ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অ্যাপোলো-র অমানবিক আচরণ

প্রকাশিত: ১৯:১৪, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

অ্যাপোলো-র অমানবিক আচরণ

অনলাইন ডেস্ক ॥ যে বকেয়া টাকার জন্য তাঁর স্বামীকে এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠানো নিয়ে টানা এক ঘণ্টা টানাপড়েন চলেছে, সেই ২ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা সোমবার অ্যাপোলো হাসপাতালকে মিটিয়ে দিলেন ডানকুনির রুবি রায়। অ্যাপোলো-র অমানবিক আচরণের জন্যই তাঁর স্বামী সঞ্জয়ের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রথম থেকে অভিযোগ করছেন রুবি। সোমবার তাতে যুক্ত হয়েছে নতুন এক অভিযোগ। টাকা মিটিয়ে অ্যাপোলো থেকে বেরনোর মুখে রুবি বলেন, ‘‘আমাকে আজ নতুন একটা কাগজে সই করে নিতে চাইছিল অ্যাপোলো। আমার যা মনের অবস্থা, তাতে আমি সই করেও দিচ্ছিলাম।’’ পাশে থাকা আত্মীয়দের দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘‘দাদারা ভাগ্যিস কাগজের লেখাটা দেখতে পেয়েছিলেন।’’ কোন কাগজে সই করাচ্ছিল অ্যাপোলো? রুবির অভিযোগ, ‘‘আমি অ্যাপোলোর থেকে চার লক্ষ টাকা পেয়েছি, এমন কিছু লেখা ছিল সেখানে। আমার কাছ থেকে কাগজটা নিয়ে নেয় ওরা। তবে পুলিশ সেই কাগজটা এখন নিজেদের হেফাজতে নিয়ে নিয়েছে।’’ ফুলবাগান থানা জানাচ্ছে, তারা বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালের সঙ্গে কথা বলছেন। অ্যাপোলো-র তরফে বলা হয়, রোগীর আত্মীয়েরা ভুল বুঝেছেন। হাসপাতালের সিইও জয় বসু বলেন, ‘‘আমরা পুরো টাকাটাই ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। ওঁরা ৪ লক্ষ টাকা চিকিৎসার জন্য আমাদের দিয়েছিলেন। আমরা আজ ৪ লক্ষ টাকার চেক দিয়ে ওদের কাছ থেকে লিখিয়ে নিচ্ছিলাম যে, টাকাটা ফেরত দেওয়া হচ্ছে। ওরা ভেবেছিলেন, আমরা জোর করে সই করিয়ে নিচ্ছি।’’ এ দিন আরও একটি অভিযোগ করেন রুবি। অ্যাপোলো আগে দাবি করেছিল, তারা সঞ্জয়কে বিনা ভাড়ায় এসএসকেএম-এ পৌঁছে দিয়েছে। এ দিন রুবি বলেন, ‘‘ওই অ্যাম্বুল্যান্সের বিল আমাদের থেকে নিয়েছে অ্যাপোলো। তার বিলও দিয়েছে।’’ বাইক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত সঞ্জয় রায়কে গত বুধবার অ্যাপোলো থেকে এসএসকেএম-এ নিয়ে যেতে বিস্তর ঝামেলায় পড়ে তাঁর পরিবার। অভিযোগ, শেষ পর্যন্ত ফিক্সড ডিপোজিট ‘বন্ধক’ রেখে সঞ্জয়কে এসএসকেএম-এ নেওয়া হলেও শেষ রক্ষা হয়নি। এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অ্যাপোলোর বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেন। সঞ্জয়ের চিকিৎসার কাগজপত্র অ্যাপোলোর থেকে চেয়ে পাঠায় স্বাস্থ্য ভবন। রবিবার হাসপাতালটির বিরুদ্ধে গাফিলতি ও জুলুমবাজির অভিযোগে ফুলবাগান থানায় এফআইআর করেন রুবি। এ দিন কয়েক জন আত্মীয়কে সঙ্গে নিয়ে অ্যাপোলোয় গিয়ে ২ লক্ষ ৯০ হাজার টাকার ড্রাফ্ট জমা দিয়ে ফিক্সড ডিপোজিটের কাগজ ছাড়িয়ে নেন রুবি। তাঁর কথায়, ‘‘ওঁরা প্রথমে বলছিলেন, ওঁদের উপরতলা থেকে নির্দেশ আছে টাকা নেওয়া যাবে না। কিন্তু যে টাকার জন্য আমার স্বামীকে এক ঘণ্টা ফেলে রাখা হল, আমার স্বামীর মৃত্যু হল, তা বকেয়া রাখলে সঞ্জয়ের আত্মা শান্তি পাবে না।’’ কিন্তু এত অল্প সময়ের মধ্যে হাসপাতালের টাকা জোগাড় হল কী ভাবে? সঞ্জয়ের এক আত্মীয় বলেন, ‘‘প্রতিবেশীরাই আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাঁরা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে অ্যাপোলো-কে ফিরিয়ে দেওয়ার টাকা যোগাড় করে দেন।’’ এক প্রতিবেশীর কথায়, ‘‘সময় মতো টাকা দিতে না পারায় সঞ্জয়কে যে হাসপাতাল ছাড়তে চায়নি, সেটা আমরা মানতে পারিনি।’’ অ্যাপোলোর তরফে জয় বসু পরে বলেন, ‘‘ওঁরা (রুবির আত্মীয়েরা) চিকিৎসার জন্য বাকি ২ লক্ষ ৮০ টাকার চেক এবং ১০ হাজার টাকা নগদ নিয়ে এসেছিলেন। আমরা তা নিতে আপত্তি করায় ওঁরা রাস্তায় বসে পড়ার হুমকি দিয়েছিলেন। পরে পরিস্থিতি বিচার করে টাকাটা নিই।’’ সঞ্জয়ের চিকিৎসা বাবদ নেওয়া ৪ লক্ষ টাকা ফেরানোর জন্য রবিবার অ্যাপোলোর তরফে এক প্রতিনিধি দল ডানকুনিতে যান। কিন্তু সঞ্জয়ের বাড়ির লোকেরা সেই সময় না থাকায় তাঁরা ফিরে যান। অ্যাপোলো নিয়ে তদন্ত অ্যাপোলো হাসপাতালের বিরুদ্ধে ওঠা চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সরকারি তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করল সোমবার। ছয় সদস্যের ওই কমিটির প্রধান ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান পার্থপ্রতিম মুখোপাধ্যায়। এ ছাড়া কমিটিতে রয়েছেন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের কার্ডিয়াক অ্যানাস্থেসিওলজির প্রধান শম্পা দত্তগুপ্ত, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের রেডিওলজির প্রধান অশোক ভদ্র, আরজিকর মেডিক্যাল কলেজের সার্জারির প্রধান গৌতম ঘোষ, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগের প্রধান জয়ন্ত দাশগুপ্ত এবং স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ সচিব সুবীর চট্টোপাধ্যায়। স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী জানান, সর্বাধিক সাত দিনের মধ্যে ওই কমিটিকে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×