্র কিছুদিন আগে ২৫ মার্চ কালরাতে গণহত্যার বীভৎস্য ঘটনা থেকে নিজেদের দায় এড়াতে নতুন চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে অনেকটাই ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হওয়া পাকিস্তান। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মদদে দেশটি একটি মিথ্যা সর্বস্ব বই বের করেছে, যাতে ২৫ মার্চ গণহত্যার দায় থেকে নিজেদের বাঁচাতে দোষ চাপিয়ে দেশ মাতৃকার শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর। এ ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদে ফেটে পড়েছে দেশের মানুষ। গণতন্ত্রের সূতিকাগার জাতীয় সংসদেও নিন্দা জানানোর পাশাপাশি ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবসের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন খোদ সরকার প্রধান শেখ হাসিনাও। তিনিও নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের উদ্যোগ নেয়া হবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ দিনটি গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ে সারাবিশ্বে জোরদার কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হবে। আওয়ামী যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সংগঠন মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন এবং আলোর মিছিল করে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন সংগঠন অগ্নিঝরা মার্চ স্মরণে মাসব্যাপী কর্মসূচী হাতে নিয়েছে।
×