ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম অঞ্চল ছাড়া অন্যত্র ট্যুরিস্ট পুলিশ নেই

দেশ-বিদেশে প্রত্নসমৃদ্ধ এলাকার প্রচার নেই, বাড়ছে না পর্যটকও

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ১ মার্চ ২০১৭

দেশ-বিদেশে প্রত্নসমৃদ্ধ এলাকার প্রচার নেই, বাড়ছে না পর্যটকও

সমুদ্র হক ॥ দেশজুড়ে বহু পর্যটন অঞ্চল ও প্রত্নসমৃদ্ধ এলাকা আছে তারপরও পর্যটক আগমনের হার বাড়েনি। পর্যটকরা কয়েকটি প্রত্নসমৃদ্ধ ও পর্যটন এলাকার কথাই জানে। এর বাইরে বাংলাদেশের প্রতিটি এলাকায় কোন না কোন পর্যটন স্পট এবং সমৃদ্ধ প্রত্নসম্পদের এলাকা আছে বহির্বিশ্বে তার পরিচিতি কমই তুলে ধরা হয়। এ ক্ষেত্রে বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোর ভূমিকাও আশাব্যঞ্জক নয়। এদিকে দেশে পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে চট্টগ্রাম ছাড়া প্রত্নসমৃদ্ধ ও পর্যটন এলাকায় কোন ট্যুরিস্ট পুলিশ নেই। ট্যুরিস্ট পুলিশের সংখ্যা যা ছিল তাই আছে। বাড়ানো হয়নি। একটি সূত্র জানায় ট্যুরিস্ট পুলিশের সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে। প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের এক কর্মকর্তার মতে, প্রত্নসমৃদ্ধ এলাকায় পর্যটকদের আগমনে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কারণ, বেশিরভাগ প্রতœ এলাকা গ্রামীণ পরিবেশের মধ্যে। হালে যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে। পর্যটকদের যাতায়াত ব্যবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভাল। তবে প্রতœ এলাকায় পর্যটকরা থাকতে চাইলে উন্নত রেস্ট হাউস রেস্তরাঁ নেই। বগুড়ার মহাস্থানগড় নওগাঁর পাহাড়পুর বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদে প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের ছোট রেস্ট হাউস আছে। মহাস্থানগড়কে কালচারাল ক্যাপিটাল ঘোষণার পর পর্যটকদের জন্য বেশকিছু অবকাঠামো স্থাপনা ও পর্যটন রেস্তরাঁ গড়ে তোলা হয়েছে। তবে তা হাতেগোনা কয়েকজনের থাকার ব্যবস্থা। পর্যটকরা বেশিরভাগ প্রতœসমৃদ্ধ এলাকা দেখতে যায় জেলা শহরে অবস্থান করে। পর্যটন ও প্রতœ এলাকাগুলোতে পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে ট্যুরিস্ট পুলিশের কোন সেন্টার বা ফাঁড়ি নেই। দেশের সবচেয়ে প্রাচীন নগরী পুন্ড্রনগর খ্যাত বগুড়ার মহাস্থানগড়ের পর্যটকদের নিরাপত্তায় কোন ট্যুরিস্ট পুলিশ নেই। বগুড়ার পুলিশ সুপার জানালেন, এখানে কোন ট্যুরিস্ট পুলিশ দেয়া হয়নি। অভিযোগ পেলে স্থানীয় থানা পুলিশ নিরাপত্তা দিতে এগিয়ে যায়। গত বছরকে (২০১৬) পর্যটক বছর ঘোষণা করা হয়েছিল। তার সফলতা আসেনি। বর্ষ সফল করতে দেশ বিদেশে যে প্রচার কার্যক্রম চলার কথা তা ছিল না। বিদেশী পর্যটকদের কাছে আজও বাংলাদেশের প্রতœসমৃদ্ধ এলাকাগুলোকে ভালভাবে তুলে ধরা যায়নি। বিদেশীরা বিশ্বের দীর্ঘ (১৭৫ কিলোমিটার) বাংলাদেশের সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন ও ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনকে যেভাবে চেনে অন্য পর্যটক ও প্রতœসমৃদ্ধ এলাকাগুলোকে ততটা চেনে না। বান্দরবানের নীলগিরি, কুয়াকাটা, নিঝুম দ্বীপ, ঢাকার কাছে সোনারগাঁ, উয়ারী বটেশ্বর, সিলেটের শ্রীমঙ্গল, ঝিনাইদহ, মাগুরা, যশোর, খুলনা, রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুমিল্লা, মেহেরপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী, পঞ্চগড়সহ দেশের অন্যান্য স্থানের পর্যটন ও প্রতœসমৃদ্ধ এলাকার কোন পরিচিতি তুলে ধরা হয় না। প্রতœসমৃদ্ধ ও পর্যটনের কয়েকটি কমন এলাকা শুধু ঘুরেফিরে আসে। উল্লেখ্য, মালয়েশীয় সরকার তাদের দেশের পর্যটন বাড়াতে নিজেদের দেশকে ‘ট্রুলি এশিয়া’Ñ সেøাগান প্রতীকে পরিচিত করেছে। গত বছর পর্যটন বর্ষ ঘোষণার সময় ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ’Ñ সেøাগান দেশে ও বিদেশে সর্বস্তরে পৌঁছে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিমান, বাস, রেল টিকেট, শপিংমলে ভিজিট বিউটিফুল বাংলাদেশ লোগো ব্যবহার, আন্তর্জাতিক প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বিউটিফুল বাংলাদেশ প্রচারের ব্যবস্থা নেয়া হয়। দেশের সকল তারকা খচিত হোটেল, পর্যটন মোটেল, রাজধানী ঢাকা, বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরসহ পর্যটন ও প্রতœসম্পদ সমৃদ্ধ এলাকার জেলাগুলোতে ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ’ ফেস্টুন পোস্টার সেøাগান ও পরিচিতি তুলে ধরার উদ্যোগ নেয়া হয়। বিমান ও হোটেল মোটেলগুলোর সেবার মান বাড়ানোসহ ডিসকাউন্ট, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম কক্সবাজার সিলেট সরকারী ও বেসরকারী বিমানের কানেক্টিং ফ্লাইট বাড়ানোর কথা বলা হয়। পর্যটক বাড়াতে বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোকেও বিউটিফুল বাংলাদেশ প্রচার ব্যানার ফেস্টুন টাঙ্গানোসহ রোড শোর আয়োজন করতে বলা হয়। গত বছর এ ধরনের যাবতীয় কর্মকা- বাস্তবায়নে ভাটা পড়ে। কিছুই সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। এদিকে বগুড়ার মহাস্থানগড়, নওগাঁর পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার, দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দির ও বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ এলাকায় পর্যটক আকর্ষণে অবকাশ কেন্দ্র, বাংলো বাড়ি, রেস্তরাঁ প্রয়োজনীয় উন্নত পথঘাট, বসার স্থান, দৃষ্টিনন্দন কার্যক্রমসহ নানা কিছু নির্মাণ হচ্ছে। ইতোমধ্যে এসব স্থাপনার অনেক কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ এ বছরের মধ্যেই শেষ হবে, এমনটি আশা করা হয়েছে। সাউথ এশিয়া ট্যুরিজম ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এতে ব্যয় ধরা হয় ১৫ মিলিয়ন ডলার। যার ১২ মিলিয়ন ডলার যোগান দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক। এর মধ্যেই দেশী-বিদেশী পর্যটকরা আসছেন। তবে যে হারে পর্যটক আগমনের কথা তা নেই।
×