ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

ঐতিহ্যবাহী ধামাইল গীত পুঁথিপাঠ ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ঐতিহ্যবাহী ধামাইল গীত পুঁথিপাঠ ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী

সালাম মশরুর, সিলেট অফিস ॥ ফাগুনের ফুরফুরে হাওয়ায় মনের গভীরে পুলক জাগানোর মতো কিছু একটা তো আছেই। তার সঙ্গে আনন্দদায়ক বিষয়ের সংমিশ্রণ হলে তো আর কথাই নেই। ভাললাগা আর ভালবাসার এক চিলতে উঠানে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার সাধ সবার মনেই উঁকি দিয়ে থাকে। শিক্ষক পরিতোষ চক্রবর্তী স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে এদিক-ওদিক তাকিয়ে হাঁটছেন। দিনের শেষভাগে মনে আপনা থেকেই টান তৈরি হয়ে যায়। তাই তো কাজের শেষে সময় করে একবার না এলেই নয়। কারুমেলার সামনে কথা হলো পরিতোষ চক্রবর্তীর সঙ্গে। স্ত্রী অনিতাও শিক্ষিকা। পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়ে সুষ্মিতা নৃত্যে তালিম নিচ্ছে। বেঙ্গল উৎসবের এ আয়োজন তাদের তিন সদস্যের পরিবারকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করেছে। এমনি হাজারো মনের তন্ত্রিতে পুষ্পিতভেলা ভাসিয়ে সুর জাগানিয়া ঢেউ তুলে যাচ্ছে উৎসবের নানান আয়োজন। জাঁকজমকপূর্ণকভাবে চলছে বেঙ্গল সংস্কৃতি উৎসব। দশ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের ষষ্ঠদিন সোমবার প্রতিদিনের ন্যায় অনুষ্ঠানে সংস্কৃতিপ্রেমীদের ছিল উপচেপড়া ভিড়। সোমবার সকালে কোন অনুষ্ঠান ছিল না। বিকেল চারটা থেকে শুরু হয় অনুষ্ঠানমালা। ঐতিহ্যবাহী সিলেটী ধামাইল গীত, নাগরীলিপি থেকে পুঁথিপাঠ, চা শ্রমিকদের ঐহিত্যবাহী নৃত্য ও গান পরিবশেন ছাড়াও ছিল তিনটি চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। সৈয়দ মুজতবা আলী মঞ্চে বিকেল চারটায় প্রদর্শিত হয় তৌকীর আহমেদ পরিচালিত ছবি ‘অজ্ঞাতনামা’। দালালের খপ্পরে পড়ে গ্রামের অসহায় দরিদ্র মানুষ বিদেশে যাওয়ার লোভে কিভাবে নিজের সর্বস্ব হারিয়ে রাস্তায় নামে, মূলত তাই দেখানো হয় এ ছবিতে। আয়োজকরা জানান, এতে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়বে। অসাধু দালালের দ্বারা মানুষ যাতে প্রতারিত না হয় সেজন্যই উৎসবে এ ছবিটির প্রদর্শনী করা হয়। সন্ধ্যা ছয়টায় একটি মঞ্চে প্রদর্শিত হয় ‘জালালের গল্প’ ছবিটি। এর পরিচালনা করেন আবু শাহেদ ইমন। সমাজের অনেক অসাধু প্রভাবশালী ব্যক্তি নিজের আসল চেহারা লুকিয়ে ছদ্মবেশ ধারণ করে সমাজসেবী হিসেবে নিজের আত্মপ্রকাশ ঘটায়। এ রকম কাহিনী অবলম্বনে ছবিটি নির্মাণ করা হয়। এরপর রাত আটটায় প্রদর্শিত হয় বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আালোচিত অমিতাভ রেজা চৌধুরী পরিচালিত ছবি ‘আয়নাবাজি’। আর্থিক চাহিদা মেটাতে অন্যের অপকর্ম নিজের ওপর টেনে নেন অনেকেই। আর সে সুযোগ নিয়ে সমাজে বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়ান প্রভাবশালীরা। এমন কাহিনী অবলম্বনে ‘আয়নাবাজি’ ছবিটি নির্মাণ করা হয়। সন্ধ্যা সোয়া ছয়টা থেকে হাছন রাজা মঞ্চে শুরু হয় সিলেটের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী গান, নৃত্য, পুঁিথপাঠ। প্রথমে নৃত্যের সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী ধামাইল গীত পরিবেশন করেন রামকৃষ্ণ সরকার ও তার দল। পরে সিলেটের চা বাগানের শ্রমিকরা তাদের ঐতিহ্যবাহী ঝুমুর নৃত্য পরিবেশন করেন। এরপর সিলেটী নাগরীলিপি থেকে পুঁথিপাঠ করে উপস্থিত শ্রোতাদের মন মাতিয়ে তোলেন আলী আসহাব। সিলেটের আঞ্চলিক গান পরিবেশন করেন সুষমা দাস, মোঃ শামীম আহমেদ ও বাউল সূর্যলাল দাস। ধামাইল গান বলতেই বিয়ের অনুষ্ঠান। বিয়ের অনুষ্ঠানের সঙ্গে ধামাইল গান আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা। বর-কনে দু’পক্ষের বাড়িতেই বিয়ের অনুষ্ঠানের আনন্দটাই শুরু হয় ধামাইল গান দিয়ে। বিয়ের ৬-৭ দিন আগে থেকে চলে এ গান। আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা মিলিত হয়ে সমবেতকণ্ঠে গাইবেন। সেই সঙ্গে থাকবে নাচ। শহরের ব্যস্ত জীবনে বিয়ের অনুষ্ঠানে এখন ধামাইল গানের আয়োজন না হলেও গ্রামগঞ্জে তার আবেদন এখনও সমানভাবে রয়ে গেছে। ধামাইল গান ও নাচ ছাড়া যেন বিয়ের অনুষ্ঠানই অচল। ঘুরে ঘুরে নৃত্যের সঙ্গে ধামাইল গান গাওয়ার আনন্দটাই আলাদা। একপক্ষ গাইবেন আর বাড়ির বাকিরা বসে দেখবেন। বাড়ির গৃহিণীরা শুধু বসে নাচ-গান দেখবেন এমনও নয়। গান শুনে শুনে তারা কাজও করে যাবেন। ধামাইল গান গাওয়ার জন্য প্রশিক্ষিত সত্যিকার শিল্পীর প্রয়োজন হয় না। সকল মহিলার কণ্ঠেই ধামাইল গানের সুর শোনা যায়। সোমবার উৎসব মঞ্চে দর্শকরা ভিন্ন আমেজে উপভোগ করেছেন ধামাইল গান, যা আমাদের ঐতিহ্যের ধারক। মঞ্চে শিল্পী শামিম আহমদের কণ্ঠে ‘কেন পিরিতি শিখাইলারে বন্ধু’, ‘কোন মিস্ত্রী নাও বানাইছে’ ও ‘বসন্ত বাতাসে সই-গো বসন্ত বাতাসে’ শাহ আব্দুল করিমের মন উজাড় করা এ গানগুলো শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। আজকের আয়োজন ॥ আজ মঙ্গলবারও দুটি মঞ্চে চলচ্চিত্র, রবীন্দ্রসঙ্গীত, ভজন, কীর্তন ইত্যাদি পরিবশেন করা হবে। প্রথমে বিকেল চারটায় সৈয়দ মুজতবা আলী মঞ্চে ‘দীপু নাম্বার টুু, সন্ধ্যা ছয়টায় ‘আন্ডার কস্ট্রাকশন’ এবং রাত আটটায় ‘অনীল বাগচীর একদিন’ ছবির প্রদর্শনী করা হবে। ‘স্পীকার ও ন্যায়পাল নৈতিকতা ও সুশাসন’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ॥ সংসদ রিপোর্টার জানান ‘স্পীকার ও ন্যায়পাল, নৈতিকতা ও সুশাসন’ শীর্ষক পুস্তকের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। সোমবার স্পীকার ও সিপিএ নির্বাহী কমিটির চেয়ারপার্সন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী জাতীয় সংসদে তাঁর অফিস কক্ষে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোঃ নজিবুর রহমান রচিত এই বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে সংসদের চীফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান এমপি, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোঃ আবদুর রব হাওলাদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
×