ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাবুলকে তলব করা হচ্ছে, উসকে দিচ্ছে জামাই- শ্বশুরের বাহাস

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১ মার্চ ২০১৭

বাবুলকে তলব করা হচ্ছে, উসকে দিচ্ছে জামাই- শ্বশুরের বাহাস

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চাঞ্চল্যকর মিতু হত্যাকা- নিয়ে সাবেক এসপি বাবুল আক্তারকে আবারও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা সিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের এডিসি কামরুজ্জামান। ঢাকা থেকে ফিরে আসার পর মঙ্গলবার বিকেলে সিএমপির নিজ দফতরে কামরুজ্জামান সাংবাদিকদের এ তথ্য দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, মিতুর বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যরা বাবুল আক্তারকে অভিযুক্ত করে বেশকিছু তথ্য দিয়েছেন। এসব তথ্যের আলোকে বাবুল আক্তারকে আবারও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। উল্লেখ্য, এ হত্যাকা-ের মামলার বাদী বাবুল আক্তার। তাকে ইতোপূর্বে তদন্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রামে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। মিতুর বাবাকে তিনদফায় এবং মাকে দুদফায় জিজ্ঞাসবাদের পাশাপাশি বাবুল আক্তারের ভাই এবং মিতুর অন্যান্য আত্মীয়স্বজনদেরও বক্তব্য গ্রহণ করেছেন। গত রবিবার তদন্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান ঢাকায় গিয়ে মিতুর বাবা মোশারফ হোসেন ও মা শাহেদা মোশারফ এবং পরিবারের অন্যান্য আত্মীয়স্বজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের অভিযোগ লিপিবদ্ধ করেছেন। প্রসঙ্গত, দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করা সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকা- নিয়ে বর্তমানে দু’পক্ষের যে বাহাস চলছে তা রীতিমত টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। এ বাহাস চলছে নিহত মিতুর পিতা মোশারফ হোসেন এবং স্বামী সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের বক্তব্য-পাল্টা বক্তব্যের মাধ্যমে। মিতু হত্যাকা-ের নেপথ্যের মূল নির্দেশদাতা কে এ নিয়ে উৎস্যুক মহলের পাশাপাশি তদন্ত সংস্থাও বিভ্রান্তিতে রয়েছে। জামাই-শ্বশুরের বাহাসের কারণে সন্দেহের ডাল-পালার আরও বিস্তৃতি ঘটেছে। হঠাৎ করে জামাই-শ্বশুরের ইতোপূর্বেকার মধুর সম্পর্কের হঠাৎ করে এত বিশাল চিড় কেন ধরল তা নিয়েও নানা সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। মিতু হত্যার দীর্ঘ আটমাস পর নতুন নতুন তথ্য দিয়ে যাচ্ছে উভয় পক্ষ। এতে শ্বশুর ও জামাই একে অপরকে দোষারোপ করে চলেছেন। মিতু খুন হয়েছেন গত বছরের ৫ জুন চট্টগ্রামের জিইসি মোড় এলাকায়। একজন পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী মিতু। মিতুর স্বামী তখন এসপি পদে ছিলেন। তিনি নিজে বাদী হয়ে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় মামলাটি করেছেন। মামলা তদন্ত করছে পুলিশ অর্থাৎ গোয়েন্দা বিভাগ। যারা হত্যাকা-ে নেতৃত্ব দিয়েছে তারাও পুলিশের সোর্স। সঙ্গত কারণে হত্যাকা- ঘটানোর প্রক্রিয়া এবং কারা ঘটিয়েছে তা উদঘাটিত হয়েছে। শুধু নির্দেশদাতা কে তা অনুদঘাটিত রয়েছে। তবে বিভিন্নভাবে এ হত্যাকা-ের সঙ্গে বাবুল আক্তার নিজে জড়িত বলে অভিযোগ থাকলেও তার কোন প্রমাণ মিলাতে পারেনি তদন্ত সংস্থা। মিতু খুন হওয়ার পর থেকেই দুই সন্তানকে নিয়ে বাবুল আক্তার জামাই আদরেই শ্বশুর পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোশারফ হোসেনের ঢাকার বাসায় থাকতেন। সম্প্রতি তিনি তার দুই সন্তানকে নিয়ে অন্যত্র অর্থাৎ নিজ পিতার বাসায় অবস্থান নিয়েছেন। এরপর থেকেই ঘটনার চিত্র ধীরে ধীরে পাল্টাতে শুরু করেছে। হত্যাকা-ের পর বাবুলের শ্বশুর-শাশুড়ি জামাইয়ের পক্ষে বলেছিলেন এখন তারা সে অবস্থান থেকে সরে এসেছেন এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জামাই বাবুল আক্তারই তাদের মেয়ে মিতুকে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে সন্দেহমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। ঘটনা উদঘাটনে প্রয়োজনে বাবুল আক্তারকে গ্রেফতারের দাবিও জানিয়েছেন শ্বশুর মোশারফ হোসেন। গত রবিবার ঢাকায় মোশারফ হোসেনের বাসায় তদন্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান পরিবারের সকল সদস্যকে টানা চারঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। এ বক্তব্য তিনি লিপিবদ্ধও করেছেন। এতে তারা বাবুলকে বিভিন্নভাবে অভিযুক্ত করেছেন। যা তদন্তের স্বার্থে তিনি মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে বাবুলের সঙ্গে মিতুর দাম্পত্য কলহ যে ছিল মোশারফ হোসেন তা বলেছেন বলে স্বীকার করেছেন। পাশাপাশি বাবুলের বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগও এনেছেন বলে জানিয়েছেন। গত সোমবার মিতু হত্যাকা- নিয়ে পিতা মোশারফের বক্তব্য সংবলিত রিপোর্ট কয়েকটি পত্রিকায় আসার পর ওই দিনই বাবুল আক্তার তার ফেসবুকে শ্বশুর-শাশুড়ি ও সে পরিবারের লোকজনদের সরাসরি নানাভাবে অভিযুক্ত করে নাতিদীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দেন। এতে বাবুল আক্তার অজানা বহু তথ্য প্রকাশ করেছেন। তন্মধ্যে তাদের সঙ্গে থাকা, ওই বাড়ির উপরতলায় ফ্ল্যাট তৈরিতে ১০ লাখ টাকা দাবি, শ্যালিকাকে বিয়ে করার প্রস্তাবসহ বিভিন্ন তথ্য অভিযোগ আকারে প্রকাশ করেন। স্ট্যাটাসে তিনি এও জানান দেন যে, তাদের কথামত না চললে তারা তাকে (বাবুল) পচিয়ে ছাড়বেন। স্ট্যাটাসে বাবুল শ্বশুর পক্ষের পরিবারের নানা কাহিনী প্রকাশ করে উল্টো তাদের পচাতে দ্বিধা করেননি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুপক্ষের বাহাসের এ চিত্র আগ্রহীরা গোগ্রাসে গিলছেন। লাইক, শেয়ার মন্তব্যের ছড়াছড়ি। শ্বশুর মোশারফ তদন্ত কর্মকর্তাকে বলেছেন, বাবুল পুলিশের নাম করা ডাক সাইট অফিসার ছিলেন। তাকেই বলতে হবে মিতুর হত্যাকারী কে? শ্বশুরের এ ধরনের বক্তব্যের উত্তরে বাবুল বলেছেন, এটা তার কাজ নয়, তদন্ত সংস্থার কাজ। বাবুল তার স্ট্যাটাসে কয়েক দফায় দাবি করেছেন শ্বশুর পক্ষের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞ। কিন্তু কিশোরী শ্যালিকাকে বিয়ে করার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় শ্বশুর পক্ষ এখন অপপ্রচারে নেমেছে। পাশাপাশি দুপক্ষের একটি কথার মিল পাওয়া গেছে, সেটি হচ্ছে শ্বশুর মোশারফ ও শাহেদা মোশারফ বলেছেন, দুই নাতির মুখের দিকে চেয়ে তারা এতদিন নীরব ছিলেন। পক্ষান্তরে বাবুল আক্তারও দাবি করেছেন, শ্বশুর পক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতার কারণেই তিনি এতদিন চুপচাপ ছিলেন। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, বাবুল আক্তার ছাত্র জীবনে শ্বশুরের বাসায় থেকে লেখাপড়া করে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পুলিশ সার্ভিসে যোগ দেন। মিতু হত্যা নিয়ে দুপক্ষের অর্থাৎ জামাই শ্বশুরের বাহাস ভালই জমেছে। কিন্তু মিতুকে কে হত্যার আসল নির্দেশদাতা কে এর সঠিক কোন উত্তর এখনও মেলেনি। মঙ্গলবার তদন্ত কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান। শুধু বলেছেন, শ্বশুর পক্ষের নানা অভিযোগ বাবুলকে নিয়ে যেমন আছে, তেমনি বাবুলেরও অভিযোগ শ্বশুর পক্ষকে নিয়ে আছে। সবকিছু তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। খুনী কারা, কিভাবে খুন করা হয়েছে সবই উদঘাটিত হয়েছে। এখন শুধু প্রমাণ সাপেক্ষে অপেক্ষা করা হচ্ছে মূল নির্দেশদাতা কে? অর্থাৎ মিতুকে হত্যার জন্য কে বা কাদের মাধ্যমে পরিকল্পনার নির্দেশ এসেছিল। কামরুজ্জামান জানান, আমরা নির্দেশদাতাকে খুঁজছি। বিভিন্ন ধরনের তথ্য আছে। বাবুলের বিরুদ্ধেও আছে। কিন্তু প্রমাণ ছাড়াতো কাউকে অভিযুক্ত করা যায় না। বাবুল আক্তারকে কখন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হচ্ছে জানতে চাওয়া হলে তদন্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান জানান, সময় মতো ডাকা হবে। বাদী হিসাবে বাবুল আক্তার তদন্তে সহযোগিতা করছেন বলেও তিনি সাংবাদিকদের তথ্য দেন।
×