ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

খুলনা-মংলা রেললাইন নির্মাণে ক্ষতিপূরণ প্রদানে অনিয়ম

কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে দালাল চক্র

প্রকাশিত: ০৪:৫০, ১ মার্চ ২০১৭

কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে দালাল চক্র

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধকিার প্রকল্পের নির্মাণাধীন খুলনা-মংলা রেলপথের জমি অধিগ্রহনে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। মাঠ পর্যায়ে কতিপয় ব্যক্তিদের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে প্রকৃত জমির মালিকগণ তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আবার যোগসাজশে অনৈতিক পথে কেউ কেউ লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। রামপাল ও মংলা উপজেলার কয়েকটি এলাকা সরেজমিন পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের উপস্থিতির খবরে ছুটে আসেন এলাকার শতাধিক মানুষ। এ সময় তারা সার্ভেয়ার রিয়াজ উদ্দিনসহ তার সহযোগীদের অনিয়ম-দুর্নীতির নানা অভিযোগ তুলে ধরেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, নির্মাণাধীন খুলনা-মংলা রেল প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের কিছু অংশ দায়িত্বে নিয়োজিত সার্ভেয়ার রিয়াজ উদ্দিন স্থানীয় একটি দালাল চক্রের মাধ্যমে সরকারের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ কাজে মোস্তাক, জাহাঙ্গীর, সাঈদ, শেখরসহ ১০-১২ জনের দালাল চক্রকে জড়িত করা হচ্ছে। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, রেলপথ নির্মাণে অধিগ্রহণকৃত জমির মূল্য নির্ধারণে গণপূর্ত বিভাগকে কাজে লাগানো হলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্ব প্রাপ্ত কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। সরকারী হিসাব অনুযায়ী পাকা ও কাঁচা ঘরের জন্য আলাদা মূল্য নির্ধারণ করা হলেও এক্ষেত্রে সে নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা হয়নি। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় অধিগ্রহণকৃত জমির ওপর থাকা নানা প্রজাতির গাছের সংখ্যা দ্বিগুণ দেখিয়ে টাকা উত্তোলনের পর ভাগ-বাটোয়ারা করা হচ্ছে। বাস্তবায়নাধীন রামপাল তাপ বিদ্যুতকেন্দ্র, তৎসংলগ্ন কানেকটিং রোডসহ সোনাতুনিয়া, ধলদা, ঝনঝনিয়া, টেংরাখালী, বেলাই, হুড়কা, বাছাড়েরহুলা ও দ্বিগরাজ এলাকার বাসিন্দারা এসব অভিযোগ করেন। তারা জানান, রামপালের, হুড়কা মৌজায় দীপঙ্কর ম-লের নামে ৬ লাখ টাকা উত্তোলন করা হলেও, তার নিজস্ব কোন সম্পত্তি বা বসতঘর নেই। বড় নবাবপুর মৌজায় অজয় ম-লের বসতঘরটি অন্যর নামে দেখিয়ে প্রাপ্ত অর্থ আত্মসাত করেছে ওই চক্রটি। ঝালবাড়িয়া মৌজায় ৬নং ওয়ার্ডে একই ঘর দুই ব্যক্তির নামে বরাদ্দ দেখানো হয়েছে। এরা হলেনÑ আঞ্জিরা বেগম ও হারুন-অর রশিদ। একই মৌজায় লোকমান আলীর নামে বসতবাড়ির ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ নিয়ে আত্মসাত করেছে ওই চক্রটি। সন্তোষপুর মৌজায় সাখাওয়াত উলাহর কাঁচাঘর পাকা ইমারত উল্লেখ করে ২৮ লাখ টাকা উত্তোলনের পর ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছেন সার্ভেয়ার রিয়াজ উদ্দিনসহ দালাল চক্রটি। কদমজি মৌজায় সৈয়দ আলী মিয়ার বাগানে ১৮ হাজার গাছ দেখিয়ে ১ কোটি ৭২ লাখ টাকা বরাদ্দ ঘটনায় আপত্তি জানানো হলে সংশোধন করে ৪ হাজার ৩০০টি গাছের অনুকূলে ৩৮ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। টেংরামারী মৌজায় রেজাউল করিমের নিজস্ব কোন বসতঘর নেই। তার নামে বসতঘর দেখিয়ে বরাদ্দকৃত টাকা সমান ভাগে ভাগ করে নেয় চক্রটি। হুড়কা মৌজায় আশিষ ম-লের নামে জমি দেখানো হলেও তার কোন জমি নেই। ঝনঝনিয়া মৌজায় মাসুদ শেখের নামে বসতঘর দেখানো হলেও বাস্তবে কোন ঘর নেই। বাস্তবায়নাধীন তাপ বিদ্যুতকেন্দ্রের সংযোগ সড়কে ১০৯ ফুট চওড়া এবং ৪.৫ কিঃমি লম্বা জমির ওপর ৪০টি ঘর থাকলেও চক্রটি ৩২২টি ঘর দেখিয়ে টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। ভূমি মালিকরা জানান, অধিগ্রহণকৃত জমির টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে প্রতিটি চেকের অনুকূলে ৭ থেকে ১০% হারে টাকা দিতে হচ্ছে রিয়াজ সাহেবকে। দাবিকৃত টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে অধিগ্রহণে থাকা ঘরবাড়ির মূল্য পরিশোধ করা তো দূরের কথা, তালিকাভুক্তই হয়নি অনেক ঘরবাড়ি বলে জানান ভুক্তভোগীরা। এ ব্যাপারে রামপাল এলাকার এক জনপ্রতিনিধি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, সার্ভেয়ার রিয়াজ সাহেব তার দালাল চক্র নিয়ে অনিয়মে লিপ্ত হয়েছেন। ২০০৯ সালে বাগেরহাটে যোগদানের পর অদ্যাবধি একই স্থানে বহাল তবিয়তে আছেন রিয়াজ উদ্দিন। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখতে উর্ধতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
×