ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

মাঠে নেমেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী

পিলখানা হত্যাযজ্ঞে দ-িত ২২ পলাতক বিডিআর সদস্যকে ধরার নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

পিলখানা হত্যাযজ্ঞে দ-িত ২২ পলাতক বিডিআর সদস্যকে ধরার নির্দেশ

শংকর কুমার দে ॥ বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় পলাতক দ-প্রাপ্ত ২২ বিডিআর সদস্যকে খুঁজে বের করে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাদের গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দফতরকে। পলাতকদের খুঁজে বের করতে আবারও পুরস্কার ঘোষণা ও ছবিসংবলিত পোস্টার তৈরি করা হচ্ছে। দেশের ৬৪ জেলায় দ-প্রাপ্ত পলাতকদের ছবিসংবলিত পোস্টার পাঠিয়ে তা দেয়ালে লাগানোর নির্দেশ দেয়া হবে বলে জানা গেছে। পলাতক দ-প্রাপ্তরা দেশের ভেতরেই আছে, নাকি বিদেশে চলে গেছে সে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে গোয়েন্দা সংস্থা। এদের গ্রেফতারের জন্য ইতোমধ্যেই মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রায় আট বছর ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছে দ-প্রাপ্ত পলাতক ২২ বিডিআর সদস্য। পলাতকদের গ্রেফতারের জন্য দুই লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে সরকার। তাদের গ্রেফতারের জন্য ‘অপারেশন রেবেল হান্ট’ নামে অভিযানও চালানো হয়েছে। পলাতকদের গ্রেফতারের চেষ্টার সঙ্গে বর্বরোচিত ওই হত্যাযজ্ঞে শহীদ ব্যক্তিবর্গের স্মরণে রাষ্ট্রীয়ভাবে নানা কর্মসূচী গ্রহণ করে থাকে সরকার। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, পলাতক বিডিআর সদস্যদের পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের ওপর নজরদারি করা হচ্ছে। একটি তদন্ত সংস্থা বিষয়টি খুব জোরালোভাবে তদন্ত করছে। পলাতক দ-প্রাপ্ত ২২ সদস্য কোথায় অবস্থান করছে তার তথ্য পাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিজিবির সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, পলাতক দ-প্রাপ্ত ২২ জনের মধ্যে ১৪ জনের বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ দিয়েছে আদালত। উচ্চ আদালতে ডেথ রেফারেন্সে এ ১৪ জনের আপীল হয়নি। পলাতক ২২ জনের মধ্যে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত ১৪ জন হলোÑ সিপাহী মইন উদ্দিন (নওগাঁ), বিশ্বমিত্র বড়ুয়া (চট্টগ্রাম), আতিকুর রহমান (শরীয়তপুর), মিজানুর রহমান (শেরপুর), পুলতন চাকমা (খাগড়াছড়ি), কামরুল হাসান (লক্ষ্মীপুর), নূরুল ইসলাম (কক্সবাজার), হামিদুল ইসলাম (ফরিদপুর), হাসিবুর রহমান (শেরপুর), আনিসুর রহমান (সিরাজগঞ্জ), ফরহাদ হোসাইন (নওগাঁ), আল মামুন (সাতক্ষীরা), নজরুল ইসলাম মল্লিক (বরিশাল) ও সাদুল্লাহ (কক্সবাজার)। এছাড়া বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত বাকিরা হলোÑ রেজাউল করিম (চট্টগ্রাম), বাকী বিল্লাহ (নীলফামারী), মুকুল আলম (গাইবান্ধা), মেজবাহ উদ্দিন (চট্টগ্রাম), কামরুল ইসলাম (খুলনা), মোহাম্মদ সেলিম (চট্টগ্রাম), মিজানুর রহমান (চট্টগ্রাম) ও মকবুল হোসেন (লালমনিরহাট)। মন্ত্রণালয় সূত্রমতে, ২০০৯ সালের ১৮ মে বিডিআর সদর দফতর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ২৫ বিডিআর সদস্যকে পলাতক দেখিয়ে এদের ধরিয়ে দেয়ার জন্য সরকার মাথাপিছু এক লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে ‘ওয়ান্টেড’ নোটিস জারি করে। এ তালিকায় ঘোষণাকৃত সিপাহী আব্দুস সামাদ ও সিপাহী আইয়ুব আলী ওই সময় গ্রেফতার ছিলেন। তাই ওই তালিকা থেকে তাদের নাম বাদ দেয়া হয়। পরবর্তীতে তালিকাভুক্ত ২৩ বিডিআর সদস্যের মধ্যে আরও একজন গ্রেফতার হয়। বর্তমানে ২২ বিডিআর সদস্য পলাতক রয়েছে। পরে এই ২২ বিডিআর সদস্যকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কারের অর্থ বাড়িয়ে দুই লাখ টাকা করা হয়। এছাড়াও এর আগে বিডিআর বিদ্রোহের পর পলাতকদের গ্রেফতারের জন্য ২০০৯ সালের এপ্রিল মাসে বিজিবির পক্ষ থেকে সারাদেশে ‘অপারেশন রেবেল হান্ট’ অভিযান পরিচালনা করা হয়। ওই অভিযানে বিজিবির অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা সারাদেশে তথ্য সংগ্রহে নামে। এর মধ্যে পলাতকরা যেন দেশত্যাগ করতে না পারে সেজন্য ইমিগ্রেশনে নিষেধাজ্ঞা পাঠানো হয়। সরকারের পক্ষ থেকে এতকিছু আয়োজন করার পরও দ-প্রাপ্ত পলতাকদের গ্রেফতার করা যায়নি। বিগত ৮ বছর ধরেই দ-প্রাপ্তরা পলাতক। প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহের সময় পিলখানায় যে হত্যা-লুণ্ঠনের ঘটনা ঘটে, তাতে ফৌজদারি আইনে ৮২৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দেয়া হয়েছে। ওই মামলার ৮০১ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার ২২ আসামি পলাতক রয়েছে এবং তদন্ত চলাকালে দুই আসামির মৃত্যু হয়েছে। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার তৎকালীন বিডিআর সদর দফতরে বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ঢাকায় বিডিআর সদর দফতরে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৭ জন নিহত হন। এছাড়াও বিদ্রোহের পর বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নাম বিডিআর থেকে পরিবর্তন করে বিজিবি করা হয়েছে। এরপর ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়। পরে মামলা দুটি নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তর করা হয়। এরমধ্যে হত্যা মামলায় অভিযোগপত্র দাখিলের পর রাজধানীর লালবাগের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে বিচার করা হয়। বিচার শেষে গত বছরের ৫ নবেম্বর হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ড. মোঃ আখতারুজ্জামান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যা বলেন ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বিডিআর বিদ্রোহ মামলায় ফাঁসির দ-প্রাপ্ত আসামিদের যারা পলাতক রয়েছে তাদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে। পিলখানা হত্যাকা-ের সঙ্গে বিজিবির (পুরনো বিডিআর) বাইরের কারও যোগসাজশ বা চক্রান্তের কোন প্রমাণ এখনও মেলেনি। বিডিআরের অভ্যন্তরীণ কারণেই এ হত্যাকা- ঘটেছে বলে প্রতীয়মান। গত শনিবার বনানীর সামরিক কবরস্থানে পিলখানা হত্যাকা-ে নিহতদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো শেষে সাংবাদিকদের এসব বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, এতবড় মামলার তদন্ত শেষ করা কঠিন। ওই ঘটনার তদন্ত এখনও চলমান উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তদন্তে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি।
×