ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাদকে সয়লাব কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ০৪:৫৫, ১ মার্চ ২০১৭

মাদকে সয়লাব কুড়িগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম থেকে ॥ মাদক ও জুয়ায় ছেয়ে গেছে কুড়িগ্রাম। জেলার প্রায় ৬০ ভাগ তরুণ-যুবক মাদক ও জুয়ায় আসক্ত বলে তথ্য নিশ্চিত করেছে জেলা মাদক দ্রব্য অধিদফতর। রাজনৈতিক পৃষ্টপোষকতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় দুর্নীতিগ্রস্ত সদস্যের যোগসাজশে মাদকে সয়লাব কুড়িগ্রাম। জেলার ২৬৫ কিলোমিটার সীমান্ত গলে প্রায় অর্ধশত পয়েন্ট দিয়ে অবাধে আসছে প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকার মাদক। পানির স্রোতের মতো আসা এসব মাদক বিক্রি হচ্ছে শতাধিক পয়েন্টে। সড়ক ও নৌপথে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। কমপক্ষে ২০টি পয়েন্টে চলছে জুয়া ও যাত্রার নামে অশ্লীল নৃত্য। পুলিশ, মাদকদ্রব্য অধিদফতর ও বিজিবির নেয়া নানা উদ্যোগেও নিয়ন্ত্রণে আসছে না মাদক ও জুয়া। ফলে বাড়ি বাড়ি বেড়েছে অশান্তি ও চুরি। মাদকে জড়িয়ে পড়ছে নারীরাও। বিশেষ করে তরুণ ও যুবকদের নিয়ে অভিভাবকদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। কুড়িগ্রাম মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার প্রায় ৬০ ভাগ তরুণ, যুবক মাদকাসক্ত। প্রতিদিন গড়ে কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের মাদক কুড়িগ্রামে প্রবেশ করে। এর সিংহভাগ চলে যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। স্থানীয় ভোক্তারা গড়ে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার পিস ফেনসিডিল সেবন করে। এছাড়া ইয়াবা, মদ, গাঁজা, হেরোইন সেবীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। সড়ক ও নৌপথে মাদকের বড় চালান চলে যায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। ভুরুঙ্গামারীর জয়মনি থেকে পাথরের গাড়িতে ও গবাদিপশুর গাড়িতে মাদক চলে যায় সড়কপথে। এছাড়া ফুলবাড়ীর গোড়কম-ল, বালারহাট, বাংটুরঘাট, কুলাঘাট-লালমনিরহাট হয়ে সড়কপথে মাদক যায়। ফুলবাড়ির অনন্তপুর-কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর-উলিপুর-চিলমারী হয়ে নৌপথে মাদক যায় গাইবান্ধা, জামালপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে। মাদক কেনাবেচা হয়- বেড়াকুটি বাজার, দিঘীরপাড়, রামখানা, জয়মনিরহাট, নাগেশ^রী বাজার, পাটেশ^রী বাজার, শুলকুর বাজার, আমবাড়ীর ঘাট, জিগামারীর ঘাট, ভেলাকোপা, চামড়ারগোলা, নতুন রেলস্টেশন, পুরাতন রেলস্টেশন, কুড়িগ্রাম বাস-টার্মিনালসহ প্রায় অর্ধশত স্পটে। চিলমারী রুটে সবচেয়ে বেশি আসে ইয়াবা। ২৫-৩০ জন মাদক স¤্রাট পর্দার আড়ালে থেকে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। কোথাও কোথাও সরকারদলীয় প্রভাবশালী নেতার মদদ রয়েছে। এছাড়া যাত্রা-জুয়ার নামে মাদক বিক্রি ও সেবন চলে পাঁচগাছির চর, শিয়ালকান্দা, নাখারগঞ্জ, পাটেশ^রী বাজারের নিকট নদীর ধারে, ফুলবাড়ীর ধর্মপুর বাজার ও কাশিপুর এলাকায়। কুড়িগ্রামে ইয়াবার অন্যতম ব্যবসায়ী ড্রাইভার শাহীনকে সম্প্রতি ৫০ হাজার পিস ইয়াবাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঢাকা সাভারে গ্রেপ্তার করে। তার সহযোগী লিমন, বাবুয়া, চোর শামীম, রববেল, রাসেল, আলম, সামুকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) দেয়া তথ্যমতে নবেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে জেলার প্রায় দু’শত কিলোমিটার সীমান্ত এলাকায় বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে বিজিবি ২৭৮ বোতল মদ, এক হাজার ৮৬৬ বোতল ফেনসিডিল, ৬৯ দশমিক ৫ কেজি গাঁজা এবং ৬৮ পিস ইয়াবা আটক করে। মদ প্রতি বোতল দেড় হাজার টাকা, ফেনসিডিল প্রতি বোতল ৪০০ টাকা, গাঁজা প্রতি কেজি ৩ হাজার ৫০০ টাকা এবং ইয়াবা প্রতি পিস ৩০০ টাকা দরে সকল মাদকের আনুমানিক পাইকারি বাজার মূল্য ১৪ লাখ ৮৮ হাজার ৮০০ টাকা। পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নবেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে পুলিশ মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে ২৯২টি মামলা রুজু করেছে। এতে আসামি করা হয়েছে ৪২৭ জনকে। এর মধ্যে গ্রেফতার হয়েছে ৩৩০ জন। এ সময় উদ্ধার করা হয় প্রায় ৪০ লাখ টাকা মূল্যের মাদক। উদ্ধারকৃত মাদকের মধ্যে গাঁজা ২৮১ কেজি ৬২০ গ্রাম, ফেনসিডিল ৩৮৯ বোতল, ইয়াবা এক হাজার ৭৬০ পিস, বিদেশী মদ ৫৬ বোতল, স্ক্যাফ ৫৭ বোতল, হেরোইন ১৪ দশমিক ৯৭ গ্রাম ১২৮ পুরিয়া, চোলাইমদ ৩৬ লিটার এবং হুইচকি ৩০ বোতল।
×