ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বকাপ স্বপ্ন অধরাই থাকল

প্রকাশিত: ০৫:১২, ১ মার্চ ২০১৭

বিশ্বকাপ স্বপ্ন অধরাই থাকল

স্বপ্ন ছিল বড়- কিন্তু তা বাস্তবায়নে কার্যকর নমুনা দেখা যায়নি মাঠে। সে কারণে স্বপ্নটা অধরাই থাকল। এবার মহিলা বিশ্বকাপ বাছাইয়ে আগের মতোই পঞ্চম স্থান নিয়ে শেষ করেছে বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দল। প্রাথমিক লক্ষ্য হিসেবে সুপার সিক্সে ওঠার স্বপ্নটা পূরণ হয়েছে। কিন্তু মূল লক্ষ্য বিশ্বকাপ খেলার টিকেট অর্জনটা হয়নি। মহিলা ক্রিকেট দলকে ভালভাবে গড়ে তোলার দিকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) উদাসীনতাকেই এ জন্য অনেকে দুষছেন। কারণ, ২০১১ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপ বাছাইয়ে অংশ নিয়ে দলটি দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়েছিল, হয়েছিল পঞ্চম। ৬ বছর পর সেই নৈপুণ্যের কোন নড়চড় হয়নি। এর পেছনে মহিলা ক্রিকেটারদের পর্যাপ্ত ম্যাচ খেলার ঘাটতি, অপ্রতুল অনুশীলনকেই এখন বড় হিসেবে দেখছেন অনেকে। এমনকি মহিলা ক্রিকেটারদের নিয়মিত ঘরোয়া আসরগুলোও সেভাবে হয় না। কোন টুর্নামেন্টে অংশ নেয়ার আগে বড়জোর অনুশীলনেই সীমাবদ্ধ থাকে সব। যদিও এবার শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ বাছাইয়ের আগে টানা কিছু ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। আয়ারল্যান্ড সফরের পর এশিয়া কাপ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলেছে। এর সঙ্গে গত এক বছরে দুইবার অধিনায়কত্বে পরিবর্তন আসাটাকেও দলের নৈপুণ্যে প্রভাব ফেলেছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। ২০১১ সালে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ বাছাই খেলেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। প্রথমবার অংশ নিলেও সেই জড়তা দেখা যায়নি কিংবা নৈপুণ্যে কোন সমস্যা চোখে পড়েনি। সবাইকে অবাক করে দিয়ে তখন অধিনায়ক সালমা খাতুনের দলটি পঞ্চম স্থান অর্জন করেছিল। ওয়ানডে স্ট্যাটাসও পেয়ে যায় বাংলাদেশের মেয়েরা। ২০১৪ সালে ঘরের মাটিতে টি২০ মহিলা বিশ্বকাপেও অংশ নেয় দল। সেখানেও ভাল নৈপুণ্য দেখিয়ে ভবিষ্যতে দারুণ কিছু করার ইঙ্গিত দেয়। অধিনায়ক সালমা ওই বিশ্বকাপ শেষে বিশ্বের এক নম্বর টি২০ অলরাউন্ডার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। ওই সময় জেলা ক্রিকেট লীগ, প্রিমিয়ার লীগ খেলে ক্রমেই একটি গোছানো দলে পরিণত হচ্ছিল বাংলাদেশ মহিলা দল। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তো বটেই, দেশেও বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন সালমারা। এর মধ্যে শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলকেও হারিয়ে দিয়েছিল দেশের মাটিতে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে। তবে ছন্দপতনের শুরুটা গত বছর থেকে। নৈপুণ্যে ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। যে দলটি উজ্জ্বল একটা ভবিষ্যতের পথ দেখাচ্ছিল তারা নিজেদের পারফর্মেন্সটা আর ধরে রাখতে পারেনি। কারণ হিসেবে অনেকে পর্যাপ্ত যতœ ও নজরদারির ঘাটতিকেই দেখছেন বড় করে। কারণ, ঘরোয়া প্রতিযোগিতাগুলোও হয়ে গেছে অনিয়মিত। দ্বিপক্ষীয় সিরিজও সেভাবে হয়নি। অথচ উন্নতির অন্যতম উপায় হচ্ছে নিয়মিত খেলার মধ্যে থাকা। দলের নৈপুণ্যে ভাটা পড়ার কারণে সালমাকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে পেসার জাহানারা আলমকে অধিনায়ক করা হয়। তবে তার অধীনে মহিলা দল আরও দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত অলরাউন্ডার রুমানা আহমেদের কাঁধে বর্তায় নেতৃত্বভার। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে এবার রুমানা আহমেদের দলটির বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল ওয়ানডে মর্যাদা ধরে রাখা। সেটা নিয়েও শঙ্কা ছিল সাম্প্রতিক সময়ে দলটির নাজুক পারফর্মেন্সের কারণে। বাংলাদেশের মেয়েরা এবার ছিল ‘বি’ গ্রুপে। এই গ্রুপে দক্ষিণ আফ্রিকা, স্কটল্যান্ড, পাপুয়া নিউগিনি ও পাকিস্তান। ‘এ’ গ্রুপে ভারত, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও জিম্বাবুইয়ে। উভয় গ্রুপ থেকে তিনটি করে দল সুপার সিক্সে ওঠার নিয়ম। সুপার সিক্স নিশ্চিত করতে পারলেই আগামী চার বছরের জন্য ওয়ানডে মর্যাদা অটুট থাকবে এমন একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। এ কারণে বাংলাদেশের মেয়েদের প্রাথমিক লক্ষ্য সুপার সিক্সে ওঠা। সেই লক্ষ্য বাংলাদেশের মেয়েরা পূরণ করে রুমানরা। এটাকে তেমন কঠিন হিসেবে দেখেননি অধিনায়ক রুমানা। কারণ, নিজেদের গ্রুপে দক্ষিণ আফ্রিকা ও পাকিস্তান ছাড়া বড় কোন প্রতিপক্ষ ছিল না। সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকার মেয়েদের কাছে ঘরের মাটিতে ৪-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ হেরে গিয়ে অবশ্য বিপর্যস্ত অবস্থায় ছিল বাংলাদেশ মহিলা দল। এরপর অনুশীলনেই সীমাবদ্ধ থেকেছে প্রস্তুতি। সেই প্রোটিয়া মেয়েদের সঙ্গেই একই গ্রুপে লড়তে হয়েছে বাংলাদেশ দলকে। এ বিষয়ে রুমানা বলেন, ‘আমরা মহিলা বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে চাই। কিন্তু টুর্নামেন্টে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো শক্তিশালী দুটি দল খেলার কারণে এটা সহজ হবে না। পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাও আছে বড় প্রতিপক্ষ হিসেবে।’ সুপার সিক্সে ওঠার রাস্তাটা সহজই ছিল পাপুয়া নিউগিনি ও স্কটল্যান্ড থাকায়। তবু আশঙ্কায় পড়েছিল দল। তবে সেটা পেরিয়ে যাওয়াটা সহজ ছিল বলেই রুমানারা এটি নিয়ে চিন্তা করেননি। আগামী ৪ বছরের জন্য অন্তত ওয়ানডে মর্যাদাটা ধরে রেখেছে রুমানারা। কিন্তু বড় চিন্তা ও লক্ষ্য ছিল বিশ্বকাপ খেলার। সেটা হয়নি এবারও। উল্লেখ্য, বাছাইয়ের সেরা চারটি দল বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পাবে এমনটাই নিয়ম। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের মেয়েরা বেশ নাজুক অবস্থায় ছিল। থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপেও ব্যর্থ হয়েছে দলটি। হেরেছে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার কাছে। কিন্তু বাছাইয়ের জন্য ভাল প্রস্তুতি হয়েছে দাবি করে রুমানা বলেছিলেন, ‘আমরা এই আসরের জন্য কঠোর অনুশীলন করেছি। এখানে আসার আগে আমরা অনেকগুলো ভাল মানের ম্যাচ খেলেছি। আমরা প্রতিপক্ষদের সঙ্গে বেশ পরিচিত এবং পরিবেশটাও জানা। আমাদের ফলাফলগুলো হয়তো নিজেদের পক্ষে আসেনি কিন্তু আশা করছি, ভুলগুলো থেকে আমাদের অভিজ্ঞতা বেড়েছে এবং অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। সবগুলো দলেরই লক্ষ্য বিশ্বকাপে খেলার। এটা চূড়ান্ত পর্ব সেই মঞ্চে যাওয়ার। আমাদের দলটা সেই স্বপ্ন বাস্তব করার ক্ষেত্রে খুব একটা দূরে নেই।’ কিন্তু বাস্তবে সেটা দেখা গেল না। সুপার সিক্সে কোন বোনাস পয়েন্ট ছাড়াই উঠেছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। কিন্তু মূল প্রতিপক্ষ হিসেবে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত ৪ পয়েন্ট করে এবং শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান ২ পয়েন্ট করে অর্জন করে সুপার সিক্স পর্ব শুরু করে। সে কারণে এমনিতেই বাংলাদেশ দল ছিল বেকায়দা পরিস্থিতিতে। একমাত্র আয়ারল্যান্ড মহিলা দলকে হারাতে পেরেছে রুমানারা। শেষ ম্যাচে লঙ্কান মেয়েদের হারাতে পারলেও সম্ভাবনা থাকত। কিন্তু সেই ম্যাচেও বাজে নৈপুণ্য দেখিয়ে বড় পরাজয় বরণ করে রুমানারা। দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতের কাছে বিশাল ব্যবধানে বিধ্বস্ত হওয়ার কারণে নেট রানরেটে পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। আর লঙ্কান মেয়েদের কাছে হেরে হৃদয়ভঙ্গ এবং একইসঙ্গে স্বপ্নভঙ্গও হয় বাংলাদেশের মেয়েদের। আবারও তাই পঞ্চম স্থান নিয়েই ফিরতে হয়েছে।
×